শরীরের অতি দরকারি ক্যালসিয়ামের ১০টি প্রাকৃতিক উৎস
একজন মানুষের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়ামের চাহিদা সারাজীবনের। সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার না খেলে শরীরে নানা অসুখ বিসুখ দানা বাঁধে। আমাদের চারপাশেই রয়েছে এর সহজ উৎস। চলুন এর সহজ কিছু প্রাকৃতিক উৎস সম্পর্কে জেনে নিই।
ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা একজন মানুষের গর্ভ থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দরকারি। আমাদের চারপাশে থাকা বিভিন্ন শাকসবজি, ফলমুল, মাছ ও মাংসে ক্যালসিয়াম থাকে। সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার না খেলে বিভিন্ন অসুখের শিকার হতে হয়। চলুন জেনে নিই শরীরে ক্যালসিয়ামের বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস সম্পর্কে।
আমাদের দেহে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন কেন হয়?
- ফসফরাসের সহযোগিতা নিয়ে ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের কাঠামো গঠনে, দাঁত গঠনে ও হাঁড় মজবুত করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন
- রক্ত জমাট বাঁধতে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
- এছাড়া প্রত্যেক জীব কোষ গঠনের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।
- অতি জরুরী হৃৎপিন্ডের কর্মকাণ্ড যেমন সংকোচন, প্রসারণ ও স্পন্দন ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
ক্যালসিয়ামের অভাবে কী কী রোগ হতে পারে?
ক্যালসিয়ামের অভাব বা স্বল্পতা আমাদের শরীরে নানা প্রকার অসুখ সহ নানান জটিলতা তৈরি করতে পারে। যেমন-
- রিকেট রোগঃ দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে রিকেট রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে শরীরের হাড় দুর্বল ও নরম হয়ে যায়। পাশাপাশি যদি শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয় এবং তা অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে হাড়ের অনেক ক্ষতি হতে পারে।
- হাড় ফ্র্যাকচারঃ দেহে ক্যালসিয়ামের দীর্ঘস্থায়ী অভাব হলে হাড় ফ্র্যাকচার হয়ে যেতে পারে। মহিলাদের মনোপোজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই হাড় ফ্র্যাকচার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এজন্য বয়ঃসন্ধিকালে তাদের অবশ্যই ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
- হাড় ক্ষয়ঃ দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে অস্টিয়োপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের রোগ হবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
- পেশির টিট্যানি রোগঃ ক্যালসিয়ামের অভাবে দেহে হাইপোক্যালসিয়মিয়া হয়ে পেশির টিট্যানি রোগ হতে পারে।
ক্যালসিয়ামের কিছু প্রাকৃতিক উৎস
১। দুধ
ক্যালসিয়ামের অন্যতম উৎস হচ্ছে দুধ। প্রত্যেক মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের দৈনিক কমপক্ষে এক গ্লাস দুধ পান করা দরকার। দুধের সাথে কিছু প্রোটিন পাউডার মিশিয়েও পান করা যেতে পারে।
২। কাঠবাদাম
প্রতি কাপ কাঠবাদাম থেকে ৪৭৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রতিদিন এই পরিমাণ কাঠবাদাম খাওয়া উচিত নয় কারণ এক কাপ বাদাম থেকে প্রায় ১০০০ ক্যালোরি পাওয়া যায়। তাই মাঝে মধ্যে কিছু পরিমাণ কাঠবাদাম খাওয়া যেতেই পারে।
৩। টকদই
টকদই ক্যালসিয়ামের আরেকটি অনন্য উৎস। যারা দুধ খেতে পারেন না বা দুধে খেলে অ্যালার্জির সমস্যা হয় তারা টকদই খেয়ে দেহের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। টকদই খেয়ে দুধের চাইতেও বেশী পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব।
৪। পনির
চিজ বা পনিরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। পারমেজান নামক চিজে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। তাই যারা পনির খেতে পছন্দ করেন তাঁরা দুধের পরিবর্তে পারমেজান চিজ খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
৫। বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাক সবজি
দুগ্ধ জাতীয় খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাক সবজিতেও প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি যেমন পালং শাক, মটর বীচি, ব্রকলি, আলু, ফুলকপি, শালগম, বরবটি, শিম, কচুর পাতা ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের খুব ভাল উৎস।
৬। তিল
প্রতি টেবিল চামচ তিল থেকে ৮৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব। এছাড়া এই তিল রক্ত চাপ কমানো, শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করা সহ ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে থাকে।
৭। চিংড়ি মাছ
চিংড়ি মাছ যেমন মজাদার তেমনি মাছটি ক্যালসিয়ামেরও দারুণ উৎস। তবে পরিপূর্ণ ক্যালসিয়াম পেটে এটি অল্প আঁচে রান্না করা উচিত কারণ খুব বেশি রান্না করলে এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।
৮। কমলা
একটি মাঝারি আকারের কমলা হতে ৬৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব। চাইলেই আপনি ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফলটি আপনার প্রতিদিনের নাস্তায় রাখতে পারেন। এছাড়া প্রতিদিনের নাস্তায় এক গ্লাস কমলার রস পান করা যেতে পারে।
৯। সামুদ্রিক মাছ
বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন ক্যালসিয়ামের দারুণ উৎস। তাই খাদ্য তালিকায় নিয়মিত নানা প্রকার সামুদ্রিক মাছ রাখা যেতে পারে।
১০। বিভিন্ন ঔষধি গাছ ও মসলা
নানা প্রকার ঔষধি গাছ যেমন তুলসী পাতা, পুদিনা পাতা এবং মসলা জাতীয় খাবার যেমন দারুচিনি রসুন ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এগুলো নিয়মিত খেলে তা আপনার শরীরের বিভিন্ন হাড় মজবুত করবে।
ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া প্রয়োজন। তবে গর্ভাবস্থায় এবং যেসব মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তাঁদের বেলায় এটি আরো বেশি প্রয়োজন। শরীরের হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী করতে ক্যালসিয়ামের কোনো বিকল্প নেই। বয়স ভেদে শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা ভিন্ন হয়। তাই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি আছে কিনা জেনে সঠিক পরিমাণে খাদ্য তালিকা নির্ণয় করুন। অযথা পয়সা খরচ করে দোকান হতে ক্যালসিয়ামের বড়ি কিনে না খেয়ে আশপাশে থাকা প্রাকৃতিক উৎস থেকেই এর ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করুন।