জেনে নিন পেয়ারার অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
সুস্বাদু একটি ফল পেয়ারা যা বর্ষা মৌসুমের ফল হলেও এখন প্রায় সারাবছরই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আমলকী বাদে অন্যান্য ফলের চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি বিশেষ করে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমাণ। আজকে আমরা জানব পেয়ারার অসাধারণ কিছু পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।
পেয়ারা বর্ষা মৌসুমের ফল হলেও প্রায় সারাবছরই এটি বাজারে পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য ফলের তুলনায় এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি। বিশেষ করে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমাণ এত বেশি যে আমলকী বাদে অন্য কোনো ফলে এত ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায় না। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক পেয়ারার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে।
পেয়ারার পুষ্টি গুনাগুণ
এটি একটি পুষ্টিকর ফল। ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি । অন্যান্য সাইট্রাস ফল, যেমন—কমলালেবুর তুলনায় পেয়ারায় ৫ গুণ বেশি ভিটামিন-সি রয়েছে। রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন।
সেইসঙ্গে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড এবং নিকোটিনিক অ্যাসিড।
পেয়ারায় ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-বি কমপ্লেক্সও পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় রয়েছে ১৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ক্যালরি ৭, ভিটামিন-এ ২৫০ আই ইউ, থিয়ামিন ০.০৭ গ্রাম, নিয়াসিন ১.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ৩০২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৯ মিলিগ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৭.১ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম।
পেয়ারার স্বাস্থ্য উপকারিতা সমূহঃ
অনেকে পেয়ারাকে একটি সাধারণ ফল মনে করে অবহেলা করে খেতে চাননা। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান ও ওষধি গুণাগুণ জানার পর তারাও ফলটি খেতে উৎসাহিত হবেন। নিম্নে ফলটির কিছু উপকারী দিকসমুহ আলোচনা করা হলো।
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি প্রদান করে। এছাড়াও ফলটিতে রয়েছে ক্যারটিনয়েড, পলিফেনল, লিউকোসায়ানিডিন ও অ্যামরিটোসাইড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দেহের কোথাও কেটে গেলে ক্ষতস্থান শুকানোর জন্য এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
২। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে হার্টকে সুস্থ রাখতে
গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্ত চাপ ও রক্তের লিপিড কমে আসে। এছাড়াও পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি। পটাশিয়াম নিয়মিত হৃদস্পন্দনের এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। লাইকোপিন সমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা নিয়মিত ভাবে খেলে তা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
৩। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারার বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে পেয়ারার রসে ও পেয়ারা পাতায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধী উপাদান থাকায় ডায়াবেটিস মেলাইটাসের চিকিৎসায় খুবই এটি খুবই কার্যকর। এজন্য কচি পেয়ারা পাতা শুকিয়ে মিহি গুঁড়ো করে ১ চা চামচ পাতা ১ কাপ গরম পানিতে দিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রেখে তারপর ছেঁকে নিয়ে পান করা যেতে পারে প্রতিদিন।
৪। ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে
বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত সমস্যা যেমন ব্রংকাইটিস সারিয়ে তুলতে পেয়ারার ভূমিকা রয়েছে । ফলটিতে উচ্চ পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকায় এটি শ্লেষ্মা কমিয়ে দেয়। এছাড়া ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে কাঁচা পেয়ারা কার্যকর ভুমিকা রাখে।
৫। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ
কাঁচা পেয়ারা ভিটামিন এ এর ভাল উৎস। আর এই ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন এ কর্নিয়াকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভুমিকা রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখা দরকার।
৬।মাসিকের ব্যাথা দ্রুত উপসম করতেঃ
অনেক নারীরই মাসিক চলাকালিন পেট অনেক ব্যথা হয় এবংব্যাথার ঔষধ খেয়ে থাকেন। এ সময় যদি কেউ পেয়ারার পাতা চিবিয়ে বা রস খায় তাহলে তাঁর মাসিককালিন ব্যাথা অধিকতর দ্রুত সময়ে উপসম হতে পারে।
৭। থাইরয়েড গ্রন্থি কার্যকরী রাখতে:
পেয়ারায় কপার সমৃদ্ধ ট্রেস উপাদান রয়েছে। তাই থাইরয়েড গ্রন্থি কার্যকরী বজায় রাখতে পেয়ারা খুব ভাল অবদান রাখতে পারে। তাছাড়া এটি থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে ফলে থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে কার্যকর ।
৮। শরীরের পেশী এবং স্নায়ু শিথিল রাখতেঃ
পেয়ারা একটি ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ ফল। এই গুরুত্বপুর্ণ খাদ্য উপাদানটি আমাদের খাদ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি শোষণ করে শরীরের সকল খাবারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। এছাড়া পেয়ারা একটি ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ ফল যা আমাদের স্নায়বিক আরাম প্রদানে ভুমিকা রাখে। এটা শরীরের পেশী এবং স্নায়ু শিথিল করতে সাহায্য করে। তাই একটি কঠিন কাজ করার পরে, একটি পেয়ারা খেয়ে পেশী শিথিল সহ কর্ম সিস্টেমে একটি চমৎকার শক্তির সঞ্চার ঘটানো যেতে পারে।
৯। পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে :
যেকোন ব্যকটেরিয়া সংক্রমণ বা পেটের গোলযোগে সবচেয়ে কার্যকরী হল পেয়ারা৷ এই ফলটিতে অ্যাস্ট্রিজেন্ট ও অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান থাকে ফলে এটি পাকস্থলীর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে৷
১০। ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে
পেয়ারাতে লাইকোপিন, ভিটামিন সি, কোয়ারসেটিন এর মত অনেকগুলো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা শরীরের ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধ করে। এটি প্রোসটেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
আমাদের দেশসহ প্রায় প্রত্যেক এশিয়ান দেশগুলোতে পেয়ারা একটি খুব সাধারণ ও সহজলভ্য ফল। এর আলাদা ধরনের স্বাদ ও গন্ধ ছাড়াও এর মাঝে রয়েছে স্বাস্থ্য উন্নত করার বহু গুনাগুন। শুধু ফলেই না এর গাছের পাতায়ও রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। তাই সম্ভব হলে প্রতিদিন ১টি করে আর না হলে সপ্তাহে অন্তত একটি করে হলেও প্রতিটি মানুষের পেয়ারা খাওয়া উচিত।