করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে করণীয়
সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে ‘২০১৯-এনসিওভি’নামক প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং
২০২০ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের ১০৩টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে রোগটি বিস্তার লাভ করেছে। সারা বিশ্বে রোগটির প্রভাবে এ পর্যন্ত ৩৬৪৬ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। চীনের উহানে বিস্তার লাভ করা ভাইরাসটির সাথে ‘এসএআরএস-সিওভি’ প্রজাতির প্রায় ৭০% জিনগত মিল পাওয়া গেছে। পৃথিবীতে ভাইরাসটির আভির্ভাবের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে রোগটির কোন অস্তিত্ব না মিললেও গতকাল ইতালি ফেরত এক বাংলাদেশী পরিবারের তিন জন সদস্যের মধ্যে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। রোগটি ততটা প্রাণঘাতী না হলেও মানুষের মধ্যে এর ব্যাপক ভীতি ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আসুন রোগটি যেভাবে ছড়ায় এবং এর প্রাদুর্ভাব থেকে বেঁচে থাকার কতিপয় উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আজকে জেনে নিই।
যেসব উপায়ে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে
সাধারণত এই করোনা ভাইরাস হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে কোন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যখন কোনো করোনা আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তি একজন সুস্থ ব্যক্তির সামনে হাঁচি বা কাশি দেয় তখন তার মুখ থেকে অসংখ্য সুক্ষ্মকণা বা ড্রপ্লেট বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং একজন সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও আক্রান্ত রোগী যদি হাঁচি কাশি দিয়ে পরবর্তিতে যেমন বিদ্যালয়ের বেঞ্চ, গাড়ির হাতল কিংবা বাসের সিট স্পর্শ করে তাহলেও এর দ্বারা তার অজান্তেই অন্য একজন সুস্থ মানুষ ভাইরাসটি দ্বারা সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। এমনকি এর মাধ্যমে খুব দ্রুত রোগটি অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি এই ভাইরাসটি যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তির পায়খানার সাথেও মিশে থাকে তাই যদি কোন আক্রান্ত ব্যক্তি কারও সাথে টয়লেট শেয়ার করে তাহলে টয়লেট ফ্লাসের মাধ্যমেও ভাইরাসটি অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের দেশে যে সিলিং বা টেবিল ফ্যান ব্যবহার করা হয় তার মাধ্যমেও আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে খুব সহজে অন্যদের দেহে রোগটি সহজে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক কিছু লক্ষণ
-
জ্বর
-
অবসাদ
-
শুষ্ক কাশি
-
শ্বাস কষ্ট
-
গলা ব্যাথা
-
তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপরোক্ত সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর নাও থাকতে পারে।
করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার কতিপয় উপায়
১। হাত ধোয়ার অভ্যাস গরে তোলা সহ নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন
যেহেতু হাতের মাধ্যমে রোগটি বেশী ছড়ায় তাই নিয়মিত হাত ধুয়ে নেয়া রোগটি থেকে বেঁচে থাকার সর্বোত্তম উপায়। এজন্য দিনের মধ্যে সুযোগ পেলেই নিজের দুই হাত সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে দিনে অন্তত ১৫-২০ বার হাত ধুয়ে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে এই রোগের সংক্রমণ অনেকটাই কমানো সম্ভব।
২। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন
হাঁচি কাশির পর খেয়াল রাখা উচিত যে আমরা যেন হাঁচি দেওয়ার সময় হাতের তালুতে মুখ চেপে ধরে না রাখি। মনে রাখতে হবে হাঁচি বা কাশি আটকাতে কখনোই নিজের হাত বা কনুই ব্যবহার করা উচিত না। হাঁচি দেওয়ার সময় অবশ্যই টিস্যু ব্যাবহার করুন এবং ব্যবহারের পর সাথে সাথে তা ডাস্টবিনে ফেলে দিন এবং নিজের হাত সাবান দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিন। অনুরুপভাবে হাঁচি দেওয়ার পর আমাদের হাত লিফটের হাতল, চেয়ার টেবিলের হাতল ইত্যাদিতেও মোছা উচিত নয় কারণ আমরা যদি করোনা আক্রান্ত হোন তাহলেএর মাধ্যমে আমাদের দ্বারা পরবর্তিতে এসব উপাদান ব্যবহারকারী অন্য যে কেউ এ রোগে সহজেই আক্রান্ত হতে পারে।
৩। মুখে মাস্ক পড়ে সামান্য সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে
করোনা ভাইরাসের তরল উৎস হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক বা সারজিক্যাল মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিত পারে। তবে এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকণা আটকানো সম্ভব নয়। এছাড়া, মাস্ক পড়লেও চোখ খোলাই থাকে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ব্যক্তির দেহে চোখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে অধিক কার্যকরী এন ৯৫ রেসপাইরেটর ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর মূল্য ও প্রাপ্যতা বিচারে এর ব্যবহার তেমন উৎসাহ করা হচ্ছেনা।
৪। যতটুকু সম্ভব জন সমাগম এড়িয়ে চলুন
আক্রান্ত এলাকা থেকে ফিরে থাকলে ১৪ দিন নিজেকে জনসমাগম থেকে 'বিচ্ছিন্ন' রাখুন। তার মানে হচ্ছে বিশেষ করে মহামারির এই সময় প্রয়জনে কর্মস্থল থেকে শুরু করে অন্যান্য জনসমাবেশস্থল এড়িয়ে হবে।
৫। পায়খানা শেষে কমোডের ঢাকনা বন্ধ করে তারপর ফ্লাস করুন
আমরা যখন আমাদের পায়খানার কমোডে টয়লেট সারার পর ফ্লাস করি তখন বিপুল পরিমাণে এরোসল তৈরি হয় যা বাতাসে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরপাক খেতে থাকে। সচরাচর আমাদের অভ্যাস হচ্ছে বাথরুমে গিয়ে প্রথমেই আমরা একটা ফ্লাস করি। যদি কোন কারণে আমার আগে ঐ বাথরুমে করোনা আক্রান্ত কোন রোগী মলত্যাগ করে গিয়ে থাকে আর আমি এরুপ ফ্লাস করি তাহলে কিন্তু আমার নাক মুখ দিয়েএরোসলের মাধ্যমে ভাইরাস আমার দেহে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। তাই আমরা যেন টয়লেট ফ্লাস করার আগে অবশ্যই কমোড বন্ধ আছে কিনা তা খেয়াল রেখে তারপর ফ্লাস করি।
৬। লক্ষ্মণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিন
আপনার যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, তাহলে দেরি না করে সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সম্প্রতি আপনি যেসব এলাকা বা দেশ ভ্রমণ করেছেন তা তাকে খুলে বলুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের ঘরের মধ্যেই অবস্থান করুন।
যেহেতু এখনও পর্যন্ত এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোন প্রকার কার্যকরী প্রতিষেধক টিকা আবিস্কার হয়নি তাই বর্তমানে প্রতিরোধই হচ্ছে একমাত্র পদক্ষেপ রোগটি থেকে বেঁচে থাকার। এজন্য আসুন আমরা সবাই উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে সর্বদা খেয়াল রেখে আমাদের জীবন যাপন করি তাহলে আমরা সহজেই এরোগ থেকে অনেকটা নিজেদের দূরে রাখতে পারব।
স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক এরকম আরও তথ্য পেতে নিয়মিত চোখ রাখুন ডাক্তারভাই অ্যাপে।