পাইলস প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
পাইলস মূলত আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটি রোগ। এতে মলদ্বারের ভেতরের শিরা ফুলে ওঠে। ফলে দেখা দেয় মল ত্যাগের সময় প্রদাহ ও রক্তপাত। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
তাই এর থেকে প্রতিকার পেতে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে মল যেন কিছুতেই শক্ত না হয়।তাছাড়া নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যাভ্যাস পারে এই রোগ সহজেই প্রতিকার করতে।
আসুন জেনে নেই পাইলস প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে উপযুক্ত খাবার কোনগুলি।
পাইলসের কারণঃ
মূলত দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্য চললে,আইবিএস থাকার কারণে,দীর্ঘদিন ডায়রিয়া চললে,দীর্ঘক্ষণ মল চেপে রাখলে,প্রতিদিনের খাবারে খাদ্য আঁশ কম থাকলে,অতিরিক্ত প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে, কায়িক শ্রম কম করার ফলে, বেশি ওজন থাকার কারণে কিংবা অনেক মায়েদের প্রেগন্যান্সি সময়ও পাইলসের সমস্যা দেখা দেয়।
অনেকে মনে করেন বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়ে থাকে।এটা সম্পূর্ণ ভুল।নারী পুরুষ ছোট বা বড় উভয়ই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে সঠিক মাত্রায় খাদ্য আঁশ গ্রহণ না করলে।
প্রতিরোধকারি খাবারঃ
খাদ্য আঁশ মূলত দুই ধরনের।একটি পানিতে দ্রবীভূত হয়,যা জেল জাতীয় মন্ড তৈরি করে এবং পাকস্থলীর হজম ক্রিয়া স্লথ করে দেয়। এরফলে মল নরম পরিমান বৃদ্ধি করে।অপরটি অদ্রবণীয় এবং গোটা অবস্থায় হজমক্রিয়া শেষে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। এরা মল নরম করতে সহায়তা করে।
তাই যাদের পাইলসের সমস্যা নেই কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া বা আইবিএস এ ভুগছেন, আগে থেকেই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন আঁশ জাতীয় খাদ্য।
এর মাঝে রয়েছে –
১.সবুজ শাকসবজি
২.মৌসুমি ফলমূল
৩.লাল আটার রুটি,
৪.ঢেঁকি ছাটা চাল
৫.সাবু দানা,বার্লি
আর এই সবকিছুর সাথে দরকার প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে পানি পান করা।
এতে করে মল নরম থাকবে এবং পাইলসের ঝুঁকি নব্বই শতাংশ কমে যাবে।
বয়স অনুযায়ী খাদ্য আঁশের চাহিদাঃ
২-৫ বছর৷ ১৫ গ্রাম
৫-১১ বছর৷ ২০ গ্রাম
১২-১৬ বছর৷ ২৫ গ্রাম
১৭ এবং তদূর্ধ্ব ৩০ গ্রাম
প্রতিকারঃ
পাইলসের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের পাশাপাশি বদলে ফেলুন খাদ্যাভ্যাস।
যে সব খাবার এড়িয়ে চলবেন-
১.চা কফি বা ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন। গ্রীন টি খাওয়া যেতে পারে স্বল্প মাত্রায়।
২.অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩.গরুর মাংস, বা যে কোন রেড মিট খুব কম পরিমানে গ্রহণ করুন।
৪.প্রক্রিয়াজাত দানা শস্য এড়িয়ে চলুন
৫.দুধ,চিজ, পানির এবং দুগ্ধজাত খাবারের পরিমান কমিয়ে দিন।
৬.অতিরিক্ত অদ্রবণীয় আঁশ জাতীয় শাক যেমন লাউশাক, কুমড়া শাক এবং মল শক্ত করে এমন সবজি যেমন কাঁচা কলা এসব খাবার এড়িয়ে চলুন।
৭.বাইরের প্রিজারভেটিব সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ বর্জন করুন।
৮.ধুমপান,মদ্যপান বন্ধ করুন।
আমাদের সচেতনতা,সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত পরিমিত পানি পান,শারীরিক শ্রম এই সব কিছুর সমন্বয় সাধনের ফলে খুব সহজেই এই রোগ থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি।