ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে নেবেন
ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে নেবেন সে সম্পর্কে প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন ডা. মো. মতলেবুর রহমান সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
দেশে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গু জ্বর এবং এ–সংক্রান্ত জটিলতায় হাসপাতালগুলো ক্রমে ভরে যাচ্ছে। মশাবাহিত এই ভাইরাস জ্বর সাধারণত সপ্তাহখানেকের ভেতর সেরে যায়। তবে জটিল পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়, এমনকি তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ভুগতে হতে পারে (এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম)। ডেঙ্গু জ্বর হলে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীকে বাসায় রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রয়োজনে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
কখন নেবেন হাসপাতালে
রোগী যদি হঠাৎ প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েন, রোগীর জ্ঞানের মাত্রার তারতম্য দেখা দেয়, মানসিকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েন, অস্থির বা অচেতন হয়ে পড়েন, তবে তাঁকে হাসপাতালে নিতে হবে। এ ছাড়া খিঁচুনি, পানিশূন্যতা, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, জন্ডিসের লক্ষণ (চোখের সাদা অংশ হলদে হয়ে যাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য), প্রস্রাবের সমস্যা (প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, সঠিকভাবে প্রস্রাব করতে না পারা, অর্থাৎ প্রস্রাব আটকে যাচ্ছে বলে মনে হওয়া বা অল্প অল্প করে বারবার প্রস্রাব হওয়া) কিংবা দেহের যেকোনো জায়গা থেকে রক্তপাতের কোনো চিহ্ন দেখা যায়, তাহলেও রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
পানিশূন্যতা কীভাবে বুঝবেন
সচেতন না থাকলে অজান্তে পানিশূন্য হয়ে পড়ার কারণে তা ডেঙ্গু রোগীর জন্য জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। পানিশূন্যতায় ভুগলে রোগী প্রচণ্ড তৃষ্ণা অনুভব করেন, মুখ শুকিয়ে আসে (কথা আটকেও যেতে পারে), মাথা ঘোরায়, মাথাব্যথাও হতে পারে। এ ছাড়া রোগী বিরক্তি বোধ করেন বা মেজাজ হারাতে পারেন। প্রস্রাবের রঙের পরিবর্তন (গাঢ়) লক্ষ করুন, স্বাভাবিকের তুলনায় প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেছে কি না, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। রোগীর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। বাড়িতে প্রচুর পানি ও তরল খাবার দেওয়ার পরও এসব লক্ষণের উন্নতি না হলে রোগীকে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগীকে স্যালাইন দিতে হয় কতটা তরলের ঘাটতি হলো শরীরে, সেই হিসাব–নিকাশ সঠিকভাবে করে। নয়তো হিতে বিপরীত, শরীরে পানি জমে যেতে পারে। তাই অবশ্যই হাসপাতালে এই চিকিৎসা নিতে হবে।
রক্তপাত
নাক বা মুখ থেকে, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তপাত, প্রস্রাব-পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে, কালো পায়খানা হলে কিংবা রক্তবমি হলে অবশ্যই হাসপাতালে নেবেন। এ ছাড়া চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হলে বা চামড়ায় ফুসকুড়ি দেখা গেলেও অবহেলা করা যাবে না। নারীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তারিখের আগে মাসিক শুরু হয়ে যেতে পারে কিংবা নির্দিষ্ট তারিখে শুরু হলেও অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। এগুলোর যেকোনোটি দেখা দিলেই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে রোগীকে।
ঝুঁকি যেগুলো
ডেঙ্গু রোগী একই সময়ে করোনাভাইরাসেও সংক্রমিত হতে পারেন, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে, সরাসরি চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
পূর্বে এক বা একাধিকবার ডেঙ্গু হয়ে থাকলে বর্তমান ডেঙ্গু সংক্রমণটি জটিল আকার ধারণ করার আশঙ্কা বেশি। আবার প্রথমবার ডেঙ্গু হলেও রোগী যদি দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে আক্রান্ত হন (উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হৃদ্রোগ, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি ও লিভারের জটিলতা) কিংবা কেমোথেরাপি গ্রহণকারী বা অন্তঃসত্ত্বা নারী হলে হাসপাতালে ভর্তি করানোই শ্রেয়।
সুস্থ হওয়ার পর
ডেঙ্গু, করোনা প্রভৃতি ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার পরও রোগী ক্ষুধামান্দ্য, শারীরিক অবসাদ, মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি, অল্প পরিশ্রমেই অধিক শ্রান্তি, কাজে অনীহা অনুভব করতে পারেন। বেশ কয়েক মাস এ রকম থাকতে পারে। স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফেরার জন্য এই সময়েও কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে। আর অবশ্যই প্রচুর পানি, ঘরে তৈরি ফলের রস, খাওয়ার স্যালাইনসহ অন্যান্য তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে।