গাজরের অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ
গাজর একটি উৎকৃষ্ট মানের পুষ্টিকর খাদ্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে, বি১ এবং বি৬, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, অর্গানিক সোডিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শীতের বাজারে নানা প্রকার পুষ্টিকর সবজির দেখা মেলে। এদের মধ্যে গাজর অন্যতম । শরীরের যাবতীয় শক্তির উৎস রয়েছে এই গাজরে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর নানান পুষ্টিগুণ সম্পর্কে যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।
১। ত্বকের যত্নে
গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায় যা সুন্দর ত্বকের জন্য খুবই দরকারি। এটি ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ ত্বকের অযাচিত ভাঁজ পড়া, কালো দাগ, ব্রন, ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। তাই দৈনিক ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদা মিটাতে নিয়মিত গাজর খেতে পারেন।
২। দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে:
গাজরে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি । বিটা ক্যারোটিন লিভারে যাওয়ার পর ভিটামিন ‘এ’তে বদলে যায়। এই ভিটামিন চোখের রেটিনায় পৌঁছে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি চোখে বেগুনি পিগমেন্টের সংখ্যা বাড়িয়ে দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতেও ভুমিকা পালন করে। যারা রাতের বেলার অন্ধকারে চোখে ভাল দেখেন না সমস্যাটি দূর করতে তারা নিয়মিত গাজর খেতে পারেন।
৩। শরীরের পুষ্টি এবং বুদ্ধির বিকাশে
শরীরের পুষ্টি এবং বুদ্ধির বিকাশের জন্যে গাজর খাওয়া খুবই প্রয়োজন। অন্যান্য শাকসবজির মতো গাজরেও প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সহায়তা করে। তাই আলু বা ভুট্রার তৈরী ক্ষতিকর চিপস না খেয়ে গাজর দিয়ে বানানো হালুয়া ও অন্যান্য উপাদেয় খাবার খেতে পারেন।
৪। বিভিন্ন রোগ দমনে:
শীতকালে ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি ইত্যাদি লেগেই থাকে। ভিটামিন ‘এ’-র অভাব হলে শরীর রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে, শারীরিক বৃদ্ধি ও ক্ষমতা হ্রাস পায়, খাদ্য হজম হতে অনেক দেরি লাগে। বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো উচিত। গাজরে থাকা ভিটামিন সি ও লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই শরীরের নানান রোগ দমনে নিয়মিত গাজর খেতে পারেন।
৫। হৃৎপিণ্ডের নানা অসুখ প্রতিরোধে:
হৃৎপিণ্ডের নানাপ্রকার অসুখ প্রতিরোধে গাজর খুব ভাল কাজ করে। এতে থাকা ক্যারোটিনয়েড হৃৎপিণ্ডের নানা অসুখের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত গাজর খেলে তা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা হৃদরোগী তারা নিঃসঙ্কোচে গাজর খেতে পারেন।
৬। দাঁত সুন্দর ও সুস্থ্য সবল রাখতেঃ
সুন্দর ও সুস্থ্য সবল দাঁতের জন্য গাজরের জুড়ি নেই। গাজর দাঁত ও মুখের ভেতর পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া গাজরে থাকা মিনারেলগুলো দাঁত মজবুত রাখতেও সাহায্য করে।
৭। লিভারের যত্নে গাজরঃ
গাজরে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ লিভারে গিয়ে শরীর থেকে নানা প্রকার টক্সিন জাতীয় ক্ষতিকর উপাদান দূর করতে ও লিভার থেকে বাড়তি চর্বি সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ একটি সবজি যা কোলন পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। তাই শরীরের অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ লিভারকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত গাজর খান।
৮। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে:
নিয়মিত গাজর খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। গাজরে ফ্যালকেরিনল এবং ফ্যালকেরিনডায়ল নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা শরীরের অ্যান্টিক্যান্সার উপাদানগুলোকে শক্তিশালী করে। তাই নিয়মিত গাজর খান ও ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে দূরে থাকুন।
গাজরে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুন। পুষ্টিকর গুণের সাথে সাথে এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। তাই সেই উপকারিতাগুলো ভালো ভাবে জানা দরকার। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে খাবার তালিকায় অবশ্যই নিয়মিতভাবে গাজর রাখতে হবে।