শিশুদেরও হতে পারে কিডনি রোগ
শিশুদেরও হতে পারে কিডনি রোগ সে সর্ম্পকে প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন অধ্যাপক রনজিত রায়, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
শিশুদের কিডনি রোগ জন্মগত ত্রুটির কারণে হতে পারে। আবার অনেক শিশু অন্য কোনো রোগের কারণে কিডনির সমস্যায় ভোগে।
অনেকেই মনে করেন, শিশুদের কিডনি রোগ হয় না। ধারণাটি ঠিক নয়। দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ শিশু। এর মধ্যে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু কিডনির সমস্যায় ভুগছে। শিশুদের কিডনি রোগ জন্মগত ত্রুটির কারণে হতে পারে। আবার অনেক শিশু অন্য কোনো রোগের কারণে কিডনির সমস্যায় ভোগে।
কারণগুলো জেনে নিই
প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে ৩ থেকে ৬ জন কিডনির ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে। মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় কিংবা জন্মের পরপরই আলট্রাসনোগ্রাম করালে এটি ধরা পড়ে। পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ ও মাল্টিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ হলে শিশুদের কিডনিতে সিস্ট দেখা যায়। হাইড্রোনেফ্রোসিস হলে কিডনির আকার বড় হয়। সাধারণত জন্মগতভাবে মূত্রতন্ত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে এ সমস্যা দেখা দেয়। এর বেশির ভাগই নিরাময়যোগ্য। সে ক্ষেত্রে জন্মের পর সুবিধাজনক সময়ে সার্জারি করার দরকার পড়ে।
যেসব লক্ষণ দেখা দেয়
কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে শিশুর শরীরে নানা প্রদাহ দেখা দেয়। এ ছাড়া চোখ–মুখসহ পুরো শরীর ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের রং বদলে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাব করতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। এসব উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা করালে শিশু সেরে উঠতে পারে।
যা করতে হবে
শিশুদের কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম কারণ আকস্মিক ডায়রিয়া কিংবা বমির কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতা। ঠিকভাবে এ পানিশূন্যতা পূরণ না করতে পারলে কিডনিতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়ে কিডনি বিকল হতে পারে। ডায়রিয়া বা বমি, জ্বর হলে শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। মারাত্মক ডিহাইড্রেশন বা তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন দিতে হবে। তাহলে কিডনি বিকল হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
শিশুদের কিডনি রোগ দ্রুত শনাক্ত করার জন্য উপসর্গগুলোর প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি। প্রস্রাব করার সময় শিশু কষ্ট পাচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এ ছাড়া প্রস্রাব করার সময় শিশু কাঁদলে, লালচে রঙের প্রস্রাব করলে সচেতন হতে হবে। শিশুর মুখ ফুলে যাওয়া, শরীরে পানি আসা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, টানা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া, রক্তশূন্যতা, জ্বর, পেটব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, পা বাঁকা হয়ে আসা, খিঁচুনি ইত্যাদি হলে সতর্ক হতে হবে। অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।