শিশুর কানপাকা রোগের সমাধানে করণীয়
কানের বিভিন্ন রোগের মধ্যে কানপাকা রোগ অন্যতম। সাধারণত কানপাকা বলতে মধ্যকর্ণের সংক্রমণকে বুঝায়। শিশুদের সমস্যাটি বেশি হলেও বড়দেরও এটি হতে পারে। কানপাকা রোগ নিয়ে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। আসুন জেনে নিই রোগটির লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সন্মন্ধে।
কানের বিভিন্ন রোগের মধ্যে কানপাকা রোগ অন্যতম। সাধারণত কানপাকা বলতে মধ্যকর্ণের সংক্রমণকে বুঝায়। শিশুদের সমস্যাটি বেশি হলেও বড়দেরও এটি হতে পারে। কানপাকা রোগ নিয়ে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। আসুন জেনে নিই রোগটির লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সন্মন্ধে।
কানাপাকার কারণ সমূহ:
সাধারণত কানের ভিতরে পর্দা সাদা ও চকচকে থাকে। পর্দাটি সংক্রমিত হলে তা লাল হয়ে যায়। এছাড়া অনেক সময় পর্দায় ছিদ্র হয়ে ক্রমাগত পুঁজ পড়তে থাকে। কানের পর্দা ফুটো হয়ে গেলে ভারসাম্য সমস্যা হয়ে কানে প্রদাহ হয় । ফলে শ্রবণশক্তিও কমে যেতে পারে। অনেকের এই সমস্যা জন্মগত ভাবেও হয়ে থাকে।
শিশুকে অসতর্কভাবে দুধ পান করানো বিশেষ করে ঘুমানো অবস্থায় ভুল পদ্ধতিতে দুধ পান করালেও সমস্যাটি হতে পারে। দুধের কিছু অংশ শিশুর নাক বা মুখের মধ্যে থেকে এভাবে কানে পৌঁছে যেতে পারে এবং ইনফেকশন তৈরি হতে পারে।
কানপাকার প্রকারভেদঃ
কানপাকা রোগ দুই ধরনের ধরনের হতে পারে । (১) নিরাপদ ধরনের (২) মারাত্মক ধরনের।
নিরাপদ ধরনের কানপাকাঃ
নিরাপদ ধরনের কানপাকায় কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে তা দিয়ে পুঁজ পড়ে। ফলে কানে ব্যথা হয়, চুলকায় এবং কানে কম শোনা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ওষুধ ব্যবহার করে ও উপদেশ মেনে চললে রোগটি সম্পুর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। অপারেশন করে কানের পর্দা জোড়া লাগিয়েও সমস্যার সমাধান করা যায়।
মারাত্মক ধরনের কানপাকাঃ
মারাত্মক ধরনের কানপাকায় কান দিয়ে সবসময় পুঁজ একটু একটু করে কষের মত ঝরে। কানের এ কষ পচা-দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা এ দুর্গন্ধ থেকেই রোগটির ধরন বুঝতে পারেন। এ ধরনের কানপাকা রোগে প্রকৃত চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। অনেক ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য এ অপারেশন করতে হয়।
কানের পর্দা ছিদ্র হওয়ার কারণ কি ?
দীর্ঘদিন কান পাকা থাকলে কানের পর্দায় ছিদ্র হয়ে পুঁজ বাহিরে আসতে শুরু করে। পর্দা ছিদ্র হওয়া ছাড়াও অনেক সময় বহিঃকর্ণে পুঁজ পড়তে পারে। কানপাকার কারণে মধ্য কানে পুঁজের বন্যা বইয়ে যেতে পারে। এর ফলে কানে পর্দা ছিদ্র হয়ে কানের ভিতরে বাতাস ঢুকতে শুরু করে। কিছু বাতাস বাহিরে বের হয়ে শ্রবন শক্তি কমিয়ে দিতে পারে। কানের সঙ্গের মস্তিষ্কের যোগাযোগ নিবিড়। তাই কানে ইনফেকশন হলে ব্রেনেও সমস্যা হতে পারে। এর ফলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। এভাবে বেশি দিন থাকলে কান ডেমেজ হয়ে যেতে পারে। এভাবে কান থেকে ব্রেণও আক্রান্ত হতে পারে। বেশি সমস্যা হলে জীবননাশেরও সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
কানপাকার চিকিৎসা:
যখন কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যায়, তখন প্রচুর পরিমাণে পুঁজ পড়ে এবং তা বারবার হতে থাকে। তাই কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে গেলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। সাধারণত কানে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দেওয়া হয়। কোন সময় নাকের ড্রপ এবং অ্যান্টিহিসটামিন জাতীয় ঔষধের প্রয়োজন হয়। এভাবে দুই সপ্তাহ ব্যবহার করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদি পর্দার ছিদ্রটা বড় হয় এবং যদি বারবার পুঁজ পড়ে, তাহলে অনেক সময় ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। আর যদি ৬ মাসের মধ্যে তার পর্দাটা জোড়া না লাগে এবং কানে কম শোনা যায় তাহলে একটা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাইক্রো সার্জারি করে পর্দা জোড়া লাগিয়ে দিতে হতে পারে। এজন্য কানের পেছনে চামড়ার নিচ থেকে একটু পর্দা নিয়ে কানের মধ্যে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে লাগিয়ে দেওয়া হয় যা খুবই সহজ। প্রায় শতকরা ৯০ ভাগের বেশি ক্ষেত্রেই পর্দা জোড়া লেগে যায় এবং রোগী কানে ভালো শুনতে পায়।
কান পাকা থেকে বাঁচতে করণীয়ঃ
- কান পাকা প্রতিরোধে প্রধান কাজ হলো সর্তক থাকা, যেমন শিশুকে না শুইয়ে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ানো।
- সম্ভব হলে শিশুকে ফিডার ছাড়া দুধ খাওয়ানো।
- বাচ্চার সর্দি লাগলে সাথে সাথে চিকিৎসা করা।
- অনেক সময় কানে আঘাত লেগে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। তাই কান খোচানো থেকে বিরত থাকা।
- যদি কোনো কারণে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া।
- পুকুর, নদীতে গোসলের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকা। লক্ষ্য রাখা যাতে কোনোভাবেই নাকের মধ্যে পানি না ঢুকে।
সঠিক সময় এর চিকিৎসা না করলে কানের ইনফেকশন ব্রেনে চলে যেতে পারে। তাই কানের সমস্যা হলে শ্রবণ শক্তিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদি সময় মতো চিকিৎসা না করা হয় অনেক সময় জীবননাশের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তাই সঠিকভাবে কানের যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরী।