বদহজমঃ জেনে নিন লক্ষণ, কারণ ও এর প্রতিকার বিষয়ে
বদহজম একটি সামান্য সমস্যা হলেও কোন কোন সময় এটি ভীষণ প্রকট হয়ে ওঠে। এটি অনেক সময় বড় ধরণের কোন অসুখের আগাম বার্তা হিসাবেও ধরা হয়। বিভিন্ন কারণে এই বদহজম হতে পারে। আসুন জেনে নিই বদহজমের বিভিন্ন কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।
বদহজম একটি সামান্য সমস্যা হলেও কোন কোন সময় এটি ভীষণ প্রকট হয়ে ওঠে। অনেক সময় এটি বড় ধরণের কোন অসুখের আগাম বার্তা হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। বিভিন্ন কারণে এই বদ হজম হতে পারে। চলুন জেনে নিই বদহজমের বিভিন্ন লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।
বদহজম কী?
বদহজম একটি বিরক্তিকর সমস্যা, যা মাঝেমধ্যে খুবই প্রকট হয়ে উঠতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় পরিপাকতন্ত্রে তেমন কোনো বড় সমস্যা না থাকা সত্যেও অনেকের খাদ্য হজমযহতে চায়না। সামান্য কিছু খেলেই পেট কামড়ায় তবে পায়খানা করলে অস্বস্তি বোধটা কমে যায়। এছাড়া অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য সহ পাতলা পায়খানা বেশি হতে পারে এ ধরনের সমস্যাকে ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রোম বা বদহজম বলা হয়। অতিরিক্ত বদহজম থেকে বুকের ব্যথাও হতে পারে। কতিপয় অভ্যাস ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি।
বদহজমের বিভিন্ন কারণ
১। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা
কোন প্রকার দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে তার প্রভাব শরীরের উপর পড়তে থাকে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, মন খারাপ বা অবসাদ এবং দুশ্চিন্তা করলে তা শরীরের হরমোনের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। আর এর ফলে শরীরে খারাপ এনজাইমের নিঃসরণ হয় যা খাদ্য হজমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।
২। খাদ্যাভ্যাসে ভুল
বদহজম হওয়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাস একটি বড় কারণ হতে পারে। অনেকেই ভালোভাবে না চিবিয়ে বড় বড় গ্রাসে খেয়ে থাকেন এবং খাবারের মাঝে বারবার পানি খেয়ে থাকেন যা বদহজম ঘটাতে পারে।
৩। ভরপেট খাওয়ার পর ব্যায়াম করা
শরীরের জন্য স্বাভাবিক কিছু ব্যায়াম উপকারি হলেও ভরপেট খেয়ে ব্যায়াম অনেক ক্ষতিকর। ভরপেটে খাবার খাওয়ার পর ব্যায়াম করলে বদহজম হতে পারে।
৪। অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ খাওয়া
স্বাভাবিক পরিমাণে ওষুধ গ্রহণ দেহের জন্য দরকারি হলেও অতিরিক্ত ঔষধ সেবন শরীরের জন্য মোটেও ভাল নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ওষুধ খেলে শরীরে এসিডের মাত্রায় তারতম্য ঘটে বদহজমের সৃষ্টি হতে পারে।
৫। ধূমপান করা
ধূমপান শুধু শরীরের ক্ষতিই করেনা বরং হজমেরও ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। সিগারেটের ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ আমাদের শরীরের ভিতরের হজম সহায়ক এনজাইমগুলোকে নিঃসরণে বাধা দেয় ফলে হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। এর ফলে অনেকক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে শরীর কোন খাবার হজম করতে পারে না।
৬। মদ্যপান:
অতিরিক্ত মদ্যপান বদহজমের সমস্যার জন্য দায়ী। বেশি মদ পান করলে তা শরীর থেকে পানি সরিয়ে কোষকে সংকুচিত করে তুলে। ফলে শরীরে পানি স্বল্পতা সৃষ্টি হয়ে বদহজম হতে পারে।
৭। অন্যান্য কারণ:
শরীরের ভেতরে জমে থাকা কিছু রযে যেমন-গ্যাস্ট্রিক, পেপটিক আলসার, গলগণ্ড ও অগ্নাশয়ের সমস্যা, গলব্লাডারে পাথর, কিডনীতে পাথর, খাদ্য নালীর অপারেশন ইত্যাদি কারণেও বদহজম দেখা দিতে পারে।
বদহজমের সমস্যা প্রতিকারে করণীয়:
- একবারে অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে ধীরে ধীরে ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। এতে পেট ফাঁপার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া একবারে বেশি না খেয়ে বারবার অল্প করে খাওয়া যেতে পারে। আবার একবারে খুব বেশি খাওয়াও ঠিক নয়।
- নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে (অন্তত ২ লিটার) পানি পান করতে হবে। তবে যাদের কিডনীর সমস্যা রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর পানি পান করা উচিত।
- খাবারে অতিরিক্ত তেল, মশলার ব্যবহার করা উচিত নয়। এছাড়া বিভিন্ন চর্বি জাতীয় খাবার যেমন, ফাস্টফুড খাওয়া সহ কোমল পানীয় পরিহার করতে হবে।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ দেহের হজমে সহায়তাকারি এনজাইম নিঃসরণে বাধা দেয়।
তাই মন থেকে হতাশা, কষ্ট, ঝেড়ে ফেলতে হবে। - অতিরিক্ত রাত জেগে থাকার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে এবং যতোটা সম্ভব সঠিক সময়ে খাবার খেতে হবে। রাতে খেয়েই শুইয়ে পড়া উচিত নয়।
- সব ধরনের মাদকদ্রব্য পরিহার সহ ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
- নিয়মিত হাটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- কোন ওষুধ খাবার পরে হজমে সমস্যা হলে তা চিকিৎসককে অবশ্যই অভিত করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একই ওষুধ দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়া যাবেনা।
- এছাড়া বছরে অন্তত একবার পুরো পেটে Ultrasonography of whole abdomen টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভালো কারণ এটি পেটে কোন লুকায়িত সমস্যা থাকলে ধরা পড়বে।
বদহজম যদিও মারাত্বক কোন সমস্যা নয় তবুও বছরের পর বছর এই সমস্যা তীব্র হতে থাকলে,অবহেলা করাটা উচিৎ হবে না। তাই নিজের প্রতি দৃষ্টি দিন। সময় মেনে চলুন। খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়বেন না। এ ছাড়া বেশি রাত করে খাবেন না। একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে খাবেন না।খাদ্যাভ্যাসে একটু পরিবর্তন এনেই আপনার হজমের সমস্যা কমিয়ে আনতে পারবেন।