গর্ভাবস্থায় বুক জ্বলাঃ কারণ ও বেঁচে থাকার উপায় সমূহ
গর্ভবতী মায়েদের বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যাটি নানা কারণে যেমন খাবার ও ঔষধের জন্য হয়ে থাকে। তাই এসময় তাদের বিভিন্ন খাবার গ্রহনে বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত। চলুন জেনে নিই গর্ভকালীন বুক জ্বালাপোড়ার বিভিন্ন কারণ ও সমস্যাটি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায় বুক জ্বলা সমস্যাটির মাত্রা বেড়ে যায় অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস ও যথেচ্ছা ঔষধ সেবনের কারণে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খাবার ও ঔষধ গ্রহনের ব্যাপারে অধিক সাবধানী হওয়া প্রয়োজন। এসময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষুধ একদমই খাওয়া যাবেনা। কিছুটা বাড়তি সচেতন থাকলেই ক্ষতিকর সমস্যাটি এড়িয়ে চলা যায়। গর্ভাবস্থায় যে সমস্ত খাবার ও ঔষধ খেলে বুক জ্বালা করতে পারে ও তা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আজকে জানব।
গর্ভকালীন বুক জ্বলার জন্য দায়ী খাবার সমূহ
গর্ভকালীন সময়ে পেটে গ্যাসের আধিক্যের জন্য প্রধানত এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। তাই কিছু খাবার আছে যেগুলো এসময় খাওয়া ঠিক নয়। এই খাবার সমূহ প্রধানত পেটে্র মধ্যে গ্যাস তৈরি করে পরবর্তীতে বুকের মধ্যে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে। নিম্নে এসব খাবার সামগ্রী সন্মন্ধে আলোচনা করা হলো।
১। চা অথবা কফি পান
চা কিংবা কফি আমাদের অনেকের প্রিয় পানীয় হলেও গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি ক্ষতিকর। এ সময় অতিরিক্ত পরিমাণে চা-কফি পান করলে তাতে বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই এই সময়টিতে যতটুকু পারা যায় চা অথবা কফি পান করা থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই এই সময়টিতে এমন সব খাবার খাওয়া দরকার যা তার শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। এসময় প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।
২। ফ্যাটি বা তৈলাক্ত খাবার দাবার
বিভিন্ন চর্বিজাতীয় খাবার সামগ্রী যেমন ঘি, মাখন,অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার সহ বিভিন্ন প্রকার ফাস্ট ফুড এই সময়টিতে এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এসব চর্বিযুক্ত খাবার গর্ভবতী মায়েদের বুক জ্বালাপোড়ার জন্য বিশেষভাবে দায়ী।
৩। সাইট্রাস জাতীয় ফলমূল খাওয়া
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন প্রকার সাইট্রাস জাতীয় ফল বুক জ্বালাপোড়া সৃষ্টির জন্য অনেকটা দায়ী। এসব ফল্মুলের মধ্যে রয়েছে লেবু, কমলা, আঙ্গুর, টমেটো ইত্যাদি। তবে কমলা বা আঙ্গুর খেলে বুক জ্বালাপোড়া নাও হতে পারে। তাই এসব ফল খাবার খাওয়ার আগে খেয়াল করতে হবে যে কোন ফলটি বুক জ্বালাপোড়া বাড়াচ্ছে এবং সেইগুলি এড়িয়ে চলতে হবে।
৪। চকলেট খাওয়া
বুকে জ্বালাপোড়া হওয়ার জন্য চকলেট খাওয়া অনেকটা দায়ী। খুবই সামান্য পরিমাণে ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত চকলেট সাস্থের জন্য ক্ষতিকর। তাই উচিত গর্ভাবস্থায় যতটুকু পারা যায় কম খাওয়ার চেষ্টা করা।
৫। সোডা জাতীয় পানীয় খাওয়া
সোডা এবং সোডা জাতীয় পানীয় সবার জন্য ক্ষতিকর হলেও গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি আরও বেশী ক্ষতিকর। তাই এসব পানীয় গর্ভকালীন সময়ে এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই সব ক্ষতিকর পানীয় শুধু যে বুক জ্বালাপোড়ার যন্ত্রণাই তৈরি করে তাই নয় এসব খাবার শরীরে অন্যান্য সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। তাই এইসব বাজে পানীয় না খেয়ে তার পরিবর্তে টাটকা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় যে সব নিয়ম মানা জরুরী
কতগুলি সাধারণ নিয়মকানুন মেনে চললেই এই সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই্ পাওয়া সম্ভব। এসব নিয়ম কানুনের মধ্যে রয়েছে-
- বিভিন্ন ক্ষতিকর খাবার যেমন অতিরিক্ত তেলে ভাজাপোড়া জিনিস ও চর্বি যুক্ত খাবার ,টক জাতীয় খাবার, সস ইত্যাদি যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
- ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় যতটুকু সম্ভব ত্যাগ করতে হবে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- খাওয়ার মাঝখানে বেশি বেশি পানি পান করলে পাকস্থলিতে থাকা হজম সহায়ক হাড্রক্লোরিক এসিড অনেকটা পাতলা হয়ে যায়। যার ফলে খাবার হজম প্রক্রিয়ায় গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে। এছাড়া এই এসিড বুকের উপরের দিকে চাপ দিয়ে জ্বালাপোড়া বৃদ্ধি করতে পারে। তাই খাওয়ার মাঝখানে একান্ত প্রয়োজন না হলে পান না করাই ভালো। এছাড়া একসাথে বেশী পরিমাণে পানি পান না করে পুরো দিনে বার বার অল্প অল্প করে খাওয়া উচিত।
- খাবার খাওয়া শেষ হতে না হতেই শুয়ে পড়া উচিত নয়। খাওয়ার পরে সামান্য একটু হাঁটাহাঁটি করা বা সোজা হয়ে বসে কিছুক্ষণ বই পড়া কিংবা টেলিভিশন দেখা যেতে পারে।
- টাইট জামা পড়লে পাকস্থলী ও তলপেটে চাপ সৃষ্টি হয়ে এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় আঁটসাঁট পোশাক না পড়ে ঢিলেঢালা জাতীয় কাপড় চোপড় পড়া উচিত।
- বিছানায় শোয়া বা ঘুমাতে যাওয়ার সময় মাথার নিচে একটু উঁচু বালিশে শোয়া উচিত। বালিশের উচ্চতা ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি হলে ভালো হয়।
- এসব নিয়ম মেনে চলার পরও সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
গর্ভধারণ ব্যাপারটা প্রতিটি মায়ের জন্য সুখকর তবে এ সময় খাবার দাবারের প্রতি খুবই বেশী সাবধান হওয়া উচিত। হঠাৎ বুক জ্বালা-পোড়া করলেই অনেকে নিজে নিজে ঔষধ হিসেবে অ্যান্টাসিড খেয়ে ফেলেন। কিন্তু শরীরে অন্যান্য সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে সমস্যা, পায়ুনালির সমস্যা বা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কোনো সমস্যা আছে কি না, সে ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে অ্যান্টাসিড খাওয়া ঠিক হবেনা। এই সময়টিতে একটু অসাবধানতা বা ভুল যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে।