বাড়িতে করোনা রোগী থাকলে যা করবেন
বাড়িতে করোনা রোগী থাকলে, সে সময়ে করনীয় সম্পর্কে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লিখেছেন বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। আপনাদের জন্য লেখাটি তুলে ধরা হলো :
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছোঁয়াচে। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে না এলে এতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। কাজেই আপনার পাশের বাড়িতে বা ফ্লাটে করোনা সংক্রমিত রোগী থাকলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাড়িতে কারও করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলে বা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন বলে সন্দেহ হলে পাঁচটি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এগুলা হলো আইসোলেশন বা আলাদা রাখা, নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, চিকিৎসা, প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ এবং পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা। এগুলো নিশ্চিত করতে নিম্নোক্ত উদ্যোগগুলো নিতে হবেঃ
1. বাসার একটি কক্ষকে রোগীর জন্য আলাদা করে দিতে হবে। কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত টয়লেট থাকলে ভালো।
2. যে কক্ষে সবচেয়ে বেশি জানালা ও আলো-বাতাসের চলাচল আছে, সেটাই বেছে নিন।
3. কক্ষটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করুন ও বাড়তি আসবাব, কার্পেট ইত্যাদি সরিয়ে ফেলুন। ঘরের দরজা অতি প্রয়োজন ছাড়া বন্ধই রাখুন। 'নেগেটিভ বাতাসের প্রবাহ' তৈরি করতে পারলে আরো ভালো। এ ক্ষেত্রে অ্যাকজস্ট ফ্যান বা স্ট্যান্ডফ্যান ভালো কাজে দেয়।
4. আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা না করা গেলে নিজেদের কক্ষেই জানালার কাছে পর্দা দিয়ে রোগীর জন্য আলাদা অস্থায়ী কক্ষ তৈরি করুন।
5. রোগীর বিছানার চারদিকে যথেষ্ট পরিমানে জায়গা থাকা উচিত। কমপক্ষে ৩ ফুট হলে ভালো।
6. বিছানার পাশে জিনিসপত্র, গ্লাস, ওষুধ রাখার জন্য ছোট একটা টেবিল রাখুন। প্রতিদিন কয়েকবার রোগী নিজেই জীবাণু নাশক তরল দিয়ে এগুলো পরিষ্কার করবেন।
7. রোগীর বাথরুম থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলুন। এই বাথরুম বাড়ির অন্য কারো ব্যবহার না করাই উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় রোগী যদি নিজের জামাকাপড় ও টয়লেট ধুয়ে নেন।
8. রোগীর ময়লা বা ব্যবহৃত আবর্জনা ফেলতে ঢাকনাসহ বিন বিছানার কাছেই রাখুন। একটা পলিথিনের ব্যাগে রোগী নিজেই তার ব্যবহৃত আবর্জনা ফেলবেন। প্রতিদিন ডাস্টবিনটা অন্য কেউ গ্লাভস পড়ে বাইরে নিয়ে যাবেন। এই ময়লা বাড়ির বাইরে কোথাও পুড়িয়ে ফেলতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
9. অসুস্থ ব্যক্তি ও সেবাদানকারী উভয়েই মাস্ক পড়বেন।
10. পুরো বাড়ি আবর্জনামুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখুন।
11. বাড়ির ভেতরে রোগীর থাকার জায়গা চিহ্নিত করে আলাদা করুন। চিহ্নিত জায়গার ভেতরে পরিচর্যাকারী ছাড়া আর কেউ যাবেন না।
12. রোগীর কক্ষ ও হাঁটাচলার পথ রোজ দু-একবার ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।
13. বাসার শিশুদের জন্য নির্ধারিত জায়গা ঠিক করুন। তাদের খেলার ব্যবস্থা ও সৃজনশীল কাজের ব্যবস্থা করে দিন। বয়স্ক ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দূরে রাখুন।
14. পরিবারের সদস্যদের মানসিক সুস্থতার কথা ভাবুন। রোগীর সঙ্গে মুঠোফোনে বা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিবারের সবাই যোগাযোগ রাখুন, তাকে মানসিক ভাবে চাঙা রাখার চেষ্টা করুন।