কাঁঠালের কিছু অসাধারণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ
কাঁঠাল আমাদের বাঙালির প্রিয় ফলের মধ্যে একটি। এটি একটি সুস্বাদু রসালো ফল। গ্রীষ্মের চরম দাবদাহেও সময় এই রসালো ফলটি আমাদের প্রাণ জুড়ায়। এই ফলের রয়েছে নানা পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগুণ। আসুন জেনে নিই এর বিভিন্ন উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সন্মন্ধে।
কাঁঠাল আমাদের বাঙালির প্রিয় ফলের মধ্যে একটি। এটি একটি সুস্বাদু রসালো ফল। গ্রীষ্মের চরম দাবদাহেও সময় এই রসালো ফলটি আমাদের প্রাণ জুড়ায়। এই ফলের রয়েছে নানা পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগুণ। আসুন জেনে নিই এর বিভিন্ন উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সন্মন্ধে।
কাঁঠালের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
রসালো ফল কাঁঠালে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, বি-১, বি-২, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান। এই সকল পুষ্টিকর উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর পাশাপাশি কাঁঠাল আমাদের ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে আমিষ ও শর্করা। আমাদের সবার জন্যই আমিষসমদ্ধ কাঁঠালের বিচি বেশ উপকারী। কাঁঠালের হলুদ রঙের কোষ হচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ সমদ্ধ। তাই কাঁঠাল খেয়ে শরীরের ভিটামিন ‘এ’- এর ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করাও সম্ভব।
কাঁঠালের বিভিন্ন উপকারি স্বাস্থ্য গুনাগুণ
১) দেহশক্তির অনন্য উৎস কাঁঠাল: কাঁঠালে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা যা আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁঠালে কোন কোলেস্টেরোল জাতীয় উপাদান না থাকায় এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
২) রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে: কাঁঠাল ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দারুণ উৎস । তাই গরমের সময় সর্দি-কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ নানা রোগকে প্রতিহত করতে নিয়মিত এই রসালো কাঁঠাল খাওয়া যেতে পারে।
৩) রক্তস্বল্পতা দুর করতেঃ কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ই, কে, ফলেট, এবং ভিটামিন বি-৬ রয়েছে। এছাড়াও এতে বিভিন্ন ধরণের মিনারেল সমৃদ্ধ উপাদান যেমনঃ কপার, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা রক্ত তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই এটি রক্তস্বল্পতা রোধে দারুণ কাজ করে থাকে। তাই যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্যে এই রসালো ফল কাঁঠাল উপকার বয়ে আনতে পারে।
৪) গর্ভবতী ও গর্ভস্থ মায়ের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক রাখতেঃ প্রতিদিন ২০০ গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল খেলে একজন গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর প্রায় সব ধরনের পুষ্টির অভাব মিটে যায়। তাই গর্ভবতী মহিলারা নিয়মিত প্রতিদিন নিদিষ্ট পরিমাণে কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থসন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়। স্তন্যদায়ী মা যদি তাজা পাকা কাঁঠাল খায় তাহলে তার বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৫) চোখ ভাল রাখতে কাঁঠালঃ কাঁঠাল ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-এ রয়েছে, যা আমাদের চোখের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়। যেহেতু কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে, তাই এটি চোখের রেটিনার ক্ষতি প্রতিহত করে থাকে। এটি আমাদের ত্বকের বলিরেখা বা ভাঁজ প্রতিহত করতেও সাহায্য করে।
৬) হাড় মজবুত ও শক্ত করতেঃ কাঁঠালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাড়ের গঠন সুদৃঢ় ও মজবুত করতে সাহায্য করে। এটি অস্টেওপরোসিস (osteoporosis) নামে হাড়ের ক্ষতিকর রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই হাড় মজবুত করার জন্যে খাবারের তালিকায় কাঁঠাল রাখতে পারেন।
৭) স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে: পাকা কাঁঠালে আছে পর্যাপ্ত পরিমানে পটাসিয়াম, যা আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। পটাশিয়াম আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্যে কাঁঠালে উচ্চ রক্ত চাপের উপশম হয়ে থাকে।
৮) হজমশক্তি বৃদ্ধিতে: হজমশক্তির বৃদ্ধির জন্য উপাদেয় একটা ফল কাঁঠাল। এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিমাণে হজমে সহায়ক আঁশ। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিহত করতেও কাঁঠাল খেতে পারেন যে কেউ।
৯) মলাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে ও চিকিৎসায়: ক্যান্সার প্রতিরোধে ও চিকিৎসায়ও কাঁঠালের ভুমিকা রয়েছে। এতে যে ডায়েটারি ফ্যাট উপাদান রয়েছে তা আমাদের শরীরের মলাশয় থেকে বিষাক্ত উপাদানসমূহ পরিষ্কারে সাহায্য করে। এর ফলে মলাশয়ের ওপর বিষাক্ত উপাদানসমূহের ক্ষতিকর প্রভাব শরীরে পড়তে দেয় না। এভাবে মলাশয়ের ক্যান্সার প্রতিহত করে।
কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্ত কম। এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশংকা তাই নিশ্চিন্তে খেতে পারেন ফলটি। এর বিচিতেও রয়েছে অনেক পুষ্টিমান। তাই কাঁঠাল খাওয়ার পর বিচিগুলো সংরক্ষণ করে বিভিন্ন পুষ্টিমান গ্রহণ করে সুস্থ থাকুন।