গরমের সময় গর্ভবতীর যত্নে ১০-টি জরুরী টিপস
গর্ভাবস্থায় সাধারণত মহিলাদের শরীরে এমনিতেই রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। আর যদি গরমের সময় কেউ গর্ভ ধারণ করে তাহলে এই গরম আরও বেশী অনুভূত হয়। তাই গরমে তাঁরা যদি নিম্নের টিপস গুলো মেনে চলেন তাহলে অনেক উপকার পেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় সাধারণত মহিলাদের শরীরে এমনিতেই রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। আর এই গর্ভধারণ যদি হয় গরমের সময় তাহলে তার ভোগান্তি হয় অনেক বেশী। তাই এসময় গর্ভবতী নিজে ও তার আশপাশের লোকজনকে বেশী সচেতন হওয়া দরকার। তাই গরমে গর্ভবতী মায়েরা যদি নিম্নের কয়েকটি টিপস মেনে চলেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
১। প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় পানীয় পান করা
গরমের সময় প্রচুর ঘামার কারণে ড্রিহাইড্রেশন বা পানিশূনতা একটি সাধারণ সমস্যা। এই পানিশূন্যতা দূরীকরণে গর্ভবতী মাকে সারাদিন প্রচুর পানি পান করা উচিত। দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিলে শরীর অনেক দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যায়। তাই এরুপ ঘটার পূর্বেই তাঁকে প্রচুর তরল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, ফলের জুস, লাচ্ছি, লেবু মিশ্রিত পানি, দই ইত্যাদি দিতে হবে। আর প্রস্রাবের রঙ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এরুপ পানীয় খাওয়াতে থাকতে হবে। শরীর যদি অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে তাঁকে স্যালাইন পানি খাওয়াতে হবে।
২। সরাসরি রোদের সংস্পর্শ থেকে দুরে থাকা
গরমের সময় গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ করে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সরাসরি রোদের মধ্যে না যাওয়াই ভাল। তবে একান্তই যদি যেতে হয় তাহলে সানগ্লাস পড়ে ও সানস্ক্রিন প্রটেক্টেড লোশন গায়ে মেখে তারপরেই তাদের বাহিরে যাওয়া উচিত। এছাড়া ছাতা কিংবা মাথায় টুপি ব্যবহার করেও সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। আর বাড়ীতে অবস্থান কালেও খেয়াল রাখতে হবে সে যেন বেশীর ভাগ সময় ছায়ার মধ্যে থাকে। এসময় হাতে একটা পানির স্প্রে বোতল সাথে রাখা যেতে পারে যাতে গরম বেশী অনুভূত হলেই শরীরে হাল্কা পানি স্প্রে করিয়ে নেওয়া যায়।
৩। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া
গরমে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় বলে গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত বিশ্রামের দরকার হয়। এছাড়া এসময় তার পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাও জরুরী। গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা থেকেও তাঁকে বিরত রাখতে হবে। তাঁকে এসময় চুলাতে রান্নার কাজ থেকে দুরে রাখাই ভালো। অন্যজনের সাহায্য নিয়ে এসব কাজ করা ভালো। আর ঘরের বিভিন্ন কাজ যদি একান্তই তাঁকেই করতে হয় তবে সেটা সকালের দিকে করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ কারণ এসময় তুলনামূলকভাবে তাপমাত্রা কম থাকে।
৪। হালকা ও আরামদায়ক কাপড় পরা
গরমের সময় সবার পোশাকই হালকা, ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক হওয়া উচিত। পোশাকটি এমন হওয়া উচিত যাতে শরীরে প্রচুর বাতাস লাগে। এজন্য পরনের কাপড় সিনথেটিক না হয়ে সুতি কাপড় হওয়াই ভালো কারণ সুতি কাপড়ে তাপ শোষণ ক্ষমতা কম থাকে বলে গরম কম অনুভূত হয়। বিভিন্ন প্রকার কৃত্রিম কাপড় যেমন পলিস্টার কাপড়ে তাপ শোষণ ক্ষমতা কম বলে এগুলো পরিহার করাই উত্তম।
৫। গরমের সময় নিয়মিত গোসল করা
গরমের সময় বাহিরের তাপমাত্রা যেমন বেশী থাকে তেমন শরীরের তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশী অনুভূত হয়। এজন্য শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে নিয়মিত ও প্রতিদিন গোসল করা দরকার, পারলে দিনে একাধিকবার গোসল করে নেওয়া যেতে পারে বিশেষ করে ঘুমাবার পূর্বে গোসল করে নিতে পারলে শরীরের তাপমাত্রা কমে এবং আরামদায়ক ঘুম নিশ্চিত করা যায়।
৬। অল্প করে বার বার খাওয়া
গর্ভবতী মায়েদের এসময় অভ্যন্তরীন পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়া ক্রিয়া সহজ করতে একবারে বেশি না খেয়ে বার বার অল্প অল্প করে খাওয়া তার জন্য অনেক উপকারী । বারবার অল্প অল্প করে খেলে তার বিপাক ক্রিয়া সহজ হওয়ার পাশাপাশি তার শরীরের উপর চাপ কম পড়ে এবং শরীর অধিক পরিমানে তাপ উৎপাদন হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
৭। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার খাওয়া
গর্ভকালীন সময়ে খাবার দাবার হওয়া চাই বিভিন্ন মিনারেল ও ভিটামিন যুক্ত। তাই যেসব খাবারে প্রোটিন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন বেশী পাওয়া যায় যেমন নানা প্রকার ফলমূল, শাকসবজি ,ডাল,ডিম ,সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খেতে হবে। আর এসময় চর্বিযুক্ত খাবার যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলাই উচিত। এছাড়া এসময় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
৮। ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পরিত্যাগ করা
ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা,কফি পান করলে রক্তচাপ সহ দেহে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এসব পানীয় অনেকের উদ্বিগ্নতা ও বিরক্তিভাব বাড়ায়। এছাড়া এগুলো অনিয়মিত হৃদস্পন্দন সহ গর্ভবতীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে । তাই এ সময়ে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় না গ্রহন করাই গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী। এছাড়া ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় তার গর্ভের সন্তানের উপরও বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে যেমন শিশু অপরিপক্ক কিংবা স্বাভাবিক এর চেয়ে ছোট হয়ে জন্ম নিতে পারে এমনকি শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়েও জন্মানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খুব অল্প পরিমানে করা যেতে পারে।
৯। বাইরের খোলা ও বাসী খাবার না খাওয়া
বাহিরে যখন খুব গরম পড়ে তখন ক্লান্তি দূর করতে অনেকেই রাস্তার ধুলাযুক্ত খোলা খাবার দাবার ও পানীয় খেয়ে থাকেন। গরমের সময় মাছি ও পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ে এবং খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় এবং বিভিন্ন প্রকার রোগবালাই ছড়ায় যেমন কলেরা, ডায়রিয়া, জন্ডিস ইত্যাদি। তাই বিভিন্ন রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে সবাইকে বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের রাস্তার এসব নোংরা ও খোলা খাবার খাওয়া থেকে নিবৃত রাখা জরুরী ।
১০। ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক স্থানে ঘুমানো
গর্ভবতী মায়েদের শোবার ঘর ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক হওয়া জরুরী। এছাড়া তাদের নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করতে তাদের ঘরে প্রচুর বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা করা জরুরী। এসময় যতটুকু সম্ভব বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করা ভালো যা তার শরীরের ডান দিকের শিরায় চাপ কম পড়বে,এর ফলে তার দেহের নিম্নাংশ থেকে হৃদপিণ্ডে নিঃছিদ্র রক্ত প্রবাহ নিশ্চিত হবে। এছাড়া তার বিছানার চাদর সুতি কাপড়ের হওয়া চাই যাতে ঘুমানোর সময় তার গরম কম লাগে।
একজন সুস্থ মা-ই একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারে। তাই গর্ভকালীন সময়ে তাদের দরকার বিশেষ যত্ন। আর গরমের সময়ে নেওয়া প্রয়োজন বিশেষ যত্নের। এসময় একটু অসাবধানতা গর্ভবতীর নিজের ও তার অনাগত শিশুর জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই গরমের সময় কোন নারী গর্ভাবস্থায় থাকলে তার জন্য অবশ্যই বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।