করোনার এই সময় শিশুর যত্ন
করোনা মহামারীর এই সময়ে শিশুর যত্ন নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা। আপনাদের জন্য লেখাটি নিচে তুলে ধরা হলো।
করোনাভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোধে দেশের সব স্কুল-কলেজ ছুটি দেয়া হয়েছে। শিশুরা বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছে। এই সময়ে শিশুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে, বিরক্তিবোধও হতে পারে। কাজেই শিশুদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বাড়িতে রাখুনঃ শিশুদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতেই স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। কাজেই আপনার সন্তানকে বাইরে যেতে না দিয়ে বাড়িতেই রাখুন। মার্কেট, রেস্তোরা, সিনেমা হল, আত্মীয়ের বাড়ি বা দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় এটা নয়। তাতে ঝুঁকি বাড়বে। কোচিং কিংবা নাচ-গান বা সাঁতারের ক্লাসও বন্ধ রাখতে হবে। ঘরে সীমিতভাবে শিশুদের খেলার বন্দোবস্ত করতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
কথা বলুনঃ শিশুদের অন্ধকারে না রেখে চলমান ঘটনা, সমস্যা আর নির্দেশনা নিয়ে সহজ ভাষায় ও খোলামেলা কথা বলুন তাদের সঙ্গে। তাদের কাছে সমস্যার প্রকৃত অবস্থা ব্যাখ্যা করুন। বিজ্ঞানসন্মত ও সঠিক সুত্র থেকে তথ্য নিন এবং তাদের বুঝিয়ে বলুন কেন বাড়িতে থাকতে হচ্ছে, বাইরে গেলে কি সমস্যা হতে পারে আর কিভাবেই-বা আমরা সতর্ক থাকতে পারি।
শিক্ষা দিনঃ সন্তানকে শেখান করোনা কিভাবে ছড়ায়, এর প্রতিরোধের উপায় কি। সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার নিয়ম দেখিয়ে দিন। হাত দিয়ে নাক-মুখ-চোখ স্পর্শ না করা, হাঁচি-কাশি এলে টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢাকা এবং তারপর টিস্যু যথাস্থানে ফেলা, টিস্যু না থাকলে হাতের কনুইয়ের ভাঁজে হাঁচি-কাশি দেয়ার কৌশল শেখান।
আশ্বস্ত করুনঃ এসময় পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশনে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত নানা সংবাদে শিশুরা ভীত-উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে পারে। তাদেরস আশ্বস্ত করুন। বলুন, দেশে এই সংক্রমন হচ্ছে বলে যে সবারই হবে, তা নয়। সংক্রমিত বেশির ভাগ রোগীই যে সেরে উঠে, সেটা জানান।
হাইজিন রক্ষা করুনঃ বাড়িতে বসে থাকলেই যে শিশু নিরাপদ, তা নয়। কেননা বাড়িতে প্রায়ই বাইরের লোক, গৃহকর্মীর যাতায়াত আছে। মা-বাবা নিজেরাও বাইরে কাজে যান। কাজেই বাইরে থেকে যে-ই আসুক, প্রথমে ভাল করে হাত ধুয়ে, বাইরের জামা কাপড় বদলে তারপর শিশুর কাছে যাবেন। বাইরে থেকে আনা যেকোন জিনিস স্পর্শ করলে হাত ধুতে হবে। বাড়ির মেঝে, দরজার হাতল, টেবিল, সুইচ ইত্যাদি যেসব বস্তু অনেকে স্পর্শ করে, সেগুলো বার বার সাধারন ডিটারজেন্ট ও সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখুন।
ভালো কাজে ব্যস্ত রাখুনঃ শিশুদের বিরক্তিবোধ কাটাতে তাদের সঙ্গে সময় কাটান। ঘরেই খেলায় মেতে উঠতে পারেন। সন্তানকে বই পড়তে ও গান শুনতে উৎসাহিত করুন। কিছু একটা লিখতে দিন বা কোন সৃষ্টিশীল কাজে ব্যস্ত রাখুন। সারাদিন টিভি দেখে বা গেম খেলে সময় কাটানো যাবেনা।
সতর্ক থাকুনঃ বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে, জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত তাকে আলাদা করুন। শিশুকে কাছে যেতে দেবেন না। বিদেশফেরত কাউকে দেখতে যাওয়ার দরকার নেই। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে নেয়া থেকেও বিরত থাকুন।