করলার দশটি বিষ্ময়কর স্বাস্থ্যগুণ
তেতো বলে অনেকেই করলা খেতে চাননা। সবজিটি ভিটামিন, বিটা-ক্যারোটিন, সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর। বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমাতেও এর জুড়ি নেই।তেতো হলেও সবজিটির উপকারী গুণের শেষ নেই। চলুন আজ করলার পুষ্টি ও দশটি স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে জেনে নিই।
তেতো বলে করলার স্বাদ নিতে অনেকেই অনিহা প্রকাশ করেন। তবে করলা তেতো হলেও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। করলার রস শরীরের জন্য অনেক বেশী উপকারী। স্বাদে না হলেও গুণ বিচারে সবজিকে গুরুত্ব না দিয়ে কোনো উপায় নেই। করলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি। এছাড়া সবজিটি বিটা-ক্যারোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর। গবেষণায় দেখা গেছে যে বিভিন্ন প্রকার রোগের প্রকোপ কমাতে করলার জুড়ি নেই। চলুন জেনে নিই করলার দশটি পুষ্টি ও স্বাস্থ্য গুনাগুণ সম্পর্কে।
করলার বিভিন্ন পুষ্টি গুনাগুণ
পুষ্টিগুণের বিবেচনায় করলা অনেক সমৃদ্ধ একটি সবজি। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ সহ সারাতে করলায় রয়েছে অসাধারণ পুষ্টি গুণাগুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় রয়েছে খাদ্যশক্তি ১৭ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেটস ৩.৭০ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ফাইবার ২.৮০ গ্রাম, ফোলেট ৭২ মাইক্রো গ্রাম, নিয়াসিন ০.৪০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৪৭১ আইইউ, ভিটামিন সি ৮৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৫ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ২৯৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম।
করলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যগুণ
করলা তেতো হলেও অনেকের কাছে প্রিয় একটি সবজি। ভর্তা, ভাজি আর তরকারি বিভিন্ন ভাবেই সবজিটি খাওয়া যায়। মানবস্বাস্থ্যের জন্য এই সবজির উপকারী গুণও নেহাত কম নয়। নিম্নে করলার এমন দশটি স্বাস্থ্য গুনাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ
এই সবজিটিতে রয়েছে ক্য়ারেটিন নামে একটি উপকারী উপাদান রয়েছে যা রক্তের সুগারের মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ডাক্তারগণ ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এই ঘরোয়া চিকিৎসাটির সাহায্য নিতে পরামর্শ দেন। যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে করলার রস থেকে অনেক উপকার পেতে পারেন।
২। রক্ত পরিশুদ্ধ রাখা
সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে রক্ত পরিশুদ্ধ থাকা জরুরী। আর এজন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্নের। আর এই কাজটি করতে আপনি প্রতিদিন করলার রস খাওয়া শুরু করতে পারেন কারণ এই পানীয়টিতে "ব্লাড পিউরিফাইং এজেন্ট" উপস্থিত থাকে যা রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩।পেটের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমানো
করলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি নানাবিধ স্টমাক ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবজিটির ফাইবার শরীরে প্রবেশ করা মাত্র গ্যাস্ট্রিক জুসের ক্ষরণ বেড়ে যায় যার ফলে একাধিক পেটের রোগের লক্ষণ কমতে শুরু করে।
৪। দেহের ওজন কমানো
যাদের অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় রয়েছে তারা এখন থেকেই করলার রস খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন। যদি খাবার ঠিকমতো ঠিক মতো হজম হতে থাকে, তাহলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমার সুযোগ পায় না, তাই দেহের ওজন হ্রাস পেতে শুরু করে। করলার রস নিয়মিত খেলে অল্প দিনেই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এছাড়া এই পানীয়টি লিভার ফাংশন বাড়ানোর পাশাপাশি হজম ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৫। পাইলসের কষ্ট দূর করতে
যাদের পাইলসের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল করলার রস খেতে পারেন যা আপনাকে খুব অল্পদিনের মধ্যেই পাইলসের যন্ত্র্না থেকে রেহাই দিবে। এছাড়া করলা গাছের মূল বেটে নিয়ে সেই পেস্ট পাইলসের উপর লাগালেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
৬। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
যারা প্রতিদিন সকাল বেলায় করলার রস খান তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তার বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বা ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। এতে করলার রস পানকারী বিভিন্ন প্রকার অসুখের হাত থেকে রক্ষা পান।
৭। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে
করলার রসে থাকে প্রচুর পরিমানে বিটা-ক্যারোটিন, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যারা আপনার মুল্যবান চোখ ভালো রাখতে চান তারা নিয়মিত করলা খাওয়ার পাশাপাশি করলার রস খান।
৮।পিত্ত শ্লেষ্মাজনিত রোগ সারাতে
অনেক সময় ম্যালেরিয়া জ্বর হলে পিত্ত ঠিকমতো কাজ করতে পারেনা এবং শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ যেমন শরীর কামড়ানি, পিপাসা ও বমি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে করলা পাতার রস এক চা চামচ একটু গরম করে অথবা গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার করে রোগীকে খাওয়ালে তার জ্বরের উপসর্গগুলো চলে যাবে ও জ্বরের প্রকোপও কমে যাবে।
৯। পেটে গুঁড়ো কৃমি দূর করতে
যেসব বাচ্চাদের পেটে গুঁড়ো কৃমির সমস্যা রয়েছে তাদের সকালে ও বিকেলে আধা চা চামচ করে করলার পাতার রস অল্প পানি মিশিয়ে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। আর রোগী বয়স্ক হলে ১-২ চা চামচ পরিমাণ দিতে হবে।
১০। ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে
করলায় রয়েছে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধী কিছু উপাদান যা দেহে সেলের বৃদ্ধি আটকিয়ে দেয়। এর ফলে এই মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। এছাড়া অ্যানিমিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসাতেও এই সবজিটি দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে।
এখন বাজারে সারাবছরই করলা পাওয়া যায়। ভাজি, ভর্তা ও ঝোলে করলার জুড়ি নেই। তিতা হলেও সবজিটি খেতে কিন্তু সুস্বাদু। তাই অনেকেই সবজিটি খেতে ভালবাসে। তবে স্বাদের চেয়ে ওষুধের গুণই করলাকে সবার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তাই চলুন সবাই এর ঔষধি গুনাগুণকে মাথায় রেখে আজকে থেকেই সবজিটি নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করি এবং নানা প্রকার অসুখ বিসুখ থেকে নিজেকে দূরে রাখি।