শীতকালে সঠিকভাবে ত্বকের পরিচর্যা করার কৌশল
শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায় তাই বাইরের পরিবেশ আমাদের ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। এজন্য আমাদের ত্বক, ঠোঁট ও হাত বা পায়ের তালু ফেটে যায়। চলুন শীতে ত্বকের শুষ্কতার সমস্যা হতে বাঁচতে অর্থাৎ ত্বকের সঠিক পরিচর্যা করার কৌশল সম্পর্কে জেনে নিই।
শীতের সময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে যার ফলে বাইরের পরিবেশ ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়। এজন্য শরীরে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় আমাদের ত্বক, ঠোঁট কিংবা হাত বা পায়ের তালু ফেটে যেতে দেখা যায়। ত্বকের এই শুষ্কতার সমস্যা হতে রক্ষা পেতে ও ত্বকের ফাটা ভাব প্রতিরোধ করতে করণীয় বিষয়ে চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
শীতে আমাদের ত্বক ফেটে যায় কেন?
আমাদের শরীরের শতকরা ৫৬ ভাগই পানি দ্বারা গঠিত যার মধ্যে ত্বক নিজেই ধারণ করে শতকরা ১০ ভাগ। ত্বকে যে ঘর্মগ্রন্থি ও তেলগ্রন্থি রয়েছে তা থেকে অনবরত তেল আর ঘাম বের হয়। সাধারণত শরীরের ঘাম আর তেল মিলে দেহের ওপর তেল ও পানির মিশ্রণের একটি আবরণী তৈরি করে, যা আমাদের দেহকে শীতল রাখে। এছাড়া এটি আমাদের ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষাসহ ফাটা ভাব প্রতিরোধ করে। যেহেতু শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে তাই পানি ত্বক থেকে বেরিয়ে আবহাওয়ায় চলে যায় ফলশ্রুতিতে ত্বক দুর্বল আর অসহায় হয়ে পড়ে। ত্বক দুর্বল হওয়ায় চামড়ায় অবস্থিত ঘর্মগ্রন্থি হতে তেল আর পানি বের হয়ে যায় এবং সেগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারেনা। এর ফলে ত্বক আগের মতো ঘাম বা তেল কোনোটাই তৈরি করতে পারে না। এজন্য ত্বক ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে এবং শরীরের চামড়ার বিভিন্ন অংশ ফেটে যায়।
শীতের সময় ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায়সমুহ
শীতের সময় ঠোঁটের যত্ন
শীতের সময় কমবেশি সবারই ঠোঁট ফাটে। জীবের আদ্রতা বাড়াতে জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়। এর ফলে ঠোঁট ফাটা আরো বেড়ে যেতে পারে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তৈলাক্ত প্রলেপ যেমন ঠোঁটে ভেসলিন, লিপজেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি ব্যবহার করলে সহজেই ফাটা নিয়ন্ত্রণ করে ঠোঁট ভালো রাখা যায়।
শীতে সময় পায়ের যত্ন
শীত এলে অনেকেরই পা ফাটার প্রবণতা বেশী লক্ষ্য করা যায়। যাদের এই সমস্যা বেশী হয় তারা তাদের পা কিছুক্ষণ অ্যাক্রোফ্লেভিন দ্রবণে ভিজিয়ে রেখে তারপর পা ভালোভাবে শুকিয়ে যাওয়া মাত্রই ভেসলিন মাখলে অনেক উপকার পেতে পারেন। বর্তমানে বাজারে অনেক অনেক প্রকারের ময়েশ্চারাইজার ক্রিম পাওয়া যায় যা আসলে তেল আর পানির একটি মিশ্রণ। এছাড়া গ্লিসারিন ও পানি মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মাখলেও পায়ের ফাটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আর পায়ের ফাটা যদি অপেক্ষাকৃত কম থাকে তাহলে পায়ের ফাটা স্থানে অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল ব্যবহার করলেও অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।
শীতকালে ত্বকের যত্নে কিছু জরুরী টিপস
১। নিয়মিত হাল্কা গরম পানিতে গোসল করুন
এমনিতেই শীতের সময় ঠাণ্ডা ব্যবহার অনেক কষ্টকর।এছাড়া হালকা গরম পানি যা ত্বকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে তৈলাক্তভাব বজায় রাখতে সহায়তা করে। তাই শুধু মুখ বা শুধু হাত ধোয়া নয়, গোসল করতে হালকা গরম পানি ব্যবহার করা উচিত।
২। নিয়মিত ত্বকে ক্রিম বা লোশন লাগান
শীতে যখন তখন শরীরে ক্রিম না মেখে বরং গোসলের পর ক্রিম মাখুন। গোসলের পর ক্রিম মা্খলে তা শরীরে অনেকক্ষণ আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তাই ত্বক সুস্থ রাখতে নিয়ম করে গোসলের পরই ক্রিম লাগান।
৩। শীতের উপযোগী ও সঠিক ক্রিম বেছে নিন
শীতের সময় অনেককেই বারবার পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই পেট্রোলিয়াম জেলি কিছু সময় পর পর ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। তাই শীতকালে অয়েল বেসড বা তৈলাক্ত ক্রিম মাখাই ভালো। এতে ত্বক আদ্র থাকবে।
৪। শীতে শরীরকে যথা সম্ভব আদ্র রাখুন
অনেকেই শীতকালে ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে রেহাই পেতে ঘরে হিটার ব্যবহার করে থাকেন যা পরিবেশকে গরম করলেও বাতাসকে অনেক খুব শুষ্ক করে দেয়। তাই ঘরকে উষ্ণ ও আর্দ্র রাখতে হিটারের বদলে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। তীব্র রোদের মধ্যে বের হওয়ার আগে মুখে অবশ্যই সানস্ক্রিন মাখা উচিত। এছাড়া অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় হাতে হাতমোজা ও মাথায় রুমাল ব্যবহার করা উচিত।
৫। নিয়মিত পানি পান করুন
শীতকালে ঠাণ্ডার জন্য আমরা খুব কম পানি পান করি। তবে কম পানি পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট পানি পান করা খুবই জরুরি। তাই শীতের সময় পানি কিছুটা গরম করে পান করা যেতে পারে। পানির সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
৬। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম মাখুন
শীতকালে শরীর আদ্র রাখতে প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। শীতে তাই হবে। আমাদের শরীরের যেসব অংশ বেশি শুষ্ক থাকে যেমন হাত, পা, হাঁটু, কপাল ইত্যাদিতে রাতে শোয়ার আগে ভালো করে ক্রিম মেখে তারপর মোজা পড়ে নিলে সকাল পর্যন্ত শরীরে আদ্রতা বজায় থাকে।
শীতের শুষ্কতা ত্বক থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয় বলে ত্বক হয়ে পরে শুষ্ক ও রুক্ষ। এজন্য শীতে ত্বক সুরক্ষার প্রধান উপায় হলো ত্বকের পর্যাপ্ত ময়েশ্চাইরেশন। যতই আরাম লাগুক অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল না করাই ভালো। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে পরে। এছাড়া ত্বক সুস্থ রাখতে সঠিক ক্রিম নির্বাচনও খুবই গুরুত্বপুর্ণ। এছাড়া শীতে ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং সব্জিও খাওয়া উচিত।