প্রোবায়োটিক যুক্ত দই এর পুষ্টিগুণ
আমাদের শরীরে অসংখ্য অনুজীব বসবাস করে। যাদের কিছু ক্ষতিকর আবার কিছু উপকারী। এই ভালো অনুজীবের বেশিরভাগেরই ব্যাকটেরিয়া। প্রোবায়োটিক হলো এইসব স্বাস্থ্যকর অনুজীব।
তবে অনেকসময় অসুস্থতার জন্য শরীরে এই ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা এবং প্রভাব, দুই কমতে পারে। তখন বাইরে থেকে খাবার বা সাপ্লিমেন্ট আকারে জীবন্ত ভালো ব্যাকটেরিয়া (লাইভ ব্যাকটেরিয়া) প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। বাইরে থেকে ঢুকিয়ে দেওয়া এই ভালো ব্যাকটেরিয়াকে চিকিৎসা পরিভাষায় প্রোবায়োটিক বলে। তবে প্রোবায়োটিক মানে শুধুই ভালো ব্যাকটেরিয়া নয়, ঈস্টও প্রোবায়োটিকের (ফ্যাংগাস) অঙ্গ।
দেহে প্রোবায়োটিকের অভাব দেখা দেয় বিভিন্ন কারণে। যেমন:
• এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার
• কোন রোগের কারণে
• অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
• সুষম খাদ্যের অভাব
• মদ্যপান
• অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড গ্রহণ ও কম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া
প্রোবায়োটিকের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য যে খাবারগুলো খেতে হয় সেগুলো কিন্তু দারুণ স্বাস্থ্যকর। প্রোবায়োটিকের প্রাকৃতির উৎসের মধ্যে সবচেয়ে ভালোটি হলো টকদই। এটা তৈরি করতে হয় দুধ দিয়ে যাকে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় দই করা হয়। দই কেবল প্রোবায়োটিক নয়, হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো। হজম প্রক্রিয়াকেও সুষ্ঠু করে তোলে।
এখন প্রশ্ন হলো প্রোবায়োটিক যুক্ত দই কোনটা??
আমরা অনেকেই মনে করি, দই ও Yogurt একই জিনিসের দুটো ভিন্ন নাম। আসলে কি তাই ? এর সাথে আরও যুক্ত হয়েছে প্রোবায়োটিক যুক্ত দই এর নাম। তাহলে দেখে নিই কিভাবে পাওয়া যাবে প্রোবায়োটিক যুক্ত দই।
১. দই
দই বানানোর জন্য দুধকে প্রথমে গরম করা হয়, তারপর এরসাথে Lactobacillus ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়া এক চামচ পুরানো দই যোগ করা হয়। দই এর এই ব্যাকটেরিয়া ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই পদ্ধতিতে দুধের ফারমেনটেশন হয় এবং দই তৈরি হয়।
দই আমিষ ও ক্যালসিয়ামের ভাল উৎস। এটা হজমেও সাহায্য করে। তাছাড়া যারা Lactose Intolerance এ ভুগছেন, তাদের জন্যও ভাল।
২. Yogurt (টক জাতীয় দই)
এটা তৈরি করার পদ্ধতি দই বানানোর সাথে অনেকটাই মিলে। শুধু একটি ব্যতিক্রম হলো, Yogurt তৈরির সময় Lactobacillus ব্যাকটেরিয়ার সাথে Streptococcus thermophiles ব্যাকটেরিয়া যোগ করা হয়। ফলে মানসম্পন্ন Yogurt তৈরি সহজ হয়ে যায় এবং মানুষের শরীরের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে (Intestine) পৌঁছায়,যা এর পুষ্টিমূল্য আরও বাড়িয়ে দেয়।
৪. প্রোবায়োটিক যুক্ত দই
সাধারণ দই বা Yogurt তৈরিতে যে পরিমাণ ব্যাকটেরিয়ার Strain ব্যবহার করা হয়, তাতে করে এর কোনটাকেই Probiotic বলা যায় না। তাই পরিমাণে বেশি ও অধিক কার্যকরী ব্যক্টেরিয়ার ও ঈস্ট যোগে তৈরি করা হয় প্রোবায়োটিক যুক্ত দই। যা আমাদের অন্রের সুরক্ষার পাশাপাশি আরও কিছু অতি জরুরি কাজে সাহায্য করে।
প্রোবায়োটিক যুক্ত দই যে কাজগুলো করে:
• এরা পরিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে
• বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন তৈরি করে
• বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নিষ্ক্রিয় করে
• অন্য ক্ষতিকর জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
• ক্ষতিকর জীবাণুর অতিরিক্ত বংশ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
• এরা পরিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে
• বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন তৈরি করে
• বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নিষ্ক্রিয় করে
• অন্য ক্ষতিকর জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
• শরীরের ফ্যাট কমানোর মাধ্যমে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
• প্রোবায়োটিক যুক্ত দই অন্ত্রের উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে; এর ফলে পরিপাক নালীর কাজকর্মই এর পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে করে।
এছাড়াও প্রোবায়োটিক যুক্ত দই –
● ডায়েরিয়া
● ইররিটেবল বউল সিস্টেম
● আলসারেটিভ কোলেটিস
● ক্রোনস ডিজিজ
● যোনিতে সংক্রমণ
● মূত্রনালীতে সংক্রমণ বা ক্যান্সার
● এইচ. পাইলোরি
● হজমে সমস্যা ইত্যাদি নানাবিধ অসুস্থতার বিরুদ্ধে কাজ করে।
ওজন কমানোর জন্য কিংবা সাধারন জীবনেও আমরা কিন্তু প্রচুর দই খাই। তাহলে সেই দই যদি হয় প্রোবায়োটিক যুক্ত তবে অবর্ণনীয় উপকার পাওয়া সম্ভব। তাই প্রতিদিনই প্রোবায়োটিক যুক্ত টকদই খাওয়া উচিত।