জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্য
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের কারনে প্রতিবছর অনেক প্রান ঝরে যায়। আমাদের দেশে ক্যান্সার এর কারনে মৃত্যুর জন্য এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আগে এটি প্রথম অবস্থানে ছিল, বর্তমানে টিকা আবিষ্কার ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয় এবং এদের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার রোগী মৃত্যুবরণ করে। অর্থাৎ যতজন রোগী শনাক্ত হয়, তার প্রায় অর্ধেকই মৃত্যুবরণ করে। তবে আশার কথা এই যে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে জরায়ুমুখের ক্যানসার সম্পূর্ণ রূপে ভালো হয়ে যায় এবং এটিই একমাত্র ক্যানসার, যার টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে।
তাই এই ক্যান্সার রুখতে আমাদের আগে থেকেই সচেতন হতে হবে কারন এর প্রতিকার সম্ভব না হলেও প্রতিরোধ সম্ভব।
প্রতিরোধ করতে কি খাবো:
ফ্লাভিনয়েডস: ফ্ল্যাভোনয়েড হল কালারফুল ফল এবং সবজির রাসায়নিক যৌগ যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষার একটি প্রধান উৎস বলে মনে করা হয়। ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবারের কয়েকটি উদাহরণ হলো:
আপেল, কালো শিম, ব্রকলি, বাঁধাকপি, টমেটো, রসুন, লেটুস, মটরশুটি, পেঁয়াজ, সয়া, পালং শাক
ফোলেট বা ফলিক এসিড (ভিটামিন বি৯):
গবেষণায় দেখা গেছে যে ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার (একটি জলে দ্রবণীয় বি ভিটামিন) সার্ভিকাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ফোলেট সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে:
অ্যাভোকাডোস, ছোলা, সিরিয়াল (ওটস, বার্লি) এবং রুটি, মসুর ডাল, কমলার শরবত, লেটুস, স্ট্রবেরি
ক্যান্সার প্রতিরোধে যেসব খাবার খাবেন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালে বিশ্বের ৯.৬ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসারের ছোবলে প্রাণ হারিয়েছেন। প্রত্যেক বছর নতুন করে ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছেন তিন লক্ষ মানুষ। কিন্তু প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন করতে পারলে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে ক্যানসারকে। এই মারাত্মক অসুখ প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে আমাদের সবার জানা দরকার।
কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, অন্য দিকে বেশ কিছু খাবার আছে যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
প্রাচীন ধারণা অনুযায়ী, নিরামিষ খাবার শরীরকে সুস্থ রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। পুষ্টি বিজ্ঞানীরাও আজ সে কথা মানেন। পেয়ারা, আম, জাম, আপেল, কলা-সহ যে কোনও টাটকা ফলমূল ও বিট, কুমড়ো, টোম্যাটো, ঢেঁড়সের মত সবজি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিনই যে সবজি ও ফল খেতে হবে তা নয়, চেষ্টা করবেন রোজের খাবারের তালিকায় মৌসুমি সবজি ও ফল রাখার। ক্যানসার প্রতিরোধসহ আমাদের সামগ্রিকভাবে ভাল রাখতে সাহায্য করে এমন কিছু ফল ও সবজি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
কলা: বছরের প্রতিটি সময় কলা পাওয়া যায়। অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে রোজ কলা খাওয়া যেতে পারে। সেলেনিয়ামের সক্রিয় যৌগের এক শক্তিশালী উৎস এই ফল। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করার পাশাপাশি ক্যানসার কোষ বিনষ্ট করতে পারে ।
আপেল: দাম বেশি হলেও সারা বছরই এই ফল বাজারে পাওয়া যায়। এতে আছে প্রোসায়ানিডিনস, যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে কার্যকর।
ডালিম বা বেদানা: ডালিমে থাকে ফলিফেনল নামে এক যৌগ, যা ক্যানসার সৃষ্টকারী কোষ ধ্বংস করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।
আঙুর: আঙুরে আছে রেসভেরাট্রল, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে সামগ্রিক ভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
কমলালেবু: এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্যানসার ফাইটার। কমলালেবুর কোয়ায় থাকা ২_হাইড্রক্সিফ্ল্যাভনয়েড (২_এইচএফ) স্তন ও ফুসফুস ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
টমেটো: টমেটোতে থাকে লাইকোপিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যানসারের মহা শত্রু। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে টমেটো রাখতে ভুলবেন না।
ব্রকোলি: এই সবজি এখন আমাদের দেশেও সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। এই সবুজ রঙের সবজিটি ইনডোল-৩ কারবিনোল নামক ফাইটোকেমিক্যালসের এক অন্যতম ভাণ্ডার। এই উপাদানটি ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে।
বিট: এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা সায়ানিন। যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
নটে শাক: যার বিজ্ঞানসম্মত নাম অ্যামারান্থাস ভিরিডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্যানসাররোধক।
ফুলকপি : যেসব লোক ফুলকপি ও বাঁধাকপি জাতীয় খাবার বেশি খায় তাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। ইউরোপীয় গবেষণা অনুযায়ী, যারা এ জাতীয় খাবার বেশি খায় তাদের কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।
রসুন : এই তীব্র কটু ঔষধি অ্যালাইল সালফার যৌগ যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেম তৈরি করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে রসুন কোলন ক্যান্সারের কম ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া রসুন হার্টের জন্যও খুবই উপকারী।
নিয়মিত বাদাম খান : বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি। যারা প্রতিনিয়ত বাদাম খান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি এমনিতেই কমে যায়। কারণ বাদাম শ্বসনতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে ক্যান্সারের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেহেতু বিভিন্ন কারণে ক্যান্সার হতে পারে,তাই বাদাম শুধু সামান্য কিছু কারণের ঝুঁকি কমাতে পারে।
অ্যালকোহল পরিহার করুন : অতিরিক্ত অ্যালকোহল মুখ, গলা, খাদ্যনালী, এবং স্বরযন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।তাই অ্যালকোহল পুরোপুরি পরিহার করতে হবে।
ক্যারোটিনয়েড:
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন এ-এর উৎস ক্যারোটিনয়েড জরায়ুমুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রতিরোধে সহায়ক। উপরের তালিকায় ফল, শাকসবজি এবং মটরশুটি ছাড়াও, আপনি আপনার ডায়েটে কমলা, গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া এবং শীতকালীন সতেজ সবজি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
এছাড়াও নিয়মিত খেতে পারেন:
১. হলুদ
২. ভিটামিন সি
৩. ওমেগা ৩
৪. ভিটামিন ডি
দেহে কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকলে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন ও সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করুন।
খাবার প্রতিরোধ এর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এর পাশাপাশি আপনাকে আরো কয়েকটি জিনিস মেনে চলতে হবে।
১৬ বছরের আগে কোনো মেয়ের বিয়ে না দেওয়া, জন্মনিয়ন্ত্রক পিল ৫ বছরের বেশি সময় ধরে সেবন না করা,
বহুগামিতা রোধ
ধূমপান বন্ধ,
সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ কিংবা অপরিচ্ছন্নতার কারণেও জরায়ুমুখের ক্যানসার হয়ে থাকে।
ক্যান্সার রাতারাতি হয় না।দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।তবে আপনি চাইলেই এখন এ ঝুঁকি কমাতে পারেন। তারজন্য আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে না। শুধু আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে কিছু খাবার। তাহলে জেনে নিন ক্যান্সার প্রতিরোধক খাবার সম্পর্কে।
সময়মতো টিকা নিতে হবে।
বসে থাকার অভ্যাস কমাতে হবে : একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে যারা দিনের বেশির ভাগ সময় বসে কাটায় তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে ২৪ শতাংশ বেশি। তাই একটানা বসে না থেকে এক ঘন্টায় অন্তত কয়েক মিনিটের জন্য হলেও চারপাশে পায়চারি করাতে হবে।বংশগত কারণে অনেকের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। দ্বিতীয়ত, জীবনযাত্রায় অনিয়মের কারণেও ক্যান্সার হতে পারে। কেউ যদি সময়মতো না খায়, পরিমাণমতো না ঘুমায় তাতে তার ওজন বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আর এই ওজন বাড়ার ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তৃতীয়ত, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন ধরুণ যেসব খাবারে নানা ধরনের রং বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, ফরমালিন ব্যবহার করা হয় এমন খাবারে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। খাবার ঠিকমতো সংরক্ষণ না করা ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। সোজা কথায় সচেতনতার অভাবে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বাড়ে।