প্রেগন্যান্সির সময় কি খাবার খাবেন ও কি খাবার এড়িয়ে চলবেন
প্রেগন্যান্সিতে গর্ভস্ত শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশে সঠিক পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস। গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসটি এমন একটি সময়, যখন আপনার শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে
১. হরমোনের পরিবর্তন
২. মুড সুইং (ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন),
৩. ক্লান্তি এবং
৪. সকালে অসুস্থতা,
৫. মাথা ঘোরা,
৬. বমি,বমি ভাব,
Acidity, Constipation হতে পারে ।
অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ওজন না বাড়িয়ে বরং উচিত পুস্তিকর খাবার খাওয়া যেটি এই সময়ে জরুরি।
সারাদিন এ অল্প করে খাবার খাওয়া, হাইড্রেটেড থাকা, হালকা ব্যায়াম করা এবং stress free থাকা এই সময়ের সমস্যাগুলি কমিয়ে দিতে পারে ।
এ সময়ে কোন খাবার গুলো খাবেন:
১) ক্যালসিয়ামও ভিটামিন ডি সমৃদধ দুগ্ধজাত পণ্যঃ
দুগ্ধজাত খাবার গুলো ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ফোলিক অ্যাসিডের একটি দুর্দান্ত উৎস। আপনার প্রথম-৩মাসের গর্ভাবস্থায় খাবারের মধ্যে দই, দুধ, এবং শক্ত চীজ বা পনির রাখতে পারে ন।
২) ফোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারঃ
ফোলেট বা ফোলিক অ্যাসিড শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের যথাযথ বিকাশের জন্য অপরিহার্য, যা পরবর্তীতে মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের কোষে বিকশিত হয়। ফোলেট সমৃদ্ধ খাবারের উদাহরণ হল- গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি যেমন পালং শাক এবং বাঁধাকপি, শতমূলী, লেবুবর্গীয় ফল, বীনস, মটরশুটি, মুসুর ডাল, আভোকাডো, ব্রাসিলস স্প্রাউট (ছোট্ট বাঁধাকপি), ভেন্ডি বা ঢ্যাঁড়শ, ইত্যাদি।
৩) ডিমঃ
ডিম প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি২, বি৫, বি৬, বি১২, ডি, ই ও কে, এবং ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো খনিজগুলির একটি ভাল উৎস ।
৪) ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছঃ
মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, উচ্চ মানের প্রোটিনের একটি সেরা উদাহরণ। মাছ এছাড়াও ভিটামিন বি২, ডি ও ই এবং পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো অপরিহার্য খনিজের একটি খুব ভালো উৎস
৫) লিন মিট/মাংসঃ
মাংসে ভিটামিন বি, প্রোটিন, জিঙ্ক এবং লোহা রয়েছে। খাদ্যতালিকায় চর্বিহীন মাংস থাকলে এটি আপনার এবং আপনার শিশুর পক্ষে ভালো। আধসিদ্ধ মাংস খাওয়া যাবেনা।
৬) হোল গ্রেইনঃ
কার্বোহাইড্রেট, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়ামের মতো খনিজের স্বাস্থ্যকর উৎস। এইগুলি শিশুর স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। উদাহরণ: বার্লি, বাদামী চাল, বাজরা,পাস্তা, ওটামিল, ইত্যাদি
৭) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলঃ
তরমুজ, আভোকাডো, ডালিম, কলা, পেয়ারা, কমলালেবু, মিষ্টি লেবু, স্ট্রবেরি এবং আপেলের মতো ফলগুলি গর্ভজাত শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
৮) রঙিন শাক সবজি
প্রচুর পরিমাণে রঙিন শাক সবজি খাওয়া নিশ্চিত করে যে, ক্রমবর্ধমান শিশুর জন্য অপরিহার্য পুষ্টির বিস্তৃত পরিসর পাবেন। উদাহরণ- ব্রোকোলি, বাঁধাকপি, পালং শাক, গাজর, কুমড়ো, মিষ্টি আলু, টমেটো, ক্যাপসিকাম, ভুট্টা, সজনের ডাঁটা, বেগুন ইত্যাদি।
৯)বিভিন্ন বীজ ও বাদাম
বীজ এবং বাদামগুলি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ, ফ্ল্যাভোনিয়েডস, এবং স্বাস্থ্যকর ফাইবারের চমৎকার উৎস। Almond,Walnuts, peanuts, চিয়া সিড, তোকমা বীজ,ইত্যাদি।
কোন খাবার গুলোএড়িয়ে চলবেনঃ
১) প্যাকেট-করা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার: যেমন জ্যুস, মাইক্রোওয়েভ-প্রস্তুত খাবার, কেক এবং বিস্কুট, কনডেন্সড দুধ ইত্যাদি সংযোজন, প্রিজারভেটিভ, উচ্চ মাত্রার চিনি ও সোডিয়াম এবং ০ ক্যালোরি; প্যাকেটযুক্ত খাবারে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা খাদ্য বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে ।
২) সী ফুডঃসীফুড বা সামুদ্রিক খাবারে পারদের উচ্চ স্তর থাকে, যা ভ্রূণের মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং বিকাশের বিলম্বের সাথে যুক্ত ।
৩) পেঁপে ও আনারসঃ
কাঁচা এবং আধা-পাকা পেঁপেতে ল্যাটেক্স থাকে, যা গর্ভাশয়ের সংকোচন শুরু করে দেয় এবং অকাল প্রসব, এমনকি গর্ভপাতের কারণ হতে পারে ।
আনারসে ব্রোমেলাইন নামে একটি পদার্থ রয়েছে, যা সার্ভিক্সকে নরম করে তুলতে পারে
৪) কাঁচা বা আধ-সিদ্ধ মাংস,মাছ,যে কোন খাবার ব্যাকটেরিয়াঃসালমেনেলা, লিস্টারিয়া ইত্যাদি দ্বারা দূষিত হতে পারে, যা গুরুতর রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যা গর্ভজাত শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে।
৫) ফাস্ট ফুডঃগর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে জাঙ্ক ফুড খাওয়া ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, এবং মনোযোগ-ঘাটতি, হাইপারএকটিভিটি ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির সাথে যুক্ত ।
৬) অতিরিকত ক্যাফিন( চা/ কফি)
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যাফিনের মাত্রা অনেক কমাতে গবে। কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং অত্যধিক হারে গ্রহণ করা হলে অনিদ্রা, বিরক্তিকরতা এবং স্নায়বিক দুর্বলতা বা ভয় সৃষ্টি করে । এতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে ।
৭)অ্যালকোহলঃঅ্যালকোহল ভ্রূণের বিকাশের জন্য খুব ঝুঁকিপৃন এবং গুরুতর জন্মগত ত্রুটি হতে পারে । গর্ভাবস্থায় মদ্যপান করা উচিত নয়
৮) চিনিযুক্ত খাবার:প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি এবং গর্ভাবস্থা ডায়াবেটিস হতে পারে।