কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যে ১০টি খাবার খেতে পারেন
কিডনি শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা রক্ত থেকে বাড়তি পানি ও জীবাণু বের করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এই অতি দরকারী অঙ্গটিকে সুস্থ রাখতে খেতে হবে নিয়ম মেনে। কিডনি সুস্থ রাখতে জেনে নিই যে ১০টি খাবার খাওয়া যেতে পারে।
কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা আমাদের রক্ত থেকে অতিরিক্ত পানি ও জীবাণু বের করে দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। প্রাকৃতিক ছাঁকনি হিসাবে ভুমিকা রাখা ছাড়াও এটি লোহিত রক্ত কণিকা সমুহকে উদ্দীপ্ত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে সুস্থ রাখা বিষয়ে আমরা অনেক উদাসীন। কিডনির বিষয়ে সচেতন না হলে শরীরে ভয়াবহ অবক্ষয়সহ চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ হতে পারে। তাই দেরি না করে এই বিষয়ে দ্রুত সচেতন হতে হবে এবং প্রতিদিন খেতে হবে নিয়ম মেনে। কিডনি সুস্থ রাখতে নিয়মিত ১০ টি খাবার বিষয়ে আসুন জেনে নিই বিস্তারিত।
১। পানিঃ
পানিতে ক্যালরি, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ একেবারে শূন্যের কোঠায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, একজন নারীর দিনে ৯ গ্লাস এবং পুরুষের ১৩ গ্লাস পানি খাওয়া দরকার। কিডনি ভালো রাখাসহ সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। মাত্রাতিরিক্ত পানিও শরীরের জন্য ভালো নয়। তাই প্রতিদিনের কার্যকলাপ ও কিডনির অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কি পরিমাণে পানি পান করা উচিত তা আগে থেকে জেনে নিতে হবে।
২। বাঁধাকপিঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে ক্যালরির পরিমাণ ২২, প্রোটিন ১ গ্রাম ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ৫ গ্রাম থাকে। এতে কোন ক্ষতিকর ফ্যাট বা চর্বি থাকেনা। এটি এমন একটি সবজি যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যাল থাকে। এছাড়া এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যেগুলো শরীর থেকে জীবাণু বের করে দিতে সাহায্য করে। ক্যান্সার, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ এবং মূত্রাশয়জনিত সমস্যাগুলোর প্রতিরোধক হিসেবেও এর অবদান রয়েছে। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল যেগুলো কিডনির কোন ক্ষতি করে না। তাই নির্বিঘ্নে খেতে পারেন এই সবজিটি।
৩। ফুলকপি
ফুলকপি হলো কিডনির একটি সুপারফুড। রান্নার আইটেম হিসাবে বা শুধু সেদ্ধ কিংবা গ্রিল বা সালাদে দিয়েও ফুলকপি খাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফোলেট এবং ফাইবার রয়েছে । এতে ক্যালরির পরিমাণ ২৫। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে প্রোটিন ২ গ্রাম ও কার্বোহাইড্রেট ৫ গ্রাম থাকে। এছাড়াও এতে কিডনির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু যৌগ রয়েছে সেগুলো শরীরে বিষাক্ত পদার্থ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৪। ক্যাপসিকাম
বিদেশী সবজি হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে ক্যাপসিকাম একটি জনপ্রিয় সবজি হিসাবে খাওয়া হচ্ছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৯ গ্রাম এবং ক্যালরির পরিমাণ রয়েছে প্রায় ৪৬.২। লাল রঙের ক্যাপসিকামে পটাসিয়ামের পরিমাণ কম থাকে যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এতে আরও রয়েছে ভিটামিন সি, বি৬, এ, ফলিক এসিড ও ফাইবার। লাল ক্যাপসিকামে লাইকোপিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা কয়েক রকমের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
৫। পেঁয়াজ
পটাশিয়ামের পরিমাণ কম ছাড়াও পিয়াজে রয়েছে ক্রোমিয়াম, যা চর্বি, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটকে বিপাক করতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ কিডনিকে সঠিকভাবে কার্যক্রম চালাতে সাহায্য করে। তাই পিয়াজ কিডনির জন্য অনেক উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম পিয়াজে ক্যালরি ৬৪, প্রোটিন ২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৫ গ্রাম পরিমাণ থাকে। এতে কোন প্রকার চর্বি নেই। এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড যা রক্তনালী থেকে চর্বি জাতীয় পদার্থ বের করে দিয়ে হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
৬। রসুন
পেঁয়াজের মতো রসুনও একটি শক্তিশালী ভেষজ। তাছাড়া এটি খাবারের স্বাদও বাড়ায়। প্রতি ১০০ গ্রাম রসুনে ক্যালরি রয়েছে ২০৩, প্রোটিনের পরিমাণ ৯ গ্রাম, ফ্যাট ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৪৫ গ্রাম। রসুনের রস ও মেটাফরমিন (টাইপ-২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্দেশিত ঔষধ) একসাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিস মোকাবেলায় বেশ কার্যকরী।
৭। আপেল
আপেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলে ক্যালরির পরিমাণ ৬৫। এই ফলটি ক্ষতিকর কোলেস্টেরল না থাকায় হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। মূত্রাশয় জনিত রোগ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও আপেল খাওয়া যেতে পারে।
৮। মাছ
প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে ক্যালরির পরিমাণ ১৭৫, প্রোটিনের পরিমাণ ১৯ গ্রাম, উপকারী ফ্যাট ১০ গ্রাম থাকে। মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। মাছে থাকা পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শরীরে জ্বালাপোড়া কমাতে, হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে কিডনি থাকে সুরক্ষিত। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে কোন ধরনের মাছ রাখা উচিত।
৯। লেবুর শরবত
লেবুর শরবতে থাকা ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড অভ্যন্তরীণ পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কিডনির সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রয়েছে এতে। এজন্য সকালে বা দুপুরে খাওয়ার আগে লেবুর শরবত পান করা যেতে পারে।
১০। লাল আঙ্গুর
লাল আঙ্গুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক পলিফেলনিক যৌগ, যা রেসভেরাট্রল নামে পরিচিত। এটি হৃদপিণ্ডকে সুস্থ এবং কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা। রেসভেরাট্রল মূত্রাশয়জনিত ক্ষত উন্নয়ন করতে সহায়তা করে। তাই কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাল আঙ্গুর খাওয়ার চেষ্টা করুন।
বাংলাদেশে কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত লোকের সংখ্যা কোটির উপর ছাড়িয়ে গেছে। সঙ্গত কারণগুলি মধ্যে প্রধান এবং একমাত্র কারণ ভেজাল খাদ্যসামগ্রী, ক্যামিক্যাল মিশ্রিত ফলমূল, মাছ এবং রাসায়নিক খাদ্য দ্বারা মোটাতাজা করা মাংস। এছাড়া অজ্ঞতা, অসচেনতা এবং ভালোমানের খাদ্যদ্রবের দুষ্প্রাপ্যতা। শরীরের সুস্থতায় কিডনির ভালো থাকা খুব জরুরি। একটু অসতর্কতা হলে এই অঙ্গটির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা পরবর্তীতে কিডনি ড্যামেজের মত সমস্যাও হতে পারে। তবে কিছুটা সচেতন হলে কিডনির সমস্যা অনেকেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।