চোখের রক্তনালির সমস্যা
চোখের পেছনে রয়েছে রেটিনা। এই রেটিনার রক্তনালিজনিত সমস্যার মধ্যে ডায়াবেটিসের পরেই ব্লকজনিত সমস্যা সবচেয়ে পরিচিত। রক্তনালি ব্লক শিরা ও ধমনি দুটিতেই হতে পারে।
সেটি আবার রেটিনার প্রধান শিরা বা ধমনি অর্থাৎ সেন্ট্রাল রেটিনাল আরটারি এবং সেন্ট্রাল রেটিনাল ভেইনে ব্লক হতে পারে। অথবা কোনো শাখা (ক্যাপিলারি বা ভেনিউল) ব্লক হতে পারে। হার্টের রক্তনালির ব্লকের সঙ্গে আমরা কমবেশি পরিচিত। রেটিনার রক্তনালির ব্লকও একই প্রক্রিয়ায় হয়।
জমাট রক্ত বা ব্লাড ক্লটকে বলা হয় থ্রম্বাস। জমাট লিপিড বা কোলেস্টেরলকে বলা হয় এমবোলাস। থ্রোমবাস বা এমবোলাস যেকোনোটি যখন শিরা বা ধমনিকে কোনো জায়গায় ব্লক করে দেয়, তখন ওই জায়গায় রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়ে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়। এটিকে বলা হয় স্ট্রোক। মস্তিষ্কের মতো রেটিনাতেও স্ট্রোক হতে পারে। নার্ভ সেল বা নিউরনকে বেঁচে থাকার জন্য নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ আবশ্যক। সাময়িক রক্ত বা অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় নার্ভ সেল বা নিউরন নষ্ট হয়ে যায়। দেহের যেকোনো স্নায়ু একবার নষ্ট হয়ে গেলে সেটি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এর আর পুনর্গঠন সম্ভব নয়।
রেটিনাতে রক্তনালি ব্লক বা স্ট্রোক দুই ধরনের—
- শিরা ব্লক বা আর্টারিয়াল অক্লুশন-সেন্ট্রাল রেটিনাল আরটারি বা এর কোনো শাখা ব্লক হতে পারে।
- ধমনি ব্লক বা ভেনাস অক্লুশন-সেন্ট্রাল রেটিনাল ভেইন ব্লক বা এর কোনো শাখা ব্লক হতে পারে।
রেটিনার রক্তনালি ব্লকের কারণ—
- শিরা ব্লক হওয়ার প্রধান কারণ জমাট রক্ত (থ্রোমবাস) এবং জমাট লিপিড ও কোলেস্টেরল এমবোলাস। এই থ্রোমবাস ও এমবোলাসের প্রধান উৎস হলো হার্ট বা হার্ট ভালভ এবং শিরায় অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস বা চর্বি জমা।
- ধমনি বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ শিরায় অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের কারণে শিরার গা পুরু ও শক্ত হয়ে যায় এবং এটি সরাসরি চেপে ধরার কারণে ধমনি বন্ধ হয়ে যায়।
রক্তনালি বন্ধ হওয়ার অনেকগুলো ঝুঁকির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস, বার্ধক্য, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার-লিপিডেমিয়া বা উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ধূমপান, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন, গ্লুকোমা, রক্তের নিজস্ব সমস্যা যেমন থ্যালাসেমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, লিউকোমিয়া ইত্যাদি। রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উপসর্গ ও করণীয়
রেটিনার রক্তনালিতে ব্লক হলে হঠাৎ এক চোখে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের বেলায় এটি দেখা যায়। কোনো ব্যথা থাকে না। রেটিনার রক্তনালির ব্লক শনাক্তকরণের জন্য ফান্ডাস ফ্লোরেসেন এনজিওগ্রাম বা চোখের এনজিওগ্রাম করা হয়।
দ্রুত চিকিৎসা না হলে দৃষ্টি স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের সমস্যা প্রতিরোধে সচেতনতা দরকার। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চোখে অ্যান্টি ভিজিএফ ইনজেকশন দিতে হতে পারে। লেজার চিকিৎসায় অনেক সময় উপকার পাওয়া যায়। এসপিরিন–জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
তথ্যসুত্রে: প্রথম আলো