স্মার্টফোনের ক্ষতিকর আসক্তি এবং তা থেকে শিশুদের বাঁচানোর উপায়
দুষ্টুমি থেকে রক্ষা পেতে আমরা বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দিই। কার্টুন বা মজার ভিডিও ছেড়ে সাময়িক শান্ত করতে পারলেও স্মার্টফোনের উপর বেশী নির্ভরতার মাধ্যমে আমরা অজান্তেই তাদের জন্য অনেক বিপদ ডেকে আনছি। আসুন জেনে নিই বিস্তারিত।
দুষ্টুমি থেকে রক্ষা পেতে আমরা বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দিই। কার্টুন বা মজার ভিডিও ছেড়ে সাময়িক শান্ত করতে পারলেও স্মার্টফোনের উপর বেশী নির্ভরতার মাধ্যমে আমরা অজান্তেই তাদের জন্য অনেক বিপদ ডেকে আনছি। আসুন জেনে নিই বিস্তারিত।
স্মার্টফোনের অতি আসক্তির কুফল:
অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার শিশুর মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়া এটি ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক জগতকে এড়িয়ে তার চিন্তা ও কল্পণাশক্তিকে স্মার্টফোনের রঙিন পর্দার গণ্ডিতে আটকে দেয়। ফলে ক্রমান্বয়ে সে মাদকাসক্তির মত “স্মার্টফোন আসক্তি”-তে আক্রান্ত হয়ে পড়ে । ধীরে ধীরে তার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মানসিক বৈকল্য দেখা দেয়। চিকিৎসকদের মতে স্মার্টফোন আসক্তির ফলে শিশুরা মানসিক বিকাশের পাশাপাশি শারীরিকভাবেও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়। স্মার্টফোন আসক্তির অন্যান্য কুফলগুলো হলো-
- স্মার্টফোনের বা ইন্টারনেটের প্রতি অতি আসক্তি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ করে ।
- শিশুর সহজাত সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়, ধৈর্য্য ও মনোযোগ কমে যায় এবং সে ধীরে ধীরে অসহিষ্ণু, অসামাজিক ও উচ্ছৃংখল হয়ে পড়তে পারে।
- স্মার্টফোনের মাধ্যমে অপ্রাপ্ত বয়সে না বুঝেই শিশুরা বিভিন্ন অনৈতিক ও আপত্তিকর বিষয়বস্তুর সাথে পরিচিতি লাভ করে। গবেষকদের ধারণা অতিরিক্ত স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিশু ও তরুণদের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অভাব প্রবল ভাবে বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত সময় ধরে ফোন ব্যবহার করার কারণে স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ফলে শিশুরা “মনোযোগের ঘাটতিজনিত চঞ্চলতা” নামক জটিলতায় ভোগতে পারে।
- স্মার্টফোনের পর্দার দিকে বেশী সময় ধরে তাকিয়ে থাকার ফলে শিশুদের চোখে নানা প্রকার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শিশুরা বেশিরভাগ সময়ই বসে বা শুয়ে স্মার্টফোন বা ট্যাব ব্যবহার করে। এসব শিশুরা ঘরের বাইরে শারীরিক কসরতপুর্ণ খেলাধুলার প্রতি তেমন আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অতিরিক্ত বসে না শুয়ে থাকার ফলে অল্প বয়সেই তাদের দেহের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়।
- গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব শিশুরা অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতা যেমন: হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয় ।
শিশুকে আসক্তি থেকে বাঁচানোর উপায়:
- অভিবাবকদের শিশুদেরকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
- তাঁকে ঘরের বাহিরে পর্যাপ্ত খেলাধুলার সুযোগ ও ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
- তাঁকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত করতে হবে।
- তাঁকে ভালোভাবে দেশীয় কৃষ্টি কালচার সন্মন্ধে পরিচয় করাতে হবে।
- প্রয়োজন না হলে শিশুদের কাছে ফোন না রাখাই উত্তম।
- শিশুরা কোন কোন ওয়েবসাইট পরিদর্শন করছে তা সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।
- বিভিন্ন ফিল্টারিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে ক্ষতিকর ও আপত্তিজনক ওয়েবসাইট ফায়ারওয়াল প্রোটেকশন দিয়ে বন্ধ রাখতে হবে।
- ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ চর্চায় নিয়োজিত করার পাশাপাশি তাঁকে ইন্টারনেট এর খারাপ দিক সম্পর্কেও সচেতন করতে হবে।
সবকিছুর ভালো এবং মন্দ দুই দিকই থাকে। প্রযুক্তির যাত্রা তার নিজস্য নিয়মেই চলবে। সভ্যতার বিকাশে প্রযুক্তিকে তো আর অস্বীকার করা যাবে না। তাই এর ব্যবহার যেন সঠিক হয় এবং ভাল কাজ লাগে সেদিকে আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। সেটিকে ভালভাবে ব্যবহার করার দায়িত্ব আমাদেরই। তাই বাচ্চারা যাতে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের যথাযথ ব্যবহার করে ও ক্ষতিকর দিক থেকে বেঁচে থাকতে পারে সে বিষয়ে অভিবাবকদেরই অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে।