যক্ষ্মা থেকে রক্ষা আছে
ফুসফুসের যক্ষ্মা ছোঁয়াচে। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে তা ছড়ায়। তাই হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যক্ষ্মা এখনো বড় একটি সমস্যা। আগে মনে করা হতো, নিম্ন আয়ের মানুষের যক্ষ্মা হয়। তবে এ ধারণা সঠিক নয়। ধনী–গরিব যে কারও যক্ষ্মা হতে পারে। যক্ষ্মায় প্রতিবছর দেশে প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা যায়। অনেকেই মনে করেন, যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই, মৃত্যু অবধারিত। তবে এ কথার ভিত্তি এখন আর নেই। সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে যক্ষ্মা রোগী পুরোপুরি সেরে ওঠে।
যাঁরা বেশি ঝুঁকিতে
যক্ষ্মায় সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকেন বা সংস্পর্শে আসেন, এমন মানুষের (পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক, নার্স) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। ধূমপান, মদ্যপান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মাদকাসক্তি, অপুষ্টি ইত্যাদি যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যেমন এইডস রোগী, দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ খান, এমন ব্যক্তির যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সবখানে হতে পারে
অনেকের ধারণা, যক্ষ্মা ফুসফুসের অসুখ। এ ধারণা সঠিক নয়। যদিও শতকরা ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা ফুসফুসে হয়ে থাকে। এর বাইরে ফুসফুসের আবরণী, লসিকা গ্রন্থি, মস্তিষ্কের আবরণী, হাড়, অন্ত্র, ত্বকসহ শরীরের যেকোনো স্থানে যক্ষ্মা হতে পারে। শুধু হৃৎপিণ্ড, নখ ও চুলে যক্ষ্মা হয় না। যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে ঢুকলেই কেউ এ রোগে আক্রান্ত হবেন, এমনটা না–ও হতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এ জীবাণুর কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারে।
সক্রিয় ও সুপ্ত যক্ষ্মা
যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তুলনামূলক কম, যক্ষ্মার জীবাণু দ্রুত তাঁদের শরীরে ছড়িয়ে যায়। রক্ষাকারী কোষগুলো ধ্বংস করে দেয়। একে সক্রিয় যক্ষ্মা বলা হয়। অন্যদিকে অনেকেই বছরের পর বছর শরীরে যক্ষ্মার জীবাণু বহন করে বেড়ান। একে সুপ্ত যক্ষ্মা বলে। পরবর্তী সময়ে যেকোনো সময় সুপ্ত যক্ষ্মা থেকে এসব জীবাণু সক্রিয় যক্ষ্মায় রূপ নিতে পারে।
লক্ষণ
তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি (শুকনো কিংবা কফযুক্ত) যক্ষ্মার অন্যতম লক্ষণ। এ ছাড়া কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। বুকে ব্যথা, ওজন হ্রাস, অবসাদ, সন্ধ্যায় হালকা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, রাতে অতিরিক্ত ঘাম, ক্ষুধামান্দ্য ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এর পাশপাশি মলত্যাগের অভ্যাসে আকস্মিক পরিবর্তন—কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য, কখনো ডায়রিয়া; বুকে বা পেটে পানি জমলে সতর্ক হতে হবে। যক্ষ্মার পরীক্ষা করাতে হবে।
ওষুধে যক্ষ্মা সারে
যথাসময়ে শনাক্ত হলে ওষুধ খেলেই যক্ষ্মা ভালো হয়। এর চিকিৎসার দুটি ধাপ। প্রথমত, ছয় মাস ওষুধ খাওয়া। দ্বিতীয়ত, আট থেকে নয় মাস ওষুধ খাওয়া। তবে কোনো ব্যক্তি একাধিকবার যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে বিশেষ চিকিৎসা করাতে হয়।
প্রতিরোধে করণীয়
যক্ষ্মা প্রতিরোধে জন্মের পরপর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক। ফুসফুসের যক্ষ্মা ছোঁয়াচে। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে তা ছড়ায়। তাই হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেখানে–সেখানে কফ ফেলা যাবে না।
তথ্যসুত্রেঃ প্রথমআলো