সঠিক খাদ্যাভ্যাসে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ সম্ভব
থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ না করলে অন্যান্য হরমোনাল গ্রন্থিগুলো এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ কম বেশি হলে তা আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবফেলে।অনিয়ম জীবনযাপন ও খাদ্য-পান থাইরয়েডের সমস্যার কারণ হতে পারে।
তবে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়ম মেনে জীবন যাপন করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আকারে খুব ছোট এই থাইরয়েড গ্রন্থি,আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।গলার পরের অংশে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থিকে নীরব ঘাতক ও বলা হয়। এটি বলা হয় কারণ এর বিকারের সময় জানা যায় না।
কখন বুঝবেন যে থাইরয়েড হরমোন সিক্রশনে ইমব্যালেন্স হচ্ছে?
ওজনবৃদ্ধি, এমনকি কম খেলেও। শরীরে আন্তঃকোষীয় কলা বৃদ্ধি ও পানি জমা শুরু। পেশিতে হালকা ব্যাথা বা ক্রাম্প – প্রধানতঃ পেশির হাইপোটোনিয়া বা শৈথিল্যের কারণে। দৈহিক অবসাদ বা অস্বস্তি এবং সারা দেহে এবং অস্থিসন্ধিতে (অর্থাৎ গাঁটে) ব্যাথা ইত্যাদি। তাছাড়া এর প্রভাবে ঘন ঘন মুড সুইং, খিটখিটে মেজাজ ও হয়ে যায়।
উপকারি খাদ্য:
১. আয়োডিনযুক্ত খাবার:
আয়োডিনের ঘাটতি মেটাতে আমরা আয়োডিনযুক্ত লবন খেয়ে থাকি। কিন্তু অতিরিক্ত লবন উচ্চ রক্তচাপের কারণ হওয়ায় পরিমিত পরিমানে লবণ খাওয়া উচিত।তাই লবনের পরিবর্তে সামুদ্রিক মাছ খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া চিংড়ি, টুনা মাছেও প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে। সেদ্ধ ডিম, কলা, দানা জাতীয় শস্য, শাকপাতাতেও প্রচুর আয়োডিন।
২. উচ্চমানের টাইরোসিন আমিষযুক্ত খাবার:
টাইরোসিন দরকার হয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে। উচ্চমানের টাইরোসিন প্রোটিন পেতে হলে খেতে হবে মাংস, মুরগির মাংস, ডিম, মাছ, কলা ও মিষ্টি কুমড়ার বিচি।
৩. ফলমূল ও শাকসবজি:
ফলমূল ও শাকসবজিতে থাকে ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রদাহ কমায়। তাছাড়া ফলমুল ও শাকসবজি পুষ্টিকর হওয়ায় আমাদের শরীরের হরমোন ব্যালেন্স করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এমনকি হার্টের সুরক্ষায় ও এর গুরুত্ব অপরিসীম।
৪. আয়রন ও কপার সমৃদ্ধ খাবার:
কপার এবং আয়রন দুটোই থাইরডের মোকাবিলা করতে জরুরি। টাটকা মাংস, ওয়েস্টার, কাজু, গমের আটা, কোকতে প্রচুর পরিমাণে কপার রয়েছে। সবুজ শাকসবজি, বিন, আঁশওয়ালা মাছ, সামুদ্রিক মাছ, পোলট্রির ডিমে রয়েছে আয়রন। সেই সঙ্গেই ভিটামিন সি ব্যালান্স করতে খান লেবু, টমেটো, ক্যাপসিকাম খুব উপকারি।
৫. ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার:
থাইরয়েড রোগীদের জন্য ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খুবই প্রয়োজন। এতে প্রদাহ কমে। তাই খেতে পারেন স্যামন মাছ। এই মাছে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাইরয়েড রোগীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। চাইলে খেতে পারেন যে কোনও সামুদ্রিক মাছ। তাছাড়া সূর্যমুখীর বিজেও এটি বিদ্যমান।
৬. বাদাম:
বাদামে থাকে সেলেনিয়াম নামক উপাদান। এতে থাকে উপকারী প্রোটিন। এতে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা ঠিক থাকে।রোজ ১০-২০ গ্রাম বাদাম সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সারা দিন খেতে পারেন এটি।
কোন খাবার খাওয়া উচিৎ নয়:
গয়ট্রোজেনাস জাতীয় খাবার:
গয়ট্রোজেনাস খাবার যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, সয়াসস, চিনাবাদাম, শিম, পালংক শাক ইত্যাদি রান্নার সময় ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা উচিত।
চা বা কফি:
অবসাদ বা ক্লান্তি দূর করতে আমরা অনেকেই কফি খেয়ে থাকি। এতে থাকে ক্যাফেইন যা থাইরয়েড হরমোনকে ব্লক করে। তাই আপনি যদি হাইপোথাইরয়েডিজম এ ভুগে থাকেন তাহলে কফির অভ্যাস ত্যাগ করে ফলের জুস খাওয়ার চেষ্টা করুন।
পাস্তুরিত দুধ ও দুধজাতীয় খাবার
থাইরয়েড সমস্যা থাকলে পাস্তুরিত দুধ খাওয়া উচিত নয়। এমনকি দুধজাতীয় খাবার যেমন পনির, দই ইত্যাদি খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।
চিনিযুক্ত খাবার
চিনি ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী, তাছাড়া মেটাবলিজমের জন্য শরীরে হরমোনের যে সামাঞ্জস্য দরকার তাতে চিনি বাধা সৃষ্টি করে। তাই অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
রিফাইন্ড ময়দা
রিফাইন্ড বা মিহি করা ময়দা ও ময়দাজাতীয় খাবার শরীরে হরমোন লেভেলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং ওজন বাড়ায়।
# প্রতিদিন নিয়ম করে এক ঘন্টা হাটার অভ্যাস করুন।
# প্রচুর পানি গ্রহণ করুন