ফল খাওয়ার উপকারিতা
ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা রক্তে মিশ্রিত হওয়ার পর শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা তো বাড়েই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কও সজাগ হয়ে ওঠে। ফলে সার্বিকভাবে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়।
বেশিরভাগ ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান দেহের ভিতরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বাড়িয়ে দেয়।
ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারী। প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেকোন ধরণের একটি ফল অবশ্যই থাকা উচিৎ নিজের সুস্বাস্থ্যের জন্যেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিন ফল খাওয়ার দারুণ কিছু উপকারিতা-
১। অনেক বেশী পরিমাণে ফল খেলে আপনার শরীরে খুব সহজেই রোগ দানা বাধতে পারবে না।
২। ফল আপনার স্বাস্থ্য এবং আপনাকে শক্তিশালী করে তোলে।
৩। প্রায় সকল ফলেই থাকে পানি, যা আপনার ত্বককে সুস্থ এবং নরম রাখতে সাহায্য করে থাকে।
৪। প্রতিটি ফলে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিপরীতে কাজ করে থাকে।
৫। ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ যা শরীরে মেদ জমতে বাঁধা দেয়, ফলে আপনি খুব সহজেই মোটা হবেন না। এরই সাথে ফাইবার কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৬। ফল আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম ভিটামিন এবং মিনারেল এর ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
৭। ফল নিয়মিতভাবে খাওয়ার ফলে আপনাকে স্বাস্থ্যকর এবং দারুণ দেখাবে।
৮। ব্রেইনের কার্যকারীতা বৃদ্ধিতেও ফল কাজ করে থাকে।
৯। ফল সম্পুর্ণই একটি প্রাকৃতিক উপাদান, তাই ফল খাওয়ার ফলে আপনি অনেক বেশী এনার্জি পাবেন এবং সুস্থ অনুভব করবেন।
১০। ফল আপনার হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে আপনি থাকবেন পেটের সমস্যা মুক্ত।
১. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে
ঘুম থেকে ওঠার পর ব্লাড সেল এবং ব্রেন সেলকে পুনরায় অ্যাকটিভ করতে শরীরের প্রচুর পরিমাণে প্রকৃতিক চিনি বা শর্করার প্রয়োজন পড়ে। এ কারণেই খালি পেটে ফল খাওয়া পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আসলে এমনটা করলে একদিকে যেমন শরীরে চিনির চাহিদা পূরণ হয়, তেমনই প্রাকৃতিক সুগার, লো গ্লাইকেমিক হওয়ার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও কমে। ফলে ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
২. হার্ট ভাল থাকে
দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাইলে ব্রেকফাস্টের মেনুতে ফল রাখতেই হবে। কারণ নিয়মিত খালি পেটে ফল খেলে শরীরে উপকারি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেলের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
৩. পুষ্টির ভাণ্ডার
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মূল ব্রেকফাস্টের ১৫ মিনিট আগে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল খেলে খাবারে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদানগুলি শরীরে বেশি মাত্রায় শোষিত হয়। ফলে দেহের অন্দরে পুষ্টি ভরপুরমাত্রায় ঢোকে।
৪. শরীরের বিষ বের করে দেয়
সকালের প্রথম অর্ধে শরীর নিজের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানগুলি বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালায়। তাই তো এই সময় এক বাটি ফল খেলে শরীর থেকে বেশি মাত্রায় বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই টক্সিক উপাদানের প্রভাবে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। তাই শরীরকে যদি সুস্থ রাখতে চান, তাহলে ফল খেতে ভুলবেন না যেন!
৫. অ্যাসিড দূর করে
সকাল সকাল ফল খাওয়া মানেই চোরা ঢেকুর আর অ্যাসিডিটি হবে, এটা ভুল ধারণা। এর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। কারণ একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত ফল খেলে অ্যাসিড নয়, শরীরে অ্যাসিড এবং অ্যালকেলাইনের ভারসাম্য ঠিক হতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যাসিডিটি এবং গ্য়াস-অম্বলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৬. শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ে
ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা রক্তে মিশ্রিত হওয়ার পর শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা তো বাড়েই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কও সজাগ হয়ে ওঠে। ফলে সার্বিকভাবে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়।
৭. রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে
বেশিরভাগ ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান দেহের ভিতরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বাড়িয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় নানা রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়, সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৮. ওজন কমে
অতিরিক্ত ওজন যাঁদের মাথাব্যথার কারণ, তাঁরা নিয়মিত ব্রেকফাস্টে যদি ফল খাওয়া শুরু করুন, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার মেলে। ফলে থাকা একাধিক পুষ্টিকর উপাদান শরীরে মজুত টক্সিক উপাদানগুলি বের করে দিয়ে ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তেমনই অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। তাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৯. পেটের রোগ কমে
ফলে থাকা ফাইবার, শরীরে প্রবেশ করার পর হজমে সহায়ক পাচকরসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে একদিকে যেমন হজম ক্ষমতা বাড়ে, তেমনই কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। তাই যারা নানা রকম পেটের রোগে ভোগেন, তাঁরা নিয়মিত ব্রেকফাস্টে ফল খাওয়া শুরু করুন। উপকার মিলবে।