অ্যালার্জি (এলার্জি) কি ?
ব্লগ লিখেছেন ইন্টার্নাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. নুর মোহাম্মদ শেখ। আপনাদের জন্য লেখাটি তুলে ধরা হলো।
বিশ্বব্যাপী দেখা সবচেয়ে সাধারণ অবস্থাগুলির একটি হল এলার্জি। এলার্জির লক্ষণগুলি অল্প হতে পারে বা কিছু লোকের মধ্যে তারা এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। 20 তম শতকের শুরুতে এটি একটি বিরল রোগ বলে বিবেচিত হয়েছিল, সাম্প্রতিক কালে এলার্জি একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য-সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। গবেষণা দেখাচ্ছে যে ইয়োরোপের জনসংখ্যার 20% মানুষের মধ্যে এলার্জি দৈনন্দিন সমস্যার সৃষ্টি করছে। তারা আশংকা করেন যে হাঁপানি বা এনাফাইল্যাকটিক রোগ তাদের আক্রমণ করবে এমন কি এলার্জেনগুলির সংস্পর্শে এসে মৃত্যুও হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য জানাচ্ছে যে কোন দেশের 10 থেকে 40% মানুষের এলার্জি আছে। একজন ব্যক্তির মধ্যে, এলার্জি সাধারণত তাদের জীবনের শীর্ষ সময়ে দেখা দেয়, যার কারণে প্রতিদিন তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। ভারতবর্ষেও এলার্জির প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে ভারতীয় জনসংখ্যার 20 থেকে 30% বিভিন্ন রকমের এলার্জি রোগে ভোগেন, যেমন হাঁপানি, রিনাইটিস, খাদ্যের এলার্জি, একজিমা, ছুলি, এনাফাইল্যাক্সিস এবং এনজিয়োইডিমা
এলার্জি কী?
আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ত্রুটি হল এলার্জি, যেখানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বহিরাগত কোন বস্তুর বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার একটি প্রতিক্রিয়া হল এলার্জি। অন্যান্য মানুষের পক্ষে সেই বহিরাগত বস্তুটি কিন্তু ক্ষতিকর নয়। স্বাস্থ্যবান মানুষের ক্ষেত্রে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জীবাণুর আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু যাদের এলার্জি রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি, ক্ষতিকর নয় এমন বহিরাগত বস্তুর, যাকে এলার্জেন বলা হয়, তার বিরুদ্ধে অতি-সক্রিয় হয়ে ওঠে। যে সব মানুষদের এলার্জি আছে, তারা একাধিক বস্তুর প্রতি সংবেদনশীল। পরিবেশগত এবং জেনেটিক কারণ উভয়ই এলার্জি রোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যালার্জি (এলার্জি) এর উপসর্গ
বিভিন্ন ধরণের এলার্জির উপসর্গগুলি হল:
ধূলা থেকে এলার্জি
· সর্দি বা বন্ধ নাক
· হাঁচি।
· চোখ লাল হয়ে জল পড়া এবং চুলকানি/
· কাশি, বুকে ঘড়ঘড় আওয়াজ, দম বন্ধ বোধ হওয়া। (আরও পড়ুন - বুকে ব্যথার কারণগুলি)
অ্যালার্জিক রাইনাইটিস
· সর্দি বা বন্ধ নাক।
· চোখে এবং ত্বকে চুলকানি।
· হাঁচি।
· ক্লান্তি এবং নাক বন্ধ থাকার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত জনিত দুর্বলতা।
ত্বকের এলার্জি
ত্বকের এলার্জির সাধারণ উপসর্গগুলি হল লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি এবং ফুলে যাওয়া। কিছু ক্ষুদ্র পার্থক্য রয়েছে যা ত্বকের অবস্থার নির্ণয়ে সহায়তা করতে পারে।
· একজিমা এবং কন্টাক্ট ডারমাটাইটিস
যাদের একজিমা আছে তাদের ত্বক প্রায়ই শুষ্ক হয়। চুলকানি হয় এবং ত্বক শক্ত হয়ে যায়। কারুর ক্ষেত্রে চুলকাতে গেলে শক্ত ত্বক ফেটে গিয়ে রস বেরোতে থাকে। এতে বোঝা যায় যে সংক্রমণ হয়েছে। বাচ্চাদের মুখে, শরীরের জোড়গুলিতে বা কানের পিছনে একজিমা হতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রে এই গুলি ছাড়াও হাত এবং পায়ে হতে পারে। কন্টাক্ট ডারমাটাইটিসের ক্ষেত্রে এই রকমের উপসর্গ দেখা দিতে পারে যে জায়গা এলার্জেন বা ধাতুর সংস্পর্শে এসেছে।
· ছুলি
ছুলি হলে ত্বক লাল হয়ে ফুলে যায়। কিছু জায়গা লাল হয়ে বিভিন্ন আয়তনে উঁচু হয়ে যায় এবং শরীরের যে কোন জায়গায় হতে পারে। এই রোগের একটি অবস্থার নাম হল এনজিয়োডিমা, যেখানে ত্বকের নিচের স্তরগুলিও প্রভাবিত হয়। চোখের চারপাশে, ঠোঁট বা গালে এটি হতে পারে। কখনও কখনও এটি যৌনাঙ্গে বা গলা বা পেটের ভিতরেও হতে পারে।
কীট-পতঙ্গ এবং পোষ্য থেকে এলার্জি
পোষ্য থেকে এলার্জির উপসর্গগুলি ধূলা থেকে এলার্জির মতন। পোষা জন্তুর সংস্পর্শে এলে এদের দেখা পাওয়া যায়। কীট-পতঙ্গ থেকে যে এলার্জিগুলি হয়, সেগুলির উপসর্গ হল:
· মুখ মণ্ডল, ঠোঁট, গলা এবং জিহ্বা ফুলে যায়।
· নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
· যেখান কীট-পতঙ্গ কামড়ায় বা হুল ফোটায় সেখানে চুলকানি, ছুলি এবং অবশেষ ছোট ফোসকা পড়ে যার ভিতরে পুঁজের মতন বস্তু থাকে।
· বমি করার ইচ্ছে, বা বমি করা।
· পেটে সংকোচন হওয়া।
খাদ্যের এলার্জি
খাদ্যের এলার্জি'র উপসর্গ খাওয়ার ঠিক পরে অথবা কয়েক ঘণ্টা পরে হতে পারে। এর উপসর্গগুলি হল ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চুলকানি, বন্ধ নাক, বমির ভাব, বমি করা, সংকোচন এবং উদরাময়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে খাদ্যের এলার্জি থেকে আর একটি গুরুতর রোগ হতে পারে, যার নাম এনাফাইল্যাক্সিস যার উপসর্গগুলি হল:
· দম বন্ধ লাগা।
· জিভ, গলা এবং ঠোঁট ফুলে যাওয়া।
· হাত এবং পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরা।