কোমরব্যথা, পিঠব্যথা প্রতিরোধে
কোমরব্যথা, পিঠব্যথা প্রতিরোধে কী করবেন সে সর্ম্পকে প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন সফিকুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান এবং এহসানুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট (বিএইচপিআই), সিআরপি, সাভার, ঢাকা।
একটানা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে মানুষের মেরুদণ্ডের সামনের দিকের মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে থাকে, একই সঙ্গে পেছনের দিকের মাংসপেশি প্রসারিত হয়ে থাকে। এর ফলে দেহে পেশির ভারসাম্যহীনতা (মাস্কুলার ইমব্যালেন্স) তৈরি হয়। তখন মেরুদণ্ডের মাঝখানে অবস্থিত চাকতি বা ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। এই চাপ থেকে ধীরে ধীরে ব্যথা শুরু হয়। এ ছাড়া সব সময় বসে কাজ করার কারণে অনেকের ঘাড়ে এবং পিঠেও ব্যথা হতে পারে।
যাঁরা লম্বা সময় ধরে টেবিলে বসে কাজ করেন, তাঁদের শারীরিক ব্যায়াম বা সক্রিয়তাও কম। এতে দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক (হৃদ্রোগ ও ডায়াবেটিসের মতো) রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
বসে বসে কাজ করার ফলে যে কেবল ডিস্কের সমস্যা হয়, তা নয়। কোমরের মেরুদণ্ডের দুই পাশে থাকা স্যাক্রো-অ্যাইলিয়াক জয়েন্টেও প্রদাহ হতে পারে। এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্যাক্রালাইটিস নামে সুপরিচিত। আবার কোমর বা লাম্বারের কশেরুকার সঙ্গে নিচে থাকা স্যাক্রাম অংশের কশেরুকার সঙ্গে জোড়া লেগে যায়। এ ঘটনাকে বলা হয় স্যাক্রালাইজেশন।
অফিসে বসার চেয়ারের কিছু পরিবর্তন আনলে এসব কারণে হওয়া কোমরব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন: যেসব চেয়ারের ব্যাকরেস্ট মানুষের মেরুদণ্ডের বিন্যাসের মতো গঠিত, সেসব চেয়ারে বসে কাজ করা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য চেয়ারে ব্যাক সাপোর্ট বা লাম্বার রোল ব্যবহার করে কোমরের অংশ সোজা রেখে বসা যায়। কোমরব্যথা প্রতিরোধে ‘ব্যালেন্স টুল’ নামে একধরনের বিশেষ চেয়ার পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) পাওয়া যায়। এই চেয়ার ব্যবহার করলে কোমরের বক্রতা ঠিক রেখে দীর্ঘ সময় কাজ করা যায়।
ব্যালেন্স টুল
কোমর ব্যথা এড়ানোর জন্য অবশ্যই সবাইকে সঠিক ভঙ্গিতে বসতে হবে। সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো কাজ করা বা ভারী জিনিস তোলা যাবে না। আবার দীর্ঘক্ষণ এক অবস্থায় বসে কোনো কাজ করা যাবে না। এক ঘণ্টা পরপর অবস্থান পরিবর্তন করা উচিত। অফিসের পরিবেশে আরগোনমিক পরিবর্তন আনতে পারলে কোমরব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
যাঁরা লম্বা সময় বসে কাজ করেন এবং যাঁদের কোমরে ব্যথা আছে, তাঁরা পিঠের নিজের অংশ সম্প্রসারণের ব্যায়াম বা লাম্বার এক্সটেনশন এক্সারসাইজ করতে পারেন। এতে ডিস্কের ওপর থেকে অতিরিক্ত চাপ কমে আসে। এর সঙ্গে সঙ্গে কোমরে আশপাশের মাংসপেশি স্ট্রেচিং এবং পেটের মাংসপেশির স্ট্রেন্দেনিং ব্যায়াম করতে পারেন।
পিঠের নিচের অংশ সম্প্রসারণ
কোমর ব্যথার জন্য মেরুদণ্ড, পিঠ এবং কোমরসংলগ্ন মাংসপেশিগুলো শক্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে কোমরের শক্তি কমে গিয়ে পিঠের নিচের অংশ স্থিতিহীন (লাম্বার ইনস্ট্যাবিলিটি) হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে লাম্বো-পেলিভক স্ট্যাবিলাইজেশন, হিপ ফ্লেক্সর ও হ্যামস্ট্রিংয়ের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা হিসেবে সমাদৃত। বিভিন্ন মাংসপেশির অস্বাভাবিক সংকোচন বিবেচনা করে স্ট্রেচিং ও স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ করানো হয়ে থাকে। এই অস্বাভাবিক সংকোচন কমানো এবং ব্যথা সাময়িকভাবে কমানোর জন্য রোগীকে থার্মাল থেরাপি হিসেবে হিট এবং কোল্ড থেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে।
রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তার পূর্ণাঙ্গ অ্যাসেসমেন্ট করে রোগের কারণ, রোগীর অবস্থা, বয়স, প্রতিক্রিয়ার ওপর বিবেচনা করে রোগীকে ডিরেকশনাল এক্সারসাইজের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।