কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সমূহ
কিডনির রোগগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে কিডনিতে পাথর । এ কারণে প্রতিবছর আমাদের দেশে অনেকের কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। একটু সচেতন হলেই সমস্যাটি প্রতিরোধ করা যায় । অনেক কারণে কিডনিতে পাথর হতে পারে। আসুন জেনে নিই কেন এ পাথর হয় এবং কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়।
কিডনির রোগগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে কিডনিতে পাথর । এ কারণে প্রতিবছর আমাদের দেশে অনেকের কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। একটু সচেতন হলেই সমস্যাটি প্রতিরোধ করা যায় । অনেক কারণে কিডনিতে পাথর হতে পারে। আসুন জেনে নিই কেন এ পাথর হয় এবং কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়।
কিডনির পাথর কী?
আমাদের শরীর থেকে প্রস্রাবের সঙ্গে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে কিডনির ভুমিকা অপরিসীম। কিডনিতে লবনের সঙ্গে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ মিশে একধরনের কঠিন পদার্থের জন্ম হয় যাকে আমরা কিডনির পাথর বলে থাকি। এই পাথরের আকার ছোট লবণের দানা বা কখনো কখনো পিংপং বল এর মত বড় হতে পারে। এই পাথরের উপস্থিতি আমরা সহজে বুঝতে পারি না যতক্ষণ না এটি আমাদের মূত্রনালির গায়ে ধাক্কা দেয় এবং একে সংকীর্ণ করার ফলে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহঃ
মূত্রনালীতে পাথর না পৌঁছা পর্যন্ত কিডনিতে পাথর হওয়ার কোন লক্ষণ ও উপসর্গ সাধারণত বুঝা যায় না। তবে নিম্নের লক্ষণ সমূহ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা নিরিক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
- পাঁজরের নিচে ও পিঠের দুই পাশে ব্যথা হওয়া ও ক্রমান্বয়ে তা তলপেট এবং কুঁচকি পর্যন্ত ছড়িয়ে পরা।
- প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হওয়া।
- প্রস্রাব গোলাপী, লাল অথবা বাদামী রঙের হয়ে যাওয়া।
- বারবার প্রস্রাবের বেগ হওয়া।
- প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসা।
- সংক্রমণ হয়ে থাকলে জ্বর এবং কাঁপুনী হওয়া।
- বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া।
কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা কাদের বেশি?
যাদের কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা বেশি তারা হলেন-
- পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারো কিডনিতে পাথর হলে অথবা আগে একবার কিডনিতে পাথর হয়েছে এমন ব্যক্তিদের।
- চল্লিশ বা চল্লিশোর্ধ বয়সী ব্যক্তিদের।
- মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের।
- প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমান পানি পান করে এমন ব্যক্তি।
- যারা মাত্রাতিরিক্ত আমিষ/প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করেন।
- যারা অতিরিক্ত খাবার লবন (সোডিয়াম সল্ট/টেবিল সল্ট) এবং চিনিযুক্ত খাবার খান।
- যাদের দেহ স্থূলকায়।
- যাদের আগে থেকে কিডনির সমস্যা আছে যেমন: মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ।
কিডনির পাথর প্রতিরোধ করার উপায়:
কিডনিতে পাথর হলেই অপারেশন করতে হবে এমন ধারনা সঠিক নয়। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে সহজেই পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। দৈনিক ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ উপযুক্ত পরিমাণে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায় এবং কিডনির পাথরের ঝুঁকি এবং জটিলতা কমিয়ে আনে। ছোট আকৃতির পাথরও প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যেতে পারে। নিম্নের নিয়মাবলী পালনের মাধ্যমে আমরা সহজেই কিডনির পাথর হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারি।
- সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- বেশী অক্সালেটযুক্ত খাবার যেমন-পালংশাক, বীট, মিষ্টি আলু, চা, চকোলেট এবং সয়াজাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে।
- খাবারে লবণ কম ব্যবহার করতে হবে।
- প্রাণীজ আমিষ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
- ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে।
প্রস্রাবে পানি, লবন ও খনিজ পদার্থের সঠিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। তাই এই অযাচিত সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে কিডনির পাথর সম্পর্কে সজাগ থাকা, সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা সহ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা খুবই দরকার।