করোনাভাইরাস ও সেলফ আইসোলেশন



আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন বর্তমান সময়ের বেশ আলোচিত দুটি শব্দ। প্রায় প্রতিদিনের আলোচনায় এই শব্দ দুটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমাদের সাধারন মানুষের কাছে শব্দ দুটির অর্থ প্রায় একই হলেও, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের মানে সম্পূর্নই আলাদা। চলুন জেনে নিই সেলফ আইসোলেশন কি, এবং এ সময় কি কি করনীয়।
সেলফ আইসোলেশন কি?
সেলফ আইসোলেশন হচ্ছে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস থেকে সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার, বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য একটি কার্যকরী প্রতিরোধমূলক উপায়। বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তি বা করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, এমন ব্যক্তির জন্যই ১৪ দিনের সেলফ আইসোলেশন প্রযোজ্য।
আমরা সবাই জানি যে আমরা একটি দূর্যোগপূর্ন সময় পার করছি, এ সময় আমাদের এধরনের প্রতিরোধ্মূলক ব্যবস্থা শুধু আমাদেরকেই না, বরং আমাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও সর্বোপরি দেশের সকলকে এই ভাইরাসজনিত রোগ থেকে নিরাপদ রাখতে পারে।
বাহিরের লোকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তি যদি বাসায় অবস্থান করেন, সেক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্যরা যারা বিদেশ ভ্রমন করেননি বা অন্য কোন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেননি, তাদের কাছ থেকে অন্তত ১ মিটার বা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে; এবং আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার প্লেট, বাটি, কাপ, চামচ, গ্লাস, তোয়ালে, বালিশ ও অন্যান্য ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র ব্যবহার করা যাবেনা। আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র ব্যবহারের পরপর সাবান দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
সেলফ আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস আক্রান্তের লক্ষণ দেখা দিলে, যেমন – কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দেরি না করে আইইডিসিআর এর জরুরি হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
সাধারন পরামর্শ
১. সেলফ আইসোলেশনের ক্ষেত্রে অন্তত ১৪ দিন বাসায় অবস্থায় করতে হবে।
২. আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য আপনার নিয়োগকর্তা, বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যের কাছে সাহায্য নিন।
৩. বাড়িতে থেকেই কাজ করার জন্য আপনার নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন।
৪. কেনাকাটার জন্য অনলাইন শপগুলোর সাহায্য নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে পন্য ডেলিভারি আপনার বাসার দরজা পর্যন্ত রেখে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করুন।
৫. বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগের জন্য ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করুন; সরাসরি যোগাযোগ বা সংস্পর্শ পরিহার করুন।
৬. সেলফ আইসোলেশনের সময় শরীর ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করতে পারেন।
৭. ১৪ দিনের সেলফ আইসোলেশনের সময় যেকোন ধরনের গণপরিবহন, ট্যাক্সি বা এ জাতীয় বাহন পরিহার করুন।
৮. সেলফ আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় পরিবারের অন্যান্যদের সাথে নিবিড় সংস্পর্শ পরিহার করুন, এমনকি একই বিছানা, কাপড় ও খাবার শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
৯. ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সময় অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে পারেন।
১০. অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
১১. কাশি ও হাঁচি দেয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন অথবা হাতের কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকুন।
১২. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দিন এবং সাথে সাথে হাত ধুয়ে ফেলুন।
১৩. শিশুদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলুন।
১৪. বিভিন্ন দেশের আক্রান্ত ব্যক্তিদের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি যেমন হৃদরোগে আক্রান্ত, ডায়াবেটিস আছে কিংবা উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন, এমন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে আছেন। এক্ষেত্রে তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ পরিহার করুন।
কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যথাযথ যত্নের প্রয়োজন। অসুস্থ মানুষদের জন্য প্রয়োজন সর্বোচ্চ সহায়তামূলক সেবা।
ভাইরাসের কোন উপসর্গ দেখা দিলে সরকারের রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাথে যোগাযোগ করুন এবং আসুন আমরা সবাই উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে সর্বদা খেয়াল রেখে আমাদের জীবন যাপন করি তাহলে আমরা সহজেই এরোগ থেকে অনেকটা নিজেদের দূরে রাখতে পারব।
স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক এরকম আরও তথ্য পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন ডাক্তারভাই অ্যাপে।