মূত্রনালির ক্যানসারের চিকিৎসা
মূত্রনালির ক্যানসারের চিকিৎসা সর্ম্পকে প্রথমআলো পত্রিকায় লিখেছেন ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা, ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞ।
মূত্রনালিতে ক্যানসার শুরুতেই শনাক্ত করা গেলে নিরাময় সম্ভব। ষাটোর্ধ্ব যে কারও এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে ৬০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মূত্রনালির প্রদাহে ভুগলে এবং ধূমপানের কারণেও এ রোগ হতে পারে।
মূত্রনালিতে ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। পরবর্তী সময়ে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া, প্রস্রাবের ধারা চিকন হওয়া ও পরিমাণ কমে যাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভব করা, অজান্তে প্রস্রাব ঝরা, প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া, ঘন ঘন প্রদাহ, মূত্রনালি থেকে রক্ত ও রস ঝরা এবং মূত্রনালি ফুলে যাওয়া।
রোগের অবস্থা ও মূত্রনালির কোন অংশ আক্রান্ত, তার ওপর নির্ভর করে এ রোগের চিকিৎসাপদ্ধতি। রোগীর বয়স, লিঙ্গ, রোগের বিস্তৃতির ওপরও এটা নির্ভরশীল। এর চিকিৎসার মধ্যে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি অন্যতম। তবে প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচারই নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা। দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
শল্যচিকিৎসা
ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে কারও কারও মূত্রথলিসহ মূত্রনালি কেটে ফেলতে হয়। কারও কারও পুরুষাঙ্গের কিছু অংশ ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কারও আবার পুরুষাঙ্গ ও মূত্রনালি অপসারণ করারও প্রয়োজন হয়। অবস্থাভেদে কারও লসিকাগ্রন্থিও ফেলে দিতে হয়। নারীর মূত্রথলি, মূত্রনালি, যৌনদ্বার ফেলে দিতে হয়। মূত্রথলি ফেলে দিলে বিকল্প পথে প্রস্রাব নির্গমনের ব্যবস্থা করতে হয়। তবে শল্যচিকিৎসায় কিছু জটিলতাও তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অবশকরণজনিত জটিলতা, খাদ্যনালিতে প্যাঁচ লাগা, মূত্র ঝরা ও সংক্রমণ। এ ছাড়া মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। তবে এই ঝুঁকি কম, ১ থেকে ২ শতাংশ। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগটি আবার ফিরে আসতে পারে, পচন ধরতে পারে, মূত্রনালি সরু হতে পারে। প্রস্তুতকৃত বিকল্প পথ ছাড়া অন্য পথ দিয়ে প্রস্রাব ঝরতে পারে।
রেডিওথেরাপি
শরীরের বাইরে থেকে এবং রেডিও অ্যাকটিভ বড়ি বা পিলেট ক্যানসারে আক্রান্ত জায়গায় বসিয়ে দুইভাবে রেডিয়েশন দেওয়া হয়। সপ্তাহে পাঁচ দিন হিসাবে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত দিতে হয় এই থেরাপি। তবে এর প্রভাবে সুস্থ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন অন্য জায়গা দিয়ে প্রস্রাব ঝরা, ত্বক জ্বলে যাওয়া, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, মূত্রথলির প্রদাহ, অরুচি, চিকন ধারায় প্রস্রাব হওয়া অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
কেমোথেরাপি
ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে অ্যান্টিক্যানসার ওষুধ ব্যবহার করা যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসার চিকিৎসায় এ থেরাপি প্রযোজ্য। তবে কেমোথেরাপির ফলে রক্তশূন্যতা, বমি হওয়া, রুচি কমে যাওয়া, মাথার চুল পড়ে যাওয়া, মুখে ঘা হওয়া ও সংক্রমণের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে ভয় না পেয়ে মনোবল শক্ত করে ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে মূত্রনালির ক্যানসার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।