করোনাভাইরাসঃ কিছু ভ্রান্ত ধারনা ও বাস্তবতা - ২
করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপি একটি মহামারী হিসেবে হাজির হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব আছে বাংলাদেশে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পরস্পরবিরোধী বিভ্রান্তিকর তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার কারনে এখানকার মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্য যেকোন দেশের চেয়ে বেশি। চলুন জেনে নিই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত কিছু প্রচলিত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও এর বিপরীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রকৃত বাস্তবতা।
করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচলিত কিছু গুজব ও প্রকৃত বাস্তবতা।
১. গুজবঃ ফাইভ জি মোবাইল নেটওয়ার্ক কোভিড-১৯ ছড়ায়।
বাস্তবতাঃ ভাইরাসগুলি রেডিও তরঙ্গ বা মোবাইল নেটওয়ার্কে ভ্রমণ করতে পারে না। কোভিড-১৯ এমন অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে যাদের ফাইভ জি মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। যখন সংক্রামিত ব্যক্তি কাশি, হাঁচি দেয় বা কথা বলে তখন নিঃশ্বাসের ফোঁটাগুলির মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে কোনো সুস্থ ব্যক্তি চোখ, মুখ বা নাক স্পর্শ করেও সংক্রামিত হতে পারে। করোনাভাইরাস যেকোন এলাকায় ছড়াতে পারে। যেসব এলাকার আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র, সেসব এলাকায়ও।
২. গুজবঃ সূর্যের তাপের সংস্পর্শে থাকলে কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে না।
বাস্তবতাঃ আবহাওয়া যত রৌদ্রপূর্ন বা তীব্র হোক না কেন আপনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারেন । গরম আবহাওয়াযুক্ত দেশগুলিও কোভিড-১৯ এর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। নিজেকে সংক্রমণ হতে রক্ষা করতে আপনার হাত বারবার এবং ভালভাবে পরিষ্কার করুন এবং আপনার চোখ, মুখ এবং নাক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. গুজবঃ নতুন করোনাভাইরাস ধরলে এটি আপনার কাছে এটি সারাজীবন থাকবে।
বাস্তবতাঃ আপনি করোনভাইরাস রোগ থেকে সুস্থ হতে পারেন (কোভিড-১৯)। নতুন করোনাভাইরাস ধরা মানে এই নয় যে আপনার কাছে এটি সারাজীবন থাকবে। আপনি যদি কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হোন বা আপনার শরীরে এর কোনো লক্ষন দেখা দেয় সেক্ষেত্রে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি লক্ষন গুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহন করছেন। আপনার যদি কাশি, জ্বর এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হয় তবে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা এবং যত্ন নিন, তবে সম্ভব হলে প্রথমে টেলিফোন করে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদেরকে কল করুন। বেশিরভাগ রোগীই পূর্ণ চিকিৎসার মাধ্যমে ভাল হয়ে যায়।
৪. গুজবঃ ১০ সেকেন্ড বা তারও বেশি সময় ধরে শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে রাখতে পারলে কোভিড-১৯ বা অন্যান্য ফুসফুসজনিত রোগ থেকে মুক্ত।
বাস্তবতাঃ ১০ সেকেন্ড বা তারও বেশি সময় ধরে শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে রাখতে সক্ষম হওয়া মানে এই নয় যে আপনি করোনাভাইরাস (কোভিড -১৯) রোগ থেকে মুক্ত বা অন্য কোনও ফুসফুসের রোগ থেকে মুক্ত। কোভিড-১৯ এর সর্বাধিক সাধারণ লক্ষণগুলি হলো শুকনো কাশি, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এবং জ্বর। কিছু লোকের মাঝে এই রোগের আরও মারাত্মক রূপগুলিও পরিলক্ষিত হতে পারে; যেমন নিউমোনিয়া। আপনি কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত কিনা এটা জানার বা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায়টি হলো পরীক্ষাগারে গিয়ে পরীক্ষা করা। আপনি এই শ্বাস প্রশ্বাস আটকে রাখার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করতে পারবেন না যে আপনি কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত নন, এমনকি এটি বিপজ্জনকও হতে পারে।
৫. গুজবঃ অ্যালকোহল পান করলে আপনি কোভিড -১৯ এর থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বাস্তবতাঃ না, ঘন ঘন বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন আপনার স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং আরো অনেক ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে।
নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের যথাযথ যত্নের প্রয়োজন। অসুস্থ মানুষদের প্রয়োজন সর্বোচ্চ সহায়তামূলক সেবা। কিছু সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পরীক্ষাধীন আছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ভেতর দিয়ে যাদের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার অংশীদারদের সাথে গবেষনা ও উন্নয়নের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক এরকম আরো তথ্য পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন ডাক্তারভাই অ্যাপে।