ডায়রিয়ার কারণ ও প্রতিকার
দিনে দিনে গ্রীষ্মের তাপদহ অসহনীয় হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডায়রিয়া ও আমাশয় জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। দূষিত পানি পান না করা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারগ্রহণ এর অন্যতম প্রধান কারণ।
তদুপরি ডায়রিয়া জনিত অসুখের কারণে শরীর হতে প্রচুর পারিমাণে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায় এবং রোগী পানি শূন্যতায় (Dehydration) ভোগে। এরপর সঠিকমাত্রায় পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করা না হলে রোগী মারাত্মক কিডনী জনিত অসুখের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। পরবর্তীতে যা জীবনের প্রতিও হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
ডায়রিয়া কী
পানির মত বার বার পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩ বার বা তার বেশি বার পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। এক্ষত্রে তিনবারের কম হলে ভয়ের কিছু নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এই ডায়রিয়া। প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১৭০ কোটি শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৫ লক্ষ ২৫ হাজার শিশুর প্রাণ কেড়ে নেয় এই ঘাতকব্যাধি। ডায়রিয়ার কারণে শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। সারা বিশ্বে ৭৮ কোটি মানুষ সুপেয় পানি পান করতে পারে না এবং প্রায় ২৫০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত পায়খান ব্যবহার করতে পারে না। এজন্য উন্নয়নশীল বিশ্বে ডায়রিয়ার প্রকোপ খুব বেশি। এক গবেষণায় দেখা গেছে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ৩ বছর বয়সী শিশুরা বছরে প্রায় ৩ বার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
ডায়রিয়ার লক্ষণ
- হঠাৎ করে পায়খানা লাগা।
- পায়খানা লাগলে দ্রুত টয়লেটে যাওয়া বা অপেক্ষা করতে না পারা।
- পায়খানা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা। অনেকসময় পোশাকে পায়খানা লেগে যেতে পারে।
- তলপেটে কাঁমড় বা তীব্র ব্যাথা অনুভব করা।
- বমি-বমি ভাব থাকা। অনেক সময় বমি-বমি ভাব নাও থাকতে পারে।
- শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হলে আরও কিছু লক্ষণ থাকতে পারে :
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।
- জ্বর হওয়া এবং ঠাণ্ডা লাগা।
- হলকা মাথা ব্যাথা/ মাথা ঘোরা।
- বমি হওয়া বা বমি-বমি ভাব থাকা।
শিশু-কিশোরদের মধ্যে ডায়রিয়ার লক্ষণ
- ঘণ ঘণ পিপাসা পাওয়া।
- স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্রাব হওয়া। একটানা ৩ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে প্রস্রাব না হওয়া।
- শারীরিক দুর্বলতা।
- মুখ শুষ্ক দেখানো।
- শিশুর কান্নার সময় চোখে পানি না থাকা।
- ত্বকের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া বা কুচকে যাওয়া।
পানিশূন্যতা
ডায়রিয়া হলে পায়খানা ও বমীর পাশাপাশি মূত্র ও ঘামের সাথে শরীর থেকে electrolytes (সোডিয়াম, ক্লোরাইড, পটাশিয়াম এবং বাইকার্বনেট) বের হয়ে যায়। এগুলো যথন পূরণ না হয় তখন পানিশুণ্যতা দেখাদেয়। পানিশূন্যতার লক্ষণসমূহ :
- ঘণ ঘণ পিপাসা হয়।
- মুখ, জিহ্বা ও গলা শুকিয়ে যায়।
- স্বাভাবিকের চেয়ে কম প্রস্রাব হয় অথবা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
- গাঢ় বর্ণবিশিষ্ট প্রস্রাব হয়।
- ক্লান্ত বোধ করা।
- চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চোখের কোঠরে ঢুকে যায়।
- শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস হয়, নাড়ি (Pulse) খুব দ্রুত এবং ক্ষীণ হয়ে যায়।
- রোগী নিস্তেজ ও অসাড় হয়ে যায় এবং কখনো কখনো পেট ফুলে যায়।
- পানিশূন্যতা খুব বেশি হলে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।
- ত্বকের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া বা কুচকে যাওয়া। রোগীর শরীরের চামড়া টেনে ছেড়ে দিলে দু-সেকেন্ডের মধ্যে যদি পূর্বের মতো না হয়ে কুচকে থাকে তাহলে বুঝতে হবে রোগীর পানিশূন্যতা খুব বেশি।
- চোখে ঝাপসা দেখা।
কতখানি পানিশূন্যতা কিভাবে বুঝবেন
রোগীর শরীরে পানিশূন্যতাকে তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে :
মারাত্মক পানিশূন্যতা (Severe Dehydration)
- প্রায় মৃতের মতো রোগী পড়ে থাকবে।
- চোখ শুকনো থাকবে এবং কোঠরের ভেতরে বেশ খানিকটা ঢুকে যাবে।
- জিহ্বা ও মুখ শুকনো থাকবে।
- কাঁদলে চোখে পানি আসবে না।
- রোগীর শরীরের চামড়া টেনে ছেড়ে দিলে দু-সেকেন্ডের মধ্যে যদি পূর্বের মতো না হয়ে কুচকে থাকে তাহলে বুঝতে হবে রোগীর পানিশূন্যতা খুব বেশি।
- রোগী ভীষণ পিপাসার্ত থাকবে কিন্তু পানি খেতে পারবে না অথবা খুব কম খেতে পারবে।
- নাড়ি স্পন্দন (Pulse) অত্যন্ত দ্রুত দুর্বল হবে, এমনকি নাড়ি স্পন্দন নাও পাওয়া যেতে পারে।
- ছোট শিশুদের মাথার তালু অনেক ভেতরে ঢুকে যাবে।
- শরীরের চামড়া টেনে ছেড়ে দিলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে দেরি হয়।
মৃদু পানিশূন্যতা (Some Dehydration)
- শিশু পিপাসার্ত এবং অশান্ত হয়ে পড়বে। আর শান্ত থাকলেও ধরা বা ছোঁয়া মাত্রই চিৎকার করে উঠবে।
- ছোট শিশুর মাথার তালু বসে যাবে।
- নাড়ি স্পন্দন (Pulse) দ্রুত হবে।
- চোখ কোঠরে ঢুকে যাবে।
- মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাবে।
- কাঁদলে চোখে পানি আসবে না।
- প্রস্রাবের পরিমাণ অনেক কমে যাবে ও গাঢ় (হলুদাভ) রঙের হবে বা সময়িক ভাবে বন্ধ থাকতে পারে।
পানি শূন্যতার লক্ষণ নেই (No sign of Dehydration)
- রোগী পিপাসার্ত নয়। অন্যান্য সময়ের মতো রোগী স্বাভাবিকভাবে পানি পান করে থাকে।
- নাড়ি স্পন্দন (Pulse) এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক।
- প্রস্রাবের পরিমাণ অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক
- জিহ্বা ও মুখ শুকনো নয়।
- চোখ স্বাভাবিক থাকে এবং কাঁদলে চোখে পানি আসে।
- শরীরের চামড়া টেনে ছেড়ে দিলে তা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
ডায়রিয়া কেন হয়
ডায়রিয়া বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে :
- জীবাণু সংক্রামিত হলে ডায়রিয়া হয়।
- দূষিত পানি পানের মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়।
- দূষিত খাবার বা পঁচা-বাশি খাবার খেলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে বা ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলেও ডায়রিয়া হতে পারে।
- এছাড়াও ভ্রমণের সময় অস্বাস্থ্য পরিবেশ হতে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে ডায়রিয়া হতে পারে।
সংক্রামক ডায়রিয়া কেন হয়?
- ভাইরাসজনিত। যেমন : রোটা ভাইরাস, এস্ট্রো ভাইরাস, এডেনোভাইরাস ইত্যাদি।
- ব্যাকটেরিয়াজনিত। যেমন : সালমোনেলা, শিগেলা, ই কলাই, ভিব্রিও কলেরি, ক্যামপাইলোব্যাকটর ইত্যাদি।
- পরজীবীজনিত। যেমন : জিয়ারডিয়া, ক্রিপটোসপরিডিয়াম, সাইক্লোসপরা ইত্যাদি।
অসংক্রামক ডায়রিয়া কেন হয়?
- কিছু অসুখ, যেমন : ডাইভার্টিকুলাইটিস, পায়ুপথে বা অন্ত্রে ক্যানসার, আইবিএস, আলসারেটিভ কলাইটিস ইত্যাদি।
- কিছু ওষুধ, যেমন : ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড, বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক, জোলাপ ইত্যাদি।
দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া হওয়ার কারণ
- জিয়ারডিয়া ইনটেসটিনাথিস
- স্ট্রংগিলয়ডিয়াসিস
- এনটারোপ্যাথিক ই. কলাই
- খাদ্য হজম না হওয়া
- অন্ত্রের কৃমি ইত্যাদি।
ডায়রিয়া হলে কী করণীয়
ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা তীব্র হলে তা বিপদজনক হতে পারে – বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য।
- শরীর থেকে যতোটা লবণ ও পানি বেরিয়ে যাচ্ছে তা পূরণ করা। এজন্য রোগীকে বারে বারে খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার খাওয়ানো। এছাড়া যে কারণে ডায়রিয়া হয়েছে তার চিকিৎসা করা।
- যতোবার পাতলা পায়খানা বা বমি হবে ততোবারই সমপরিমাণ খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ান।
- রোগীকে স্বাভাবিক ও পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে।
শিশুদের ডায়রিয়া হলে করণীয়
শিশুর ডায়রিয়া হলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়ান। এছাড়া শিশুদের মধ্যে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলির দেখা গেলে সরাসরি একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ :
- ২৪ ঘন্টার বেশি ডায়রিয়া হলে।
- যদি ১০২ ডিগ্রী বা তার বেশি জ্বর থাকলে।
- তলপেট বা মলদ্বারে গুরুতর ব্যাথা অনুভব করা।
- মলের সাথে যদি রক্ত বের হয়। মলের রং যদি কালো হয়।
- পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে।
প্রাপ্ত বয়স্কদের ডায়রিয়া হলে করণীয়
প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়রিয়া হলে বারে বারে খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তবে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলি দেখা গেলে সরাসরি একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত :
- ডায়রিয়া যদি ২ দিনের বেশি থাকে।
- যদি ১০২ ডিগ্রী বা তার বেশি জ্বর থাকে।
- বার-বার বমি হলে।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬ বার বা তার বেশি পায়খানা হলে।
- তলপেট বা মলদ্বারে গুরুতর ব্যাথা অনুভব করলে।
- মলের সাথে যদি রক্ত বের হয়। মলের রং যদি কালো হয়।
- পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়
ডায়রিয়া প্রতিরোধরে জন্য নিম্নলিখিত নির্দেশাবলী মেনে চলুন:
- বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
- অধিক পরিমাণে পানি ও লবণ গ্রহণ (বিশেষত রমজান মাসে ইফতার পরবর্তী সময় হতে সাহ্রী পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত অন্তত ০২ (দুই) লিটার পানি পান) করুন।
- অত্যধিক গরম পরিবেশে কাজ না করা। যদি করতে হয়, সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পরপর ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম গ্রহণ করুন।
- আবদ্ধ পরিবেশে কাজ না করা। কাজ করার জায়গায় বাতাস চলাচল করতে পারে এরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা (যেমন- পায়খানা থেকে বের হয়ে এবং খাবার আগে হ্যান্ড ওয়াশ/ সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নিয়মিত নখ কাটা, পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করা এবং নিয়মিত গোসল করা) নিশ্চিত করুন।
- অতিগরমে তৈলাক্ত ও পঁচাবাসি খাবার গ্রহণ বর্জন করুন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হতে খাবার গ্রহণ করা হতে বিরত থাকুন।
- নিরাপদ পানি পান করুন।
- সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
- শিশুদের জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ান।
- সম্ভব হলে রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন।
- স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। বিশেষ করে সংক্রামক রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- যদি ডাইরিয়া বা বমি শুরু হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ খাবার স্যালাইন খাওয়া শুরু করুন এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
পানিশূন্যতা কিভাবে পূরণ করা যায়
ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ লবণ ও পানি বের হয়ে যায় ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এসময় শরীরের পানিশূন্যতা রোধের জন্য নিম্ন বর্ণিত দু’টি পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে:
- খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো।
- রোগীর বেশি পানিশূন্যতা হলে অথবা খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানোর পরও যদি পানিশূন্যতা না কমে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিরার মধ্যে (ইন্ট্রাভেনাস) স্যালাইন দিয়ে পানিশূন্যতা পূরণ করতে হয়।
খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানোর নিয়ম
- ডায়রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে দেরি হলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকবে।
- পাতলা পায়খানা ও বমির পরিমাণ মোটামুটি আন্দাজ করে কমপক্ষে সেই পরিমাণ স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
- বমি হলেও স্যালাইন খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। অনেক সময় স্যালাইন খওয়া মাত্রই বমি হতে পারে। এক্ষেত্রে অল্প অল্প পরিমাণে স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
- যতোদিন পর্যন্ত পাতলা পায়খানা চলতে থাকবে ততোদিন পর্যন্ত স্যালাইন খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। তবে ২ দিনের বেশি ডায়রিয়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- শিশুদের ক্ষেত্রে অল্প অল্প করে চামচ দিয়ে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তবে শিশুকে শোয়ানো অবস্থায় পানি, দুধ বা স্যালাইন খাওয়ানো যাবে না। শিশুকে কোলে নিয়ে অথবা মাথা কিছুটা উচু করে খাওয়াতে হবে।
- বাজার হতে প্যাকেট স্যালাইন কিনে স্যালাইন তৈরি করলে তা ১২ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়। এক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা অনুযায়ী স্যালাইন বানাতে হবে ও খাওয়াতে হবে। তবে বাড়িতে তৈরিকৃত স্যালাইন মাত্র ৬ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়।
- স্যালাইন খাওয়ানোর পরও যদি রোগীর অবস্থা খারাপ হয়, যেমন পেট ফুলে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, নিস্তেজ হয়ে পড়া, শ্বাস কষ্ট বা হাত-পা খিচুনি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে রোগীকে নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
খাওয়ার স্যালাইন তৈরি করা যায় কিভাবে
রোগীকে যে কয় ধরণের স্যালাইন খাওয়ানো যায় তার মধ্যে লবণ-গুড়ের স্যালাইন, প্যাকেট স্যালাইন (ওরাল স্যালাইন) এবং চালের গুঁড়োর স্যালাইন উল্লেখযোগ্য।
প্যাকেট স্যালাইন
বর্তমানে খাওয়ার স্যালাইন প্যাকেটে তৈরি অবস্থায় বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। প্যাকেটের নির্দেশ অনুসারে আধা কেজি পরিষ্কার/ ফুটানো ঠাণ্ডা খাওয়ার পানিতে এক প্যাকেটের সবটুকু গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে খাওয়ার স্যালাইন তৈরি করা যায়। এ স্যালাইন সাধারণত ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। রপর প্রয়োজন হলে পুনরায় স্যালাইন বানাতে হবে।
লবণ-গুড়ের স্যালাইন
একটি পরিষ্কার পাত্রে আধাকেজি পরিষ্কার বা ফুটানো ঠাণ্ডা খাওয়ার পানির সাথে তিন আঙুলের (বৃদ্ধাআঙুল, তর্জনি ও মধ্যমার প্রথম ভাজ/দাগ পর্যন্ত) এক চিমটি লবণ এবং একমুঠ গুড় অথবা চিনি পরিষ্কার চামচ দিয়ে মিশাতে হবে। বাড়িতে বানানো এ স্যালাইন ৬ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়া যায়। এরপর প্রয়োজন হলে পুনরায় বানাতে হবে।
চালের গুঁড়ার স্যালাইন
একটি পরিষ্কার পাত্রে চা চামচের ৫ চামচ চালের গুঁড়া নিন। চালের গুড়া না থাকলে একমুঠ চাল (আতপ হলে ভালো হয়) ১০/১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে তারপর পিষে নিন (বাড়িতে মসলা পেষার শিল-নোড়া ব্যবহার করলে তা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যেন ঝাল/মসলা না থাকে)। এবার চালের গুঁড়াকে আধা কেজি বিশুদ্ধ পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এখন আরো আধা কাপ বিশুদ্ধ পানি মেশান। চুলায় জ্বালানোর সময় বাষ্প হয়ে কিছুটা পানি কমে যাবে বিধায় এ বাড়তি পানি মেশাতে হবে। এবার চালের গুঁড়া মেশানো পানিকে চুলায় ৭ থেকে ১০ মিনিট গরম করুন দিন। গরম করার সময় অনবরত নাড়তে থাকুন। ফুটে উঠলেই অর্থাৎ বুদবুদ দেখা দিলেই পাত্রটি নামিয়ে ফেলুন। তারপর ঠাণ্ডা করে তিন আঙুলের (বৃদ্ধাঙুল, তর্জনি ও মধ্যমার প্রথম ভাজ/দাগ পর্যন্ত) এক চিমটি লবণ মেশাতে হবে। তৈরীকৃত এ চালের গুড়োর স্যালাইন ৮ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়া যাবে। তারপর প্রয়োজনে পুনরায় স্যালাইন তৈরি করতে হবে। আজকাল ওষুধের দোকানগুলোতে প্যাকেটজাতকৃত রাইস স্যালাইন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে লেখা নিয়মাবলী অনুযায়ী স্যালাইন তৈরি করতে হবে ও খাওয়াতে হবে।
তথ্যসূত্র: Nternational Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh (ICDDR,B)