সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকঃ যেসব বিষয়ে আমাদের সাবধান হওয়া দরকার
বর্তমান বিশ্বে হার্ট অ্যাটাকের রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে যার মধ্যে ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ বা নীরবে ঘটে যাওয়া হার্ট অ্যাটাক অন্যতম। সমস্যাটি পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশি হয়ে থাকে। আসুন সমস্যাটি মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে জেনে নিই
বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে অনেকেই ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ অর্থাৎ নীরবে ঘটে যাওয়া হার্ট অ্যাটাক এর শিকার হয়ে থাকেন।‘দ্য ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউট’ জানিয়েছে, বিশ্বে প্রতি বছর মোট হার্ট অ্যাটাকের এক-তৃতীয়াংশের সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক। রোগটির উপসর্গ দীর্ঘ সময় ধরে অর্থাৎ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা কোনো প্রকার ব্যথাই অনুভব করেন না কিন্তু ভিতরে ভিতরে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়। চলুন এ ধরণের সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের করণীয় বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিই।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক কী?
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক শব্দটি থেকেই রোগটি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। যদি সহজভাবে বলি তাহলে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে নীরবে ঘটে যাওয়া হার্ট অ্যাটাক,যার তেমন কোনও লক্ষণ আগে থেকে তেমন প্রকাশ পায়না। এরপরও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এর কতিপয় লক্ষণ বের করেছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমস্যাসমূহ হচ্ছে – শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যাথা ও অতিরিক্ত ঘাম অন্যতম। তবে অনেকক্ষেত্রে এসব সমস্যা নাও দেখা দিতে পারে কিংবা দেখা গেলেও কোন একটা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের বেশ কিছু উপসর্গ দেখা যায়। সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক এর বেলায় অন্য কোনও সমস্যা থেকেই এই লক্ষণ দেখা দিয়েছে মনে করে রোগীরা মনে করে তার হার্টে কোন সমস্যা নেই এজন্য বিপত্তিটা ঘটে থাকে। তাই বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে লক্ষণগুলোর কোন একটা দেখা দেয়া মাত্রই রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক কাদের বেশী হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকেই ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’-এর শিকার হলেও অনেক সময় রোগী কোনো ব্যথাই অনুভব করেন না । এই ধরনের অ্যাটাকে উপসর্গ দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে কিন্তু ভিতরে ভিতরে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়। জার্মান স্বাস্থ্যভিত্তিক সাইট কার্ডিও-সিকিউর এর তথ্য অনুযায়ী সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ক্লান্তিভাব, অস্বস্তি, দুর্বলতা এবং মাথা ঘোরা। তবে এগুলো হওয়া মানেই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক নয়। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে দেখা গেছে যে পুরুষদের তুলনায় রোগটি মহিলাদের বেশী হয়ে থাকে। এতে আক্রান্ত রোগীরা অনেক সময় তেমন কিছু বুঝতে পারে না, আর পারলেও খুব অল্প বা সাধারণ ব্যথা হিসেবে মনে করে অনেক সময় তারা তেমন পাত্তা দিতে চায় না। বিশেষকরে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশী হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের কারণে তাদের শরীরে নানা ধরনের কমপ্লিকেশন তৈরি হয়। এজন্য তারা মনে করেন এগুলো তাদের সাধারণ সমস্যা। অনেক সময় ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হওয়ার কারণে তাদের শরীরের বোধশক্তি এতটাই কমে যায় যে হার্ট অ্যাটাকের সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হলেও সেটা তারা সহজে বুঝতে পারে না। রোগীদের অনেক সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যাও খুব প্রকট হয়ে থাকে। রোগী খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং সামান্য শারীরিক পরিশ্রমেই হাঁপাতে থাকে। এছাড়া রোগীর হাত,ঘাড়,দুই কাঁধের মাঝেও প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক নিয়ন্ত্রণে করণীয়
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর আরেকটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে যা মারাত্মক হতে পারে। এমনকি দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাকের জন্য হার্ট অকার্যকর হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। সাধারণ হার্ট অ্যাটাক আর সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক নিয়ন্ত্রণে যা করা উচিত তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক থেকে দূরে থাকতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুব জরুরী। ডায়াবেটিসের কম্পলিকেশন,যার শরীরে তৈরি হবে তাকে সব সময় সাবধানে থাকতে হবে।
- বুকে অল্প ব্যথা দেখা দিলে কিংবা অস্থিরতা বোধ করলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আর অস্থিরতা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার জন্য হয় তাহলে রোগীকে গ্লুকোজ বা চিনি কিংবা অন্য কোনো খাবার দিলে সে দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক হলে সেক্ষেত্রে সেটা হবে না। এছাড়া ঘরে গ্লুকোমিটার থাকলেও পরীক্ষা করে সমস্যাটি সহজেই বোঝা যেতে পারে।
- নিয়মিত কোনো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা ডায়াবেটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে।
বর্তমান বিশ্বে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এর মধ্যে বয়স্ক ও ডায়াবেটিস রোগীদের সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বেশী দেখা যায়। উপরোল্লিখিত অস্বস্তিগুলোর যেকোন একটি দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত শারিরীক পরিশ্রম করুন। আর বিশেষ করে ডান হাতে ব্যথা হলে অবশ্যই অবহেলা করবেন না। স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়া-দাওয়া ও জীবনযাপন করুন। আর হার্ট অ্যাটাক একবার হয়ে গেলে যত দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া যায় ততই মঙ্গল।