বাড়িতে বয়স্কদের দিকে খেয়াল রাখুন
বাড়িতে বয়স্ক রোগী থাকলে, তাদের খেয়াল রাখা সম্পর্কে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন ডা. রাশেদুল হাসান, সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন), গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বলছে, বয়স্কদের সংক্রমণের ঝুকি অন্যদের তুলনায় বেশি। কারণ বয়সের কারণে কিডনি, হার্ট, ফুসফুস, লিভারের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং অনেকেই বিভিন্ন ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হন। আবার এ সময় কোভিড-১৯ বয়স্কদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি ডেকে আনছে শুনে তাঁরা আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলছেন। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিবারের বয়স্ক মানুষটির পাশে দাঁড়ানো। বয়স্কদের বলুন, সংক্রমিত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। প্রথমত, বাড়িতে যিনি বয়োজ্যেষ্ঠ, তাঁকে অবশ্যই ঘরের মধ্যে থাকতে হবে। মোটামুটি সবাই এখন এটা জানেন। কিন্তু শুধু ঘরে থাকলেই কি তিনি নিরাপদ? তা তো আর নয়। তাই বাড়িতেও তাঁদের নিরাপদ ও সুস্থ রাখার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে সবাইকে।
১. বয়স্কদের প্রতিদিনের পুষ্টিকর ও সুষম খাবারের দিকে নজর রাখুন। খাবার যেন হাইজিন-সম্মত আর পরিচ্ছন্ন উপায়ে প্রস্তুত ও পরিবেশিত হয়। এ সময় কোন রকম ঝুঁকি নেয়া যাবে না। পরিমিত পানি পান করতে হবে।
২. অনেকেরই বাইরে হাঁটার অভ্যাস ছিল। এটা এখন আর করবেন না। বরং প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট খালি হাতে ব্যায়াম করুন বা ঘরের ভেতরে হাঁটুন।
৩. মানসিকভাবে চাঙা থাকুন-ভালো ভালো খবর দেখুন, ভালো বই পড়ুন, গান শুনুন। প্রার্থনায় সময় ব্যয় করতে পারেন। মহামারি সংক্রান্ত খারাপ খবর সারাদিন দেখবেন না (আপডেট থাকতে অল্প সময়ের জন্য সর্বোচ্চ দু-তিনবার দেখতে পারেন)। এতে মনের ওপর চাপ পড়বে। কারও কোন শখ থাকলে সেখানে সময়দিন বেশি করে।
৪. বাড়িতেই থাকুন। প্রয়োজনীয় কিছু লাগলে বাড়ির যে সদস্যকে কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়, তাঁকে অনুরোধ করুন। দূরে থাকা ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ফোনে/ভিডিও কলে যোগাযোগ রাখুন। বাড়িতেই প্রার্থনা করুন।
৫. বাইরে থেকে কেউ এলে তিনি জীবানুমুক্ত (হাত ধোয়া, গোসল করা, বাইরের জামাকাপড় বদলানো ইত্যাদি) না হওয়া পর্যন্ত বয়স্ক ব্যক্তির ঘরে যাবেন না। কোন অতিথির এ সময় তাঁর কাছে যাওয়ার দরকার নেই। বাইরের বা ঘরের কেউ বয়স্ক মানুষটির গায়ে বা হাতে স্পর্শ করবেন না।
৬. নিয়মিত হাত সাবান দিয়ে (কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড) পরিষ্কার করার কথা মনে করিয়ে দিন। তিনি যেন হাত না ধুয়ে নাকে-চোখে-মুখে হাত না দেন সেটাও বারবার বলুন। বারবার বাথরুমে যেতে কষ্ট হলে হাতের কাছে স্যানিটাইজার রেখে দিন।
৭. ডায়াবেটিসের রোগীরা নিয়ম-কানুন মেনে চলুন। নিয়মিত চেকআপে এখন যাওয়ার দরকার নেই। বাড়িতে সুগার মাপুন, আর দরকার হলে চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করুন।
৮. উচ্চ-রক্তচাপের রোগীরা যে ওষুধ খেয়ে এতোদিন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন, সেটাই চালিয়ে যান। অকারণে কোন ওষুধ বদলাতে যাবেন না।
৯. শ্বাসকষ্টের রোগীরা নিয়মিত ইনহেলার এবং অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করবেন। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
১০. কোন কারণে অসুস্থ বোধ করলে প্রথমে টেলিফোনে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসক পরামর্শ দিলে তবেই হাসপাতালে যাবেন।
১১. বয়স্কদের সাহস দিন। বলুন যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সিংহভাগই সামান্য চিকিৎসায় সেরে যায়।