মেথির ১০টি আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য গুনাগুণ
মেথিকে- মসলা, খাবার, পথ্য এই তিনটিই বলা যায়। এর পাতা শাক হিসাবেও জনপ্রিয়তা রয়েছে। যুগ যুগ ধরে কবিরাজী চিকিৎসায়ও এর ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথি বীজে শরীরের জন্য অনেক উপকারি উপাদান রয়েছে। চলুন জেনে নিই এর কিছু আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য গুনাগুণ সম্পর্কে।
মসলা, খাবার, পথ্য মেথিকে এই তিনটিই বলা যায়। এর পাতা শাক হিসাবে গ্রামের মানুষের একটি প্রিয় খাবার। যুগ যুগ ধরে কবিরাজী ও লোকজ চিকিৎসায় মেথির বীজ ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া মশলা অর্থাৎ পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান হিসাবেও এটি ব্যবহার করা হয়। মেথি বীজে রয়েছে নানা উপকারি উপাদান যা শরীরের অনেক উপকারে লাগে। চলুন জেনে নিই মেথির আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য গুনাগুণ সম্পর্কে।
মেথির বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রোটিন,ভিটামিন-সি, পটাসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, কপার, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম প্রভৃতির অনন্য এক উৎস হচ্ছে মেথি। ১০০ গ্রাম মেথি শাক থেকে ৫০ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া ছাড়াও ১.৫ গ্রাম (৭%) স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ৬৭ মিলিগ্রাম (২%) সোডিয়াম, ৭৭০ মিলিগ্রাম (২২%) পটাশিয়াম, ৫৮ গ্রাম (১৯%) কার্বোহাইড্রেট এবং ২৩ গ্রাম (৪৬%) প্রোটিন পাওয়া যায় যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকারি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। নিয়মিত মেথি খাওয়ার নানা উপকারিতা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
১। শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে
মেথিতে থাকে স্টেরিওডাল সেপোনিনস নামক উপাদান যা শরীরে থাকা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে গ্লেকটোম্যানান নামক আরেকটি উপাদানের খোঁজ পাওয়া গেছে যা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তে লবনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে যার ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি পান করলে হঠাৎ করে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।
২। রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে
যাদের কম বয়সেই রক্তে চিনির পরিমাণ অর্থাৎ ব্লাড সুগার ঊর্ধমুখি থাকে তারা নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খেতে পারেন। এটি তাদের শরীরে গ্লেকটোমেনানের পরিমাণ বাড়ানো ছাড়াও দেহে শর্করার শোষণের পরিমাণ কমিয়ে আনে। এতে রক্তে সুগার লেভেল বাড়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। এছাড়া মেথিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় ফলে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় না।
৩। হজম শক্তি বৃদ্ধিতে
সহজ উপায়ে দেহে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে মেথি বীজ দারুণ ভুমিকা রাখতে পারে। মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাওয়েল মুভমেন্টে উন্নতি করে হজমে অনেক সহায়তা করে থাকে। তাই কনস্টিপেশনের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খাওয়া যেতে পারে।
৪। দেহের ওজন কমাতে
প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করলে তা শরীরের স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে। কেউ যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করে তাহলে তাঁর শরীরে ধীরে ধীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়তে থাকে। এতে একদিকে যেমন তাঁর ক্ষিদে কমে যায় অন্যদিকে অতিরিক্ত খাবার গ্রহনেও লাগাম পরে। এতে শরীরের ওজন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে।
৫। জ্বরের প্রকোপ কমাতে ও সর্দি-কাশি সারাতে
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় জ্বর হয়। এ অবস্থায় কেউ যদি এক গ্লাস মেথি বীজের পানি পান করেন তাহলে অনেক উপকার পেটে পারেন। মেথিতে বেশ কিছু উপকারি উপাদান রয়েছে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অনেক বৃদ্ধি করে এবং দ্রুত জ্বরের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া সর্দি-কাশি সারাতেও ঘরোয়া চিকিৎসা হিসাবে এর বিকল্প নেই বললেই চলে।
৬। চুল পড়া রোধে
বহুকাল ধরে চুল পড়া রোধে মেথির ব্যবহার হয়ে আসছে। স্বাস্থ্যহীন চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত খাওয়া ছাড়াও বেটে মাথায় দেওয়া যেতে পারে। এজন্য মেথি বাটা নারিকেল তেলের মধ্যে সারা রাত চুবিয়ে রেখে সকালে চুলে মেখে এর ঘণ্টাখানেক পর গোসল করে ফেললে যথেষ্ট উপকার পাওয়া সম্ভব।
৭। ত্বক উজ্জ্বল রাখতে
রূপচর্চায়ও মেথির ভুমিকা অপরিসীম। চেহারায় বলিরেখা দেয়ার জন্য দায়ী নানা ক্ষতিকর উপাদান দূর করতে মেথির ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতেও মেথির ভুমিকা রয়েছে।
৮। খুশকি দূর করতে
অনেকের চুলে প্রচুর খুশকি হয়ে থাকে যা মাথার শুষ্ক ও মৃত ত্বকের কারণে হয়ে থাকে। খুশকির সমস্যা দূর করতে মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে বেটে পেস্ট তৈরি করতে হবে তবে চাইলে এর সাথে দই মেশানো যেতে পারে। এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগিয়ে তিরিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত এর ব্যবহারে দ্রুত খুশকি চলে যাবে।
৯। মহিলাদের ঋতুকালীন ও প্রসবজনিত সমস্যার সমাধানে
মেথিতে সাইটো-ইস্ট্রোজেন নামক উপাদান থাকে যা নারীদেহে প্রোলাকটিন নামের হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি্তে সাহায্য করে। এই হরমোন নারীদেহকে সুগঠিত করতে সাহায্য ছাড়াও ঋতুকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে খুবই কার্যকরী। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণের যন্ত্রণা কমাতে মেথির অবদান প্রমান করেছেন। তবে অতিরিক্ত খাওয়া হলে গর্ভপাত বা অপরিণত শিশুর জন্মদানের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খেতে হবে।
১০। ক্যান্সারকে দূরে রাখতে
রক্তে যদি টক্সিক উপাদানের মাত্রা বাড়তে থাকে তাহলে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। আর এই ক্যান্সারকে দূরে রাখতে মেথি বীজের রয়েছে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা। এতে থাকা ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রক্তে ভেসে বেরানো টক্সিক উপাদানগুলোকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই শরীরে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়া প্রতিরোধ করতে নিয়মিত মেথিশাক কিংবা এর বীজ খাওয়া উচিত।
গত কয়েক দশক ধরে দেশ ও বিদেশে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মেথি বীজে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন, উপকারি ফ্য়াট, ভাল কোলেস্টেরল, ডায়াটারি ফাইবার এবং আরও বেশ কিছু খনিজ এবং মিনারেল। এসব উপাদান নানাভাবে শরীরের উপকারে লাগে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত মেথির ব্যবহার করতে হবে।