মেনোপজ চলাকালীন মহিলাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও করণীয়



মেয়েদের ১১-১৪ বছর বয়স থেকে স্বাভাবিক ঋতুচক্র শুরু হয়ে নির্দিষ্ট বয়সের পর বন্ধ হয়ে যায় ৷ মহিলাদের নিয়মিত চক্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার এই পরবর্তী সময়কে মেনোপজ বলে। এ সময় নারীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে আসুন বিস্তারিত জেনে নিই।
মেয়েদের ১১-১৪ বছর বয়স থেকে স্বাভাবিক ঋতুচক্র শুরু হয়ে নির্দিষ্ট বয়সের পর বন্ধ হয়ে যায় ৷ মহিলাদের নিয়মিত চক্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার এই পরবর্তী সময়কে মেনোপজ বলে। এ সময় নারীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে আসুন বিস্তারিত জেনে নিই।
মেনোপজ কী?
হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে একটি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং প্রতিমাসে যোনিপথে জরায়ু হতে নিঃসৃত দূষিত রক্ত বের হয়ে আসে। ঋতুচক্রের বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়কে মেনোপজ বলা হয়৷ কারো যদি টানা বারো মাস ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে তাহলেই সেই মহিলার ঋতুবন্ধ হয়েছে বলা হয়। সাধারণত ৫০ বছর বয়েসের পরেই ঋতুবন্ধ হয়ে যায় তবে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়েসের যে কোনো সময়ের মধ্যে এটা ঘটতে পারে। মহিলাদের জীবনে এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। এটি কোনোরকম রোগ বা ব্যাধি নয়। তাই এ নিয়ে বেশী আতঙ্কের কিছু নেই।
মেনোপজ হওয়ার আগের কিছু উপসর্গ:
মেনোপজের প্রধান উপসর্গ হলো অনিয়মিত পিরিয়ড বা ঋতুচক্র ৷ অর্থাৎ প্রথমেই যে একেবারে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাবে তা কিন্তু নয় ৷ দেখা যেতে পারে প্রথমে একমাসে দুইবার পিরিয়ড হলো, এরপর তিন মাস পিরিয়ড বন্ধ থাকল, আবার ফের চার মাস নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার পর আবার বন্ধ হলো। মেনোপজের ফলে শরীরের ত্বক খারাপ হয়ে যেতে পারে। অনেকে এসময় খুব মোটা হয়ে বা রোগা হয়ে যেতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য উপসর্গগুলো হলো কান-মাথা ঝাঁ ঝাঁ করা বা হট ফ্ল্যাশ, জয়েন্ট পেইন ইত্যাদি।
মেনোপজের সময় শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে করণীয়:
১। স্বাভাবিক জীবনে বিভিন্ন অসুবিধা ও করণীয়:
মেনোপজ হলে শরীরে বিশেষ জাতীয় হরমোনের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায় ৷ হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেনোপজের বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ যেমন জয়েন্টে ব্যাথা, মেজাজ ঠিক না থাকা, ঘুমের ব্যাঘাত, শক্তির ক্ষয়, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি দেখা দেয়। অবশ্য পাঁচ-দশ বছর পর নারীর শরীর আস্তে আস্তে এটিকে আপনা থেকেই মানিয়ে নেয়। তাই বেশী আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ধারন করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা উচিত। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন ও চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। তাই যদি জটিল কোন সমস্যা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
২। মেনোপজের সময় মানসিক আশংকা দূর করতে করণীয়:
অনেকে মনে করেন পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই যৌবন চলে যাওয়া। সেই কারণে অনেক মহিলাদের মধ্যে অবসাদ দেখা দেয় ৷ তবে এটা পুরোটাই তাদের কাল্পনিক ধারণা। এসময় গর্ভধারনের আশংকা নেই বলে স্বামীর সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্ক স্থাপনে কোন সমস্যা হয় না এবং নির্দ্বিধায় যৌনতা উপভোগ করা সম্ভব। মেনোপজের সময় মন ভালো রাখার জন্য মেয়েদের নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিজের প্রতি ভালোভাবে খেয়াল রাখার জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশী জরুরি তাহলো নিজের কর্মজগৎ ৷ এ সময় মানসিক অবসাদ থেকে রক্ষা পেতে তাঁকে অবস্যই বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
৩। মেনোপজ চলাকালীন ডায়েট চার্ট মেনে চলা:
অধিকাংশ সময় স্বামী বা পরিবারের সেবা করতে গিয়ে মেয়েরা নিজের খেয়াল রাখতে ভুলে যান। তাই তাদের খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো হয়না। মেনোপজের সময় ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়ায় তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার ৷ তাই, এই সময় তাদের ব্যালেন্স ডায়েট গ্রহণ করা উচিত। তাদের খাবার খুব কম বা খুব বেশী উচিত নয়। নিয়মিত কম চর্বি যুক্ত, বেশি প্রোটিন ও আশযুক্ত খাবার খেতে হবে। এসময় বেশি পরিমাণে ফলমুল, শাকসবজি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে। পাশাপাশি শরীরের স্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখারও চেষ্টা করতে হবে। মেনোপজ শুরু হচ্ছে এমন মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো খাওয়া দাওয়া করলে ও নিয়মমতো চললে তেমন কোন সমস্যাই হয় না ৷
প্রকৃতির সাধারণ নিয়মে যেমন একজন কিশোরী নির্দিষ্ট বয়সে পরিপূর্ণ নারীতে পরিণত হয়ে সন্তান ধারণের ক্ষমতা অর্জন করে, তেমনি একসময় মেনোপজের মাধ্যমে সন্তান ধারণ ক্ষমতার সমাপ্তি ঘটে। মেনোপজ কোন অসুখ নয় বরং এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। শারীরিক অসুস্থতা না হলেও যদি এর উপসর্গগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।