থানকুনি পাতার ১০ টি বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা
বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে থানকুনির ব্যবহার বহু পুরনো। এই পাতার রসে রয়েছে অনেক রোগ নিরাময়ের অবিশ্বাস্য্ ক্ষমতা। নিয়মিত এই পাতা বা এর রস খেলে শরীরের কর্মক্ষমতা বহুগুণ বাড়ে। চলুন এই পাতার কিছু বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
ছোট্ট প্রায় গোলাকৃতি থানকুনি পাতার রয়েছে অনেক ভেষজ ও ওষুধি গুণাগুণ। গ্রামাঞ্চলে আদি আমল থেকেই বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ে এই পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। এই পাতার রস রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়। কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খান, তাহলে তাঁর মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের কর্মক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। চলুন জেনে নিই থানকুনি পাতার কতিপয় বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
১। হজম ক্ষমতার উন্নতি সাধনে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে থানকুনি পাতায় রয়েছে একাধিক হজমে সহায়ক উপাদান যা দেহে অ্যাসিডের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে দেহে খাবার হজম সঠিকভাবে হয়। এর ফলে দেহে বদ-হজম কিংবা গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। এছাড়া থানকুনি পাতা দেহে হজম ক্ষমতারও উন্নতি সাধনে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখে।
২। চুল পড়ার মাত্রা কমতে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন থানকুনি পাতা খান তাদের মাথার স্কাল্পের ভেতরে যথেষ্ট পুষ্টি সাধনের ফলে মাথা থেকে চুল পড়ার মাত্রা অনেক কমে যায়। তাই যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে তারা তা কমাতে থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। এজন্য কিছু থানকুনি পাতা থেঁতো করে এর সঙ্গে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। পেস্টটা চুলে লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। আনুমানিক ১০ মিনিট পরে চূল ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্যবহার করলে অবিশ্বাস্য্ উপকার পাবেন।
৩। শরীরকে টক্সিক উপাদান মুক্ত রাখতে
আমাদের শরীরে নানাভাবে ক্ষতিকর টক্সিন প্রবেশ করে। পরবর্তিতে এই টক্সিন রক্তে মিশে যায় এবং রোগের সৃষ্টি করে। তাই কেউ যদি প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রসের সাথে ১ চামচ পরিমান মধু মিশিয়ে খায় তাহলে তাঁর রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলি বেরিয়ে গিয়ে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
৪। শরীরের ক্ষত চিকিৎসায়
থানকুনি পাতার মধ্যে স্পেয়োনিনস সহ অন্যান্য উপকারি উপাদান বিদ্যমান যা শরীরের ক্ষত প্রতিরোধে খুবই সহায়ক। তাই দুর্ঘটনাজনিত কারণে শরীরের কোথাও কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতা বেঁটে লাগিয়ে দিলে ক্ষত খুব দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করবে।
৫। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে
ত্বকের ভিতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে থানকুনি পাতায় অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্য়াটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিকাল রয়েছে। এসব উপাদান ত্বকের পুষ্টি সাধনের পাশাপাশি বলিরেখা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের ঔজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় তাই কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসে।
৬। আমাশয়ের সমস্যা দূর করতে
আমাশয়ের সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতার ভুমিকা অনস্বীকার্য। এজন্য টানা ৭ দিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে হবে। পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটে সেই রসের সঙ্গে অল্প পরিমাণ চিনি মিশিয়ে মিশ্রনটি দু চামচ করে দিনে দুবার খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
৭। পেটের অসুখ সহ ক্রিমি প্রতিরোধে
যেকোন ধরনের পেটের অসুখ সারাতে অল্প পরিমাণ আম গাছের ছাল, ১ টা আনারসের পাতা, হলুদের রস ও পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা ভাল করে মিশিয়ে বেটে মিশ্রনটি নিয়মিত খেলে অল্প দিনেই এ জাতীয় সমস্যা দূরীভূত হয়। ক্রিমির প্রকোপও কমাতেও এই মিশ্রনের ভুমিকা অতুলনীয়।
৮। কাশির প্রকোপ কমাতে
কাশির প্রকোপ কমাতে থাঙ্কুনি পাতার বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। এজন্য ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে অল্প পরিমাণ চিনি মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত কাশি কমে যায়। আর যদি এক সপ্তাহ এক নাগাড়ে খেতে পারেন তাহলে কঠিন কাশির সমস্যাও সেরে যাবে।
৯। জ্বরের প্রকোপ কমাতে
জ্বরের প্রকোপ কমাতেও থানকুনি পাতা খুবই কাজের। ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকেই প্রায়ই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। জ্বরের সময় তারা যদি নিয়মিত ১ চামচ থানকুনি এবং ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খান অল্প সময়েই তাদের জ্বর সেরে যাবে। পাশাপাশি শারীরিক দুর্বলতাও কমাতে সাহায্য করবে।
১০। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে
থানকুনি পাতা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতেও খুবই সহায়ক। এক্ষেত্রে একটা ঘরোয়া চিকিৎসা দারুন কাজে আসে। এজন্য আধা লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি এবং সামান্য পরিমাণে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে একটা মিশ্রন তৈরি করে সেই মিশ্রন অল্প অল্প করে প্রতিদিন সকালে খেলে সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে।
থানকুনি আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ যা খুবই সহজে সর্বত্রই পাওয়া যায়। চিকিত্সার অঙ্গনে এই পাতার অবদান অপরিসীম। সকল ধরনের পেটের রোগের জন্য এটি একটি মহৌষধ। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে থানকুনি পাতার রসের তুলনা নেই। তাই সুস্থ থাকতে সবার নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।