করোনাভাইরাসের লক্ষন ও উপসর্গ
করোনাভাইরাসের লক্ষন ও উপসর্গ নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. হিমেল ঘোষ। আপনাদের জন্য লেখাটি নিচে তুলে ধরা হলো।
বছরের যেকোনো সময়ই জ্বর হতে পারে, ঠান্ডা লাগতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, টনসিলাইটিস, ফ্যারিন্জাইটিস ইত্যাদি কারণেও জ্বার-সর্দি-কাশি দেখা দিতে পারে। অ্যাজমা, ব্রান্ক্রাইটিস, হ্যার্ট ফেইলিইর, কমিউনিটি একোয়ার্ড নিউমোনিয়ার মতো নানা কারণে কারও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। শ্বাসকষ্ট হওয়া মানেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মানেই মৃত্যু অবধারিত-বিষয়টা এমনও নয়। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য উপাত্ত বলছে, শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস মৃদু সংক্রমন করে, যা সহজেই ভালো হয়ে যায়। ৬-৭ শতাংশের ক্ষেত্রে এটি তীব্র আকার ধারন করতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে কি করবেন?
জ্বর, গলাব্যাথা, শরীরব্যাথা, শরীর ম্যাজম্যাজ ভাব, হাঁচি, সর্দি, কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিকভাবে বাড়িতে নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে অলাদা করে বিশ্রাম গ্রহণ করুন।
নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরুন। নিজের সর্দি-কাশি টিস্যু বা রুমালে নিয়ে আলাদা একটা ঢাকনা দেওয়া ডাস্টবিনে ফেলুন। পরিবারের অন্যদের থেকে ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রাখুন।
দিনে অন্তত তিনবার থার্মোমিটারের সাহায্যে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে তা লিপিবদ্ধ করুন।
জ্বরের জন্য প্রাথামিক ভাবে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ঠান্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ করে শরীর মুছে ফেলুন, ক্ষেত্রবিশেষ জলপট্টিও দিতে পারেন।
সর্দি ও খুসখুসে কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন- জাতীয় ওষুধ সেবন এবং লেবু-আদা দিয়ে তুলসী চা পান করতে পারেন। কুসুম গরম পানির সাথে এক চিমটি লবন মিশিয়ে গড়গড়াও করতে পারেন।
দু-একদিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। লক্ষ করুন দু-তিনটি শব্দ বলেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন কি না, স্বাভাবিক এর চেয়ে দ্রুত বা কষ্ট করে শ্বাস নিতে হচ্ছে কি না, শ্বাস কষ্টের জন্য দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা হচ্ছে কি না এবং পূর্ববর্তী দিনের চেয়ে শ্বাসকষ্টের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে কি না।
যদি শ্বাস কষ্ট বাড়ে বা প্রথম দু-তিনদিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হয়, তবে নিকটবর্তী সরকারী হাসপাতাল, যেমন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করে কর্তব্যরত চিকিৎকের পরামর্শ নিন বা কাউকে পাঠান। সুযোগ থাকলে ভিডিও কলের মাধ্যমে আরও বিস্তারিত ভাবে আপনার অবস্থা জানাতে পারেন।
আপনি বয়োবৃদ্ধ হলে অথবা আপনার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বৃক্ক বা যকৃৎ বিকলজনীত সমস্যা, হৃদরোগ, হাঁপানি, গর্ভাবস্থা বা দীর্ঘদিন যাবৎ ষ্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ সেবন করলে অবশ্যই তা চিকিৎসককে জানাতে ভুলবেন না।
বাড়তি তীব্র শ্বাসকষ্ট বা হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, বুকে চাপ বা ব্যাথা অনুভব করলে, ঠোঁট বা মুখমন্ডল নীল বর্ন ধারন করলে প্রস্রাবের পরিমান কমে গেলে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলে বা ডায়রিয়া শুরু হলে বিলম্ব না করে ৩৩৩, ১০৬৫৫ অথবা ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত সরকার অনুমদিত করোনা আইসোলেসন সেন্টার বা সরকার নির্ধারিত করোনা চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে যোগাযোগ করে জরুরী চিাকৎসা গ্রহন করুন।
এলাকায় কারও এসব উপসর্গ দেখা দেওয়া মানেই করোনা হয়েছে বলে তাকে বা তার পরিবারকে হয়রানি করা বা তার একঘরে করার প্রবণতাকে রুখে দাঁড়ান। সচেতনতা বা সর্তকতা কাম্য, আতঙ্ক বা গুজব নয়। প্রতিটি গ্রাম বা পাড়ায় সচেতন তরুণেরা সেচ্ছাসেবী দল গঠন করে এ ধরনের সমস্যায় এগিয়ে আসতে পারেন। সঠিক স্থানে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।