মাল্টিভিটামিনের বড়ি নয়, খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার
বর্তমানে মানুষের মধ্যে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার প্রবণতা বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডাক্তারের কাছে গেলেই রোগীর আবদার ভিটামিনের বড়ি। ক্ষতিকর এসব ট্যাবলেট না খেয়ে সহজে ও সস্তায় এই মাল্টিভিটামিন পাওয়া সম্ভব। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
খাদ্য মানুষের জীবনের একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়। উন্নত বিশ্বে প্রায় ৮২ শতাংশ বয়স্ক নারী-পুরুষ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সম্পূরক বা বড়ি খেয়ে থাকেন। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার প্রবণতা বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডাক্তারের কাছে গেলেই আমাদের চাওয়ার বিষয় হলো ভিটামিনের বড়ি। আমাদের আশপাশে থাকা বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলমূলে ছড়িয়ে রয়েছে এসব মাল্টিভিটামিন অথচ না জানা থাকার কারণে আমরা একদিকে যেমন সহজলভ্য এসব খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি আহরন হতে বঞ্ছিত হচ্ছি অন্যদিকে ঔষধের দোকান থেকে মাল্টিভিটামিন কিনতে গিয়ে অযথা নষ্ট করছি মুল্যবান টাকা পয়সা। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘসময় কৃত্রিম এসব ভিটামিন এ, ই অন্যান্য ভিটামিন ট্যাবলেট খেলে তা শরীরের জন্য অনেক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। আসুন জেনে নিই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিভিন্ন ভিটামিনের বড়ি খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সমূহ এবং কিভাবে সস্তায় ও সহজেই আমাদের চারপাশের স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েই মাল্টিভিটামিনের ঘাটতি মিটাতে পারি ।
মাল্টিভিটামিন ও অন্য ভিটামিনের বড়ির ক্ষতিকর দিকসমূহ
শরীরের জন্য ভিটামিনের গুরুত্ব অপরিসীম। দেহের পর্যাপ্ত বৃদ্ধি ও সুস্থ থাকার জন্য প্রতিটি ভিটামিনের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। একারণে অনেকে নিয়মিত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়ম করে ভিটামিন ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্রতিদিন পাঁচ ধরনের ভিটামিন ট্যাবলেট খেলে লাভের চেয়ে শরীরে ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিম্নে এসব ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ভিটামিন এ ট্যাবলেট
ভিটামিন এ আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিটামিন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউশনের ভাষ্য অনুযায়ী ধূমপায়ী ব্যক্তি যারা নিয়মিত ভিটামিন এ ট্যাবলেট খান তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন এ ট্যাবলেট খেলে লিভারের উপরও তা প্রভাব পড়তে পারে।
ভিটামিন বি ৬ ট্যাবলেট:
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেকে ভিটামিন বি ৬ ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। কিন্তু গবেষণা অনুযায়ী দিনে ১০ মিলিগ্রামের বেশি এই ভিটামিন সম্বৃদ্ধ ট্যাবলেট খেলে তা নার্ভের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ভিটামিন সি ট্যাবলেট:
ভিটামিন সি শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভিটামিন। এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ যেকোন ধরনের রোগ সংক্রমণ সারিয়ে তুলতে দারুন কার্যকরী ভুমিকা রাখে। তবে গবেষণা অনুযায়ী যারা অতিরিক্ত ভিটামিন সি ট্যাবলেট খায় তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুন বেড়ে যায়।
ভিটামিন ই ট্যাবলেট:
ভিটামিন ই হল এক ধরনের উপকারি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের ভিতরে জমতে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। যার ফলে অসময়ে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা অনুযায়ী দেখা গেছে যে যারা দীর্ঘদিন ভিটামিন ই ট্যাবলেট খান তাদের ধীরে ধীরে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট:
কিছু ক্ষেত্রে যেমন গর্ভাবস্থা, প্রসব পরবর্তী বাচ্চা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের শরীরে মাল্টি ভিটামিনের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এই সময় যদি মা ঠিকমতো খাবার না খান এবং তার শরীরে ঘাটতি হয় তখন ডাক্তারগণ মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট এর মাধ্যমে তা পূরণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে অনেকেই সুস্থ থাকতে নিয়মিত মাল্টি ভিটামিন খান যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে কেউ যদি দীর্ঘদিন এই ভিটামিন খায় তাহলে তাঁর হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেল এর চাহিদা পূরণ করা উচিত।
বিভিন্ন ভিটামিন ও এদের সহজ উৎসঃ
ভিটামিনের নাম | প্রধান উৎসসমূহ |
ভিটামিন- A | উদ্ভিজ্জ উৎস- গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, গাজর, লাল শাক, বাধা কপি, মটরশুটি ইত্যাদি। প্রানীজ উৎস- কড, হাঙর প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছের যকৃত নিঃসৃত তেল, দুধ, ডিম মাখন, পনির ইত্যাদি। |
ভিটামিন- B or B Complex | উদ্ভিজ্জ উৎস- ঢেঁকি ছাটা চাল, লাল আটা, টম্যাটো, পালং শাক, অংকুরিত ছোলা, মটরশুটি, পেয়াজ ইত্যাদি। প্রানীজ উৎস- মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি। |
ভিটামিন- C | উদ্ভিজ্জ উৎস- সব রকমের টাটকা ও টক ফল, যেমন- লেবু, আম,আমকলি টাটকা শাক ইত্যাদি । প্রানীজ উৎস - মাতৃ-স্তন দুগ্ধ , ডিম ইত্যাদি। তবে ফোটানো দুধে ভিটামিন- C থাকে না। |
ভিটামিন- D | দুধ, মাখন, ডিম, ইলিশ মাছের তেল, কডলিভার অয়েল, অস্থি মজ্জা, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি (সূর্যের আলো) তে ভিটামিন- D পাওয়া যায়। |
ভিটামিন- E | বাদাম, শস্য বীজ, তুলার বীজের তৈল, সবুজ শাক-সবজি, লেটুস ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- E পাওয়া যায়। |
ভিটামিন- K | বিভিন্ন প্রকার ডাল, সবুজ শাক-সবজি, গাজর ও টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- K পাওয়া যায়। |
মাল্টিভিটামিন যুক্ত মিনারেলের ট্যাবলেট কখনো সুষম খাবারের পরিপূরক হতে পারেনা। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ শরীরের জন্যও ক্ষতিকর। কিছু ক্ষেত্রে এসব ট্যাবলেট ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা মোকাবিলায় কিছুটা সাহায্য করলেও শরীরে ভিটামিনের অভাব না থাকা সত্যেও এসব ট্যাবলেট খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। সর্বোপরি ভিটামিন ট্যাবলেটের ওপর নির্ভর না করে, প্রতিদিনের খাবার থেকে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করাটাই উত্তম।