সত্য জানুন, সতর্ক থাকুন
সত্য জানা ও সতর্ক থাকা সম্পর্কে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
ধরা যাক আপনারা গলা ব্যথা করছে। সঙ্গে সামান্য শুকনো কাশি। শরীরটাও একটু গরম মনে হচ্ছে। অন্য সময় হলে আপনি নিশ্চয়ই একে মৌসুম বদলের সময়কার সমস্যা বলে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে এসব সমস্যায়ও অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গবেষকেরা বলেছেন, অতিরিক্ত চাপ বা উদ্বেগ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, আত্মবিশ্বাসে ভাঙন ধরায়। কাজেই যত সত্য জানবেন, তত সতর্কতা বাড়বে, আর মোকাবিলাও করতে পারবেন ভালোভাবে।
১. সংক্রমণ হলে কি মৃত্যু অনিবার্য?
প্রতিদিন শত শত মৃত্যুর খবর আমাদের ভয় ধরানোর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু মনে রাখতে হবে বিশ্বজুড়ে ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ কোভিড-১৯ রোগী মৃদু বা সামান্য উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর সেরে উঠেছেন। ৪ থেকে ৬ শতাংশ মানুষের অবস্থা জটিল হতে পারে, নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হতে পারে। কাজেই ভালো থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। যদি অসুস্থ বোধ হয়, তবে নিজেকে অন্য সবার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলুন। পুষ্টিকর সুষম খাবার খান। পরিবার বা বন্ধুদের সাথে অনলাইনে বা ফোনে যোগাযোগ অব্যাহত রাখুন। উদ্বেগ কমাতে বই পড়ুন বা গান শুনুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। আর নিয়মিত নিজের উপসর্গগুলো লক্ষ করতে থাকুন।
২. উপকার পাওয়া যায়, এমন কোনো ওষুধ আছে?
নভেল করোনাভাইরাস একটি নতুন ভাইরাস। এখন পর্যন্ত এর কোনো কার্যকর ওষুধ বা টিকা নেই। তবে বিজ্ঞানীরা এর টিকা আর জুতসই ওষুধ খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই নানা ধরনের চটকদার বিজ্ঞাপনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টের ছলনায় ভুলবেন না। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি ও নির্ভরযোগ্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল বা গবেষণা ছাড়া কোনো ওষুধ কার্যকরী কিনা, তা জানা যায় না। আর এমন কিছু পাওয়া গেলে নিশ্চয়ই চিকিৎসকেরা আপনার উপর তা যথাসময়ে প্রয়োগ করবেন। তাই আগে থেকে এসব নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। বরং নিজেকে আর পরিবারকে নিরাপদ রাখার দিকে নজর দিন, সতর্ক থাকুন।
৩. আমার বয়স কম, চিন্তা কী?
বিশ্বজুড়ে অপেক্ষাকৃত তরুণরা নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণেকে সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, সামাজিক দুরত্বের নিয়মকানুন প্রায়ই মানছেন মা। কেননা, তাদের ধারণা, এটা বয়স্কদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রোগ। মনে রাখতে হবে কেবল ষাটোর্ধ্ব বয়সই নয়, অন্তর্নিহিত কোনো রোগ বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জটিলতার কারণে এই ভাইরাস যে কারও জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া আপনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে প্রিয়জনদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন।
৪. আমার কাশিটা কি কোভিড-১৯-এর জন্য?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছেন, শুকনো কাশি, জ্বর, ক্লান্তি আর শ্বাসকষ্ট - এগুলো হলো কোভিড-১৯ এর মূল উপসর্গ। কারও কারও গায়ে ব্যথা, নাক বন্ধ, গলাব্যথা, ডায়রিয়া হতে পারে। এসব উপসর্গ দেখা দিলে ঘাবড়ে না গিয়ে আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। প্রয়োজন হলে তিনিই আপনাকে পরীক্ষা করতে বলবেন। পরীক্ষা হোক আর না হোক, নিজের আলাদা রাখুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
৫. মাস্ক পরে বাইরে গেলে কি সমস্যা হবে?
অনেকেই বাড়িতে থাকতে চাইছেন না। ভাবছেন মাস্ক পরে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে একটু বাইরে যাই, বন্ধুদের সাথে মিশি, হাঁটাহাঁটি করি। মনে রাখতে হবে, মাস্ক আপনাকে পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারবে না। ভাইরাসটির বাতাসে ভেসে বেড়ানোর চেয়ে বরং বস্তু বা তলে লেগে থাকে বেশি। বাইরে যাওয়া মানে আপনি নিজে ও পরিবারের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন। আপনার এই সামান্য ভুল সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। তাই সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখুন। অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না।
৬. আমার অস্থির লাগছে
নানা উৎস থেকে নানা ধরনের খবর আর পরামর্শে আপনাকে অস্থির, ভীত আর উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে। কাজেই খুব বেশি খবর জানার প্রতি মনোযোগী না হয়ে পরিবারেকে সময় দিন। ভালো কিছু করুন। দিনে এক বা দুবার নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে খবর পাওয়ার চেষ্টা করুন।