করোনাকালে বাইরে নিরাপদে থাকবেন যেভাবে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে যে সকল পন্থা বিশেষজ্ঞরা অবলম্বন করতে বলেন তার প্রধান হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অর্থাৎ অন্যদের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু বাইরে বের হলে নানা কারণেই হয়তো আপনার সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হয় না।
তাহলে নিজেকে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করবেন কীভাবে? সে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) দেশীয় বিশেষজ্ঞরা।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে হলে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া। কারণ সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া হলে তা হাতে থাকা জীবাণুকে মেরে ফেলে। একই কারণে সাবান-পানি না থাকলে অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড রাব বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলা হয়।
আরেকটি প্রধান বিষয় হলো- অন্যদের কাছ থেকে কমপক্ষে এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কেননা হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময় মানুষের নাক বা মুখ থেকে যে ড্রপলেটস বের হয়, তাতে ভাইরাস থাকতে পারে। আর আক্রান্ত ব্যক্তির খুব বেশি কাছে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে এই ড্রপলেটস কোভিড-১৯ এর ভাইরাস নিয়ে আপনার মধ্যে ঢুকতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনায় সতর্কতা হিসেবে ভিড় এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দিয়েছে। তাদের মতে, ভিড়ের মধ্যে গেলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এবং অন্যদের থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখাটাও সম্ভব হয় না।
হাঁচি-কাশি দেয়ার আদব কায়দা মেনে চলতেও বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে- না হলে কনুই বাঁকিয়ে তার মধ্যে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। পারলে হাঁচি ও কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, যাতে এর মাধ্যমে ড্রপলেটস অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পরে। পরে টিস্যুটি ফেলে দিয়ে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখতে পারলে নিজেকে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু উপায়ের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হচ্ছে-
মাস্ক যথাযথভাবে পরা : বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে। আর ভিড় বা জনসমাগমে গেলে মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাইরে গেলে বা অচেনা কারও সামনে গেলে একসঙ্গে দুটি মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই, তবে যে একটি মাস্ক পরা হবে তা যথাযথভাবে পরার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মাস্ক পরার সময় নাক-মুখ পুরোপুরি ঢেকে দিতে হবে। নাকের সঙ্গে মাস্কের মাঝখানে যাতে কোনো শূন্যস্থান না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাস্কের ভেতরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নাক বা থুতনি বাইরে বেরিয়ে থাকলে দুটি মাস্ক পরেও কোনো লাভ হবে না।
কোথাও গেলে গন্তব্য পৌঁছানো পর্যন্ত যতবার সম্ভব হাত ধোয়া : বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে শুরু করে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত যতবার সম্ভব সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন বিভিন্ন অফিস, দোকান, ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকে। এগুলো ব্যবহার করে বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার চেষ্টা করতে হবে। এ ছাড়া হাত না ধুয়ে কোনোভাবেই চোখ, মুখ ও নাকে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাবান দিয়ে গোসল করা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে বাইরে থেকে আসার পর পুরো শরীরে সাবান মেখে গোসল করে নিতে হবে। এর আগে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে যাওয়া যাবে না। পরিবারে বয়স্ক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেউ থাকলে তাদের কাছ থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
পরিহিত পোশাকটি ধুয়ে ফেলা : বাইরে বের হওয়ার পর বাসায় ফিরলে পরিহিত পোশাকটি সাবান এবং পানি দিয়ে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তার পর এটি ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিধেয় জুতা বাইরে রাখতে হবে এবং সেগুলোও সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চশমা-গ্লাভস-পিপিই'র ব্যবহার : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শাহনীলা ফেরদৌস বলেন, ‘যেহেতু চোখের মধ্য দিয়েও করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে, তাই এটি ঠেকাতে সতর্কতার অংশ হিসেবে জিরো পাওয়ারের গ্লাস বা চশমা পরা যেতে পারে।’ এতে করে চোখ সরাসরি ড্রপলেটস থেকে দূরে থাকবে বলে জানান তিনি।
তার মতে, যাদেরকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবহন, মরদেহ সৎকার কিংবা চিকিৎসা দেয়ার মতো কাজ করতে হয় না, তাদের পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পরার দরকার নেই।
তথ্যসূত্রেঃ https://bit.ly/2LQ6Mqj