সস্তায়ই হোক সুষম খাবারের যোগাড়
পুষ্টিকর খাবার বলতে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম খেতে হবে এমন নয়। আমাদের দেশে পুষ্টিকর খাবারের অভাব নেই। সুষম খাবারের প্রয়োজনীয় উপাদান আমাদের বাড়ির আশেপাশের চাষ করা শাকসবজি ও ফলমূলেই রয়েছে। আসুন জেনে নিই কিভাবে সস্তাতেই এই পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায়।
পুষ্টিকর খাবার বলতে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম খেতে হবে এমন নয়। আমাদের দেশে পুষ্টিকর খাবারের অভাব নেই। সুষম খাবারের প্রয়োজনীয় উপাদান আমাদের বাড়ির আশেপাশের চাষ করা শাকসবজি ও ফলমূলেই রয়েছে। আসুন জেনে নিই কিভাবে সস্তাতেই এই পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায়।
সুষম খাদ্য কি?
খাদ্যে সাধারণত ছয়টি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। মানবদেহের স্বাভাবিক পুষ্টির চাহিদা পুরনের জন্য উক্ত ছয়টি উপাদান সমৃদ্ধ যে পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী প্রয়োজন তাকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্য মানে শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ ও পানি সমৃদ্ধ খাবার। এর মাঝে শর্করা, আমিষ ও স্নেহকে খাদ্যের মুখ্য উপাদান হিসাবে ধরা হয়। এই তিন উপাদান নিশ্চিত করতে পারলে মোটামোটি অপুষ্টির সমস্যা এড়ানো সম্ভব। বয়স ও পরিশ্রমের ধরণ ভেদে শরীরে ক্যালরির চাহিদার পার্থক্য হয়ে থাকে। সাধারণত একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও নারীর দৈনিক যথাক্রমে ২৫০০-৪০০০ কিলোক্যালরি ও ১৮০০-৩০০০ কিলোক্যালরি চাহিদা থাকে। তাই দেহের প্রযোজনীয় প্রোটিন, ক্যালরি, ভিটামিন, খনিজের চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের প্রতিবেলায় সুষম খাবার খাওয়া উচিত।
সস্তায় কিভাবে সুষম খাদ্য পাওয়া যায়?
অনেকের ধারণা শুধুমাত্র দামি খাবারের মধ্যেই সব পুষ্টি রয়েছে। অথচ তাদের আশপাশেই রয়েছে সুষম খাবারের বিশাল ভাণ্ডার। শুধুমাত্র কোন খাদ্যে কি পরিমাণে এবং কি ধরণের খাদ্য উপাদান ও পুষ্টিগুণ রয়েছে একটু এ বিষয়ে জ্ঞান থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ । কিভাবে সহজে ও সস্তায় সম খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১। শর্করা জাতীয় খাবারের সহজ উৎস:
শর্করা জাতীয় খাবারের প্রধান কাজ হলো দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাপ শক্তি উৎপাদন করা । আমাদের দৈনিক চাহিদার প্রয়োজনীয় খাদ্য শক্তির শতকরা প্রায় ৫০-৬০ ভাগ শর্করা জাতীয় খাবার থেকে পাওয়া যায়। শর্করার সহজলভ্য উৎস হিসেবে চাল, গম, ভুট্টা, চিড়া, মুড়ি, চিনি, গুড়, আলু, কচুরমুখী ইত্যাদি নিয়মিত খেতে হবে।
২। আমিষ জাতীয় খাবারের সহজ উৎস:
আমিষ জাতীয় খাদ্য আমাদের দেহের গঠন ও বৃদ্ধি সাধন করার পাশাপাশি দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দেহের ওজন অনুযায়ী আমিষের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সাধারণ হিসাবে দেহের প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রতিদিন ০.৮৩ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করা দরকার। আমিষ জাতীয় খাবারের প্রধান উৎস হলো মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, মটর শুঁটি, সীমের বীচি, কাঁঠালের বীচি, বাদাম ইত্যাদি। তবে মাছ মাংসের আমিষ বা প্রোটিনের অভাব দূর করতে সস্তায় পাওয়া সবরকম ডাল, সীমের বীচি, কুমড়ার বীচি, দেশী ফল ইত্যাদি খেতে হবে।
৩। স্নেহপদার্থের সহজ যোগান:
স্নেহ জাতীয় পদার্থ আমাদের শরীরে শক্তি উৎপাদন করে। এর শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা শর্করা জাতীয় খাবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। স্নেহ জাতীয় খাদ্যের প্রধান উৎস হলো বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ তেল, ঘি, মাখন, চর্বি ইত্যাদি। তবে সস্তা ও সুলভ সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল, সূর্যমুখীর তেল, চিনা বাদাম ইত্যাদি থেকে আমরা আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার স্নেহ জাতীয় উপাদান সহজে পেতে পারি।
৪। ভিটামিনের সহজ উৎস:
আমাদের শরীরে ভিটামিনের প্রয়োজন খুব বেশি। কারণ এটি দেহ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। সহজে সকল প্রকার ভিটামিন পেতে আমাদের আশপাশে থাকা সবুজ শাক, পাকা পেঁপে, কাঁচামরিচ, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, সজনে পাতা, মূলাশাক ইত্যাদি খেতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন টক জাতীয় ফল যেমন আমলকি, পেঁয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, লেবু ইত্যাদি থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
৫। মিনারেল বা খনিজ পদার্থের সহজ উৎস:
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন মিনারেল বা খনিজ যেমন- ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের ওজনের মাত্র ০.০১% মাত্রায় বিদ্যমান এই 'ট্রেস এলিমেন্টগুলো' শরীরের বিভিন্ন এনজাইম, হরমোন এবং কোষকলার অংশবিশেষ। তাই এগুলো শরীরের জন্য খুবই অপরিহার্য। সবুজ শাকসবজি, টাটকা ফলমূল, দুধ, ডিম, ডাল, গোশত ইত্যাদিতে এসব মিনারেল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় মিনারেল ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লোহাজাতীয় উপাদান পেতে বিভিন্ন প্রকার ছোট মাছ, শুকনো খাবার, শুকনো ফল, সরষে, সবজি, সবুজ শাক, কলার মোচা, কাঁচকলা ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
৬। পানিঃ
একজন ব্যক্তির দৈনিক পানির চাহিদা নির্ভর করে তার বয়স, ওজন, পরিশ্রম, ভৌগোলিক অবস্থান আবহাওয়া ইত্যাদির উপর। একজন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দিনে ৮-১০ গ্লাস (৩-৫ লিটার) পানি পান করা প্রয়োজন। রক্ত তরল রাখতে এবং মলমূত্রের সাথে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে পানির ভুমিকা অপরিসীম। পানির অভাব মেটাতে পরিশোধিত পানিই যথেষ্ট। তাই শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
খাদ্যদ্রব্য মানুষের জীবনের প্রধান ভিত্তি ও অবলম্বন। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, কর্মসামর্থ্য ও দীর্ঘ পরমায়ু লাভের জন্য ভালো খাওয়া দাওয়ার ভুমিকা অপরিসীম। ভালো ভালো খাদ্য খেলেও যদি সুষম (ওয়েল ব্যালেন্সড) না হয় তাহলে তা থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। তাই কোন কোন খাদ্যে কী কী উপাদান বর্তমান তা প্রত্যেকের ভালোভাবে জানা দরকার।