ডালিম এর পুষ্টিগুন
অদ্ভুত সুন্দর একটি ফল ডালিম। তবে এটি শুধু দেখতেই যে ভালো তা নয়, এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্যকর গুণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এর গুণসহ আনার অ্যান্টি-এজিং ফল হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়।
ডালিম খুবই পরিচিত একটি ফল। অনেকে একে বেদানা বা আনার ও বলে থাকেন। রূপকথার গল্পে এই ফলকে যৌবন ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে উপস্থাপণ করা হত। আনারের আদি নিবাস পারস্যে। পারস্য থেকেই ফলটি আমেরিকা, ভারত, বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে এই ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর উপকারিতাও অনেক। শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি জীবনের সজীবতা ধরে রাখতে এর ভূমিকা অতুলনীয়। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে আনারের উপকারী দিকগুলো সম্পর্কে জেনে নেই–
১। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: মাত্র এক গ্রাম আনারের জুসে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হার্টকে ঝুঁকিমুক্ত রাখে। ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
২। ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আনারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার সেল তৈরী ও বেড়ে ওঠাকে বাধা দান করে। ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে আনার বেশ কার্যকর।
৩। হজমে সহায়তা করে: আনার খেলে পাকস্থলী ও খাদ্যনালীর পরিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে হজমের জন্যও আনার বেশ উপকারী।
৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকরে: আনারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ রয়েছে। এই দুইটি ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক।
৫। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন কিছু পরিমাণে আনার খায় তারা অন্যদের তুলনায় কম স্ট্রেস বা মানসিক চাপে ভোগেন। চিন্তামুক্ত থাকতে তাই নিয়মিত আনার খেতে পারেন।
৬। শরীরে সজীবতা ধরে রাখে: আনারের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের সজীবতা ধরে রাখে। এছাড়া আনার দেহকে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
৭। কোষের পুনরুজ্জীবন: আনারে পর্যাপ্ত ফ্যটি আসিড রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে ক্যারাটিন বজায় রাখার গুণাগুণ। এই কারনে কোষের পুনরুজ্জীবনের সাথে সাথে ত্বকে বয়সের ছাপও কম পড়ে।
৮। কোলাজেন গঠনে সহায়ক: ত্বকেরএকটি স্তর ডার্মিস, যা ফাইবার বা আঁশ দিয়ে তৈরী। ডার্মিসকে ঠিক রাখে কোলাজেন, যার জন্য দরকার প্রোটিন ও ভিটামিন সি। আনার কোলাজেন ফাইবারকে ঠিক রেখে অ্যান্টিএজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ অকালে বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
৯। ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে সাহায্য করে: আনারের জুস ত্বকের যত্নে দারুণ উপকারী। এটা ত্বকের গভীরে ঢুকে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে। এছাড়া মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ও সাইটো কেমিক্যাল উপাদানের যোগান দেয়। ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে এগুলো খুবই দরকারী।
১০। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে: আনারে রয়েছে বিশেষ ধরনের ফাইবার তাই নিয়মিত আনার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এজন্য নিয়মিত আনার খান সুস্থ থাকুন।
শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট : ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে একে স্বাস্থ্যকর উপায়ে পরিচর্যা করতে হবে এবং একে যেকোনো ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন জীবাণুরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এ উপাদানটির জন্য আনার রীতিমতো খ্যাতি লাভ করেছে।
কোষের পুনরুজ্জীবন : আনারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড। ত্বকের প্রদাহ প্রশমিত করার গুণও রয়েছে এতে। তার সঙ্গে ফলটি ত্বকের কেরাটিনোসাইট কোষের পুনরুজ্জীবন ঘটায়। ফলে বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না ত্বকে।
অ্যান্টি-এজিং উপাদান : ত্বকের ওপরের দিকের স্তরটি ডেরমিস। এটি কোলাজেন এবং ইলাস্টিক ফাইবার দিয়ে প্রস্তুত। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে এই ডেরমিস অংশে। ফলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। তখন কোলাজেন গঠনের জন্য প্রোটিনের সরবরাহ দিতে ভিটামিন ‘সি’ এর প্রয়োজন হয়। আনারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।
অর্গানিক জুস : আনারের অর্গানিক জুস ত্বকের যত্নে দারুণ উপাদান। এর ক্ষুদ্র আকারের মলিকিউল গঠন ত্বকের গভীরে পৌঁছে তাকে হাইড্রেট করে। এই রসে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং সাইটোকেমিক্যাল রয়েছে।
ত্বকের মৃত অংশ দূর করা: আনারের হালকা মিষ্টি নরম বীচিগুলো সেঁচে তা খেলে ত্বকের মৃত অংশগুলো দূর হয়ে যায়।