এ সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ
এ সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ সর্ম্পকে প্রথমআলো পত্রিকায় লিখেছেন ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার, সহযোগী অধ্যাপক, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
পানিশূন্যতা রোধে শিশুকে বেশি করে খাওয়ার স্যালাইন ও তরল খাবার; যেমন চিড়ার পানি, ডাবের পানি, ঘোল, ফলের রস ও লবণ-গুড়ের শরবত খেতে দিন।
দেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়ার রোগী। যেকোনো বয়সী ব্যক্তিই আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। ডায়রিয়ায় শিশুদের দেহ দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে।
ডায়রিয়া খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। দুই বছরের নিচের শিশুর ডায়রিয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। এই ডায়রিয়া সাধারণত তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। ডায়রিয়ার সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো পানিশূন্যতা। পানিশূন্যতায় শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়, প্রস্রাব কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকে।
পানিশূন্যতার লক্ষণ
অস্থিরতা, খিটখিটে মেজাজ বা নিস্তেজ হওয়া। চোখ গর্তে ঢোকা। তৃষ্ণার্ত ভাব বা একেবারেই খেতে না পারা। চামড়া ঢিলা হওয়া। লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
পানিশূন্যতা রোধে করণীয়
শিশুকে বেশি করে খাওয়ার স্যালাইন ও তরল খাবার; যেমন ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ডাবের পানি, টকদই, ঘোল, ফলের রস ও লবণ-গুড়ের শরবত খেতে দিন। স্যালাইন হলো শরীর থেকে হারানো পানি-লবণের পরিপূরক, ডায়রিয়া বন্ধ করার ওষুধ নয়। স্যালাইনের প্যাকেট সঠিক নিয়মে গোলাতে হবে। না হলে লবণের মাত্রা কমবেশি হতে পারে এবং শিশুদের মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিবার পায়খানার পর ১০ থেকে ১৫ চামচ স্যালাইন শিশুকে খেতে দিন। খাওয়াতে হবে ধীরে ধীরে এক চামচ; এক বা দুই মিনিট পর পর। একবারে বেশি দিলে বমি হতে পারে। সেই সঙ্গে শিশুকে অন্যান্য খাবার দিতে হবে। বয়স যদি ছয় মাসের কম হয়, তা হলে তাকে বারবার মায়ের দুধ খেতে দিন। অনেকে ডায়রিয়া হলে শিশুকে মাছ, মাংস, ডাল, কলা, শাকসবজি খেতে দেয় না। এটা ঠিক নয়। কাঁচকলা সিদ্ধ করে নরম ভাতের সঙ্গে চটকে বা খিচুড়ির সঙ্গে দিন। দিনে কমপক্ষে ছয়বার, অর্থাৎ তিন-চার ঘণ্টা পর পর খাবার দিন। অল্প করে দিলে শিশুর পক্ষে খাবার হজম করা সহজ। ১৫ দিনের জন্য জিংক সিরাপ বা বড়ি খেতে দিন।
কখন হাসপাতালে নেবেন
পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে, স্যালাইন বা অন্যান্য খাবার খেতে না পারলে, অতিরিক্ত তৃষ্ণা ভাব থাকলে, খুব বেশি পরিমাণ পানির মতো পায়খানা হলে, বারবার বমি হলে, তীব্র জ্বর থাকলে, পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে, ১৪ দিনের বেশি ডায়রিয়া থাকলে।
মনে রাখা দরকার
ডায়রিয়া প্রতিরোধে জন্মের পরপরই নবজাতককে শালদুধ দিন এবং ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ পান করতে দিন। শিশুকে বোতল দিয়ে মায়ের দুধও খাওয়াবেন না। চালের গুঁড়া খাওয়াবেন না। নিয়মিত টিকা দিন। খাবার ও পানি ঢেকে রাখুন। বাইরের খাবার বা ঘরের বাসি খাবার দেবেন না। পানি কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ফুটিয়ে খাওয়ান। ফোটানো পানি দিয়ে শিশুর হাত, মুখ ধোয়াবেন, গোসল করাবেন, বাটি, চামচ ধুয়ে নিন। শিশুকে মৌসুমি ফল খেতে দিন। ডায়রিয়া শুরু হলে নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক বা মেট্রোনিভাজল–জাতীয় ওষুধ খাওয়াবেন না। পাতলা পায়খানা বন্ধ করার কোনো ওষুধ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সম্ভব হলে শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে রোটা ভাইরাসের টিকা দিন।