কম্পিউটারের সামনে এক নাগাড়ে বসে কাজ করার ক্ষতিসমূহ ও করণীয়
বর্তমান যুগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন কম্পিউটার যন্ত্র ছাড়া কল্পনা করাই যায়না। যন্ত্রটির সামনে এক নাগাড়ে বসে কাজ করলে কাঁধ, কবজি,পেশী ও গাঁটের ব্যথাসহ চোখের ওপর অনেক চাপ পড়ে। আসুন জেনে নিইসমস্যাগুলো সামলানো ও এড়ানোর উপায় সম্পর্কে।
কম্পিউটারের যুগের বর্তমান সময়ে চাকরিতে ও অনেক ধরণের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনে এই গুরুত্বপুর্ণ যন্ত্রটি ছাড়া একেবারেই কল্পনা করাই যায়না। কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে কাজ করাটা বিশ্বের সেরা জিনিষ বলে মনে করা হলেও বাস্তবে শরীরের জন্য কিন্তু এটা অনেক ক্ষতিকারক। ডেস্কটপের সামনে বসে একটানা অনেকক্ষণ কাজ করলে কাঁধ ও হাতের কবজিতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া পেশী ও গাঁটের ব্যথা সহ চোখের ওপর চাপ পড়ে। অনেক শিশুরা প্রায়ই কম্পিউটারের গেমস খেলে। এর ফলে তাদের নির্দিষ্ট শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা হতে পারে। চলুন জেনে নিই একইসাথে সমস্যাগুলো সামলানো সহ এগুলো এড়িয়ে যাবার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
১। অধিক সময় বসে থাকার বিভিন্ন অসুবিধা
কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে একটানা তাকিয়ে বসে থাকার কারণে পিঠের ওপর ক্রমাগত চাপ পড়ে ও দেহে রক্ত চলাচল ব্যহত হয়। এছাড়া দীর্ঘসময় কম নড়াচড়ার কারণে কম পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয় এবং আমাদের অজান্তেই ওজন বৃদ্ধিসহ হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে।
অসুবিধাসমূহ দুরীকরণে করণীয়
কম্পিউটারে যাদের একটানা কাজ করার প্রয়োজন হয় উপরোক্ত সমস্যাসমূহ দূর করতে তাঁরা প্রতি এক ঘণ্টা পরপর ৫ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিতে পারেন। এই বিরতির সময়ে কিছুটা হাঁটাহাটি ও স্ট্রেচ ব্যায়াম করে নিতে পারেন। এছাড়া সারাদিনের কাজের মধ্যে একটানা না বসে কিছু সময়ে সোজা দাঁড়িয়েও কাজ করা যেতে পারে।
২। খারাপ দেহভঙ্গিমার কারণে শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা
এমনিতে দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকাটা শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তারপরে যদি সেই বসাটা সঠিকভাবে না হয় তাহলে সেটি হয় আরও মারাত্মক। কম্পিউটারের সামনে সঠিকভাবে সোজা হয়ে না বসে কাজ করবার পরিণতি হল, পিঠে ও কবজি সহ কাঁধ ও ঘাড়ে ব্যথার ভয়াবহ শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কারণে অনেকসময় প্রচণ্ড মাথাব্যথাও হয়। এছাড়া টাইপ করার সময় আঙুলের উপরেও অত্যধিক চাপ পড়ার কারণে ব্যাথা সহ পেশী আঁটসাঁট বা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে যা দৈনন্দিন কাজকর্মকে প্রভাবিত করতে পারে।
অসুবিধাসমূহ দুরীকরণে করণীয়
উপরোক্ত সমস্যাসমূহ দূর করতে স্ট্রেচ ব্যায়াম করা যেতে পারে। এছাড়া ডেক্সটপ মনিটর এমনভাবে রাখতে হবে যাতে বসতে স্বাচ্ছন্দ অনুভব হয়, অর্থাৎ, কম্পিউটারের মনিটরের উপরের অংশ চোখের সমান-সমান রাখতে হবে । ডিসপ্লে মুখের থেকে সামান্য কোণাকুণি পেছনের দিকে একহাত দূরত্বে রাখতে হবে। পিঠের যথাযথ ভার নিতে পারে এমন চেয়ারে সঠিকভাবে পেছনে হেলান দিয়ে বসে কাজ করতে হবে। কবজিকে রক্ষা করার জন্য মাউস প্যাড ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া হাত ও আঙুলকে নিয়মিত বিশ্রাম দিতে হবে। ব্যথা হলে তা উপসমের জন্য ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করা যেতে পারে।
৩। একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের ক্ষতিসমূহ
একদৃষ্টিতে দীর্ঘক্ষন ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে। এরফলে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া সহ চোখের অস্বস্তি, চোখ জ্বালা,মাথাযন্ত্রনা হতে পারে। কম্পিউটারে অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলে চোখ জ্বলে। মনিটরের সামনে বসে কাজ করতে বেশ অসুবিধা হয়। অনেকে ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হন। দৃষ্টি আচ্ছন্ন ও ঘোলা হয়ে আসে, এক বস্তুকে দুটি দেখায় (ডাবল ভিশন), চোখ শুকিয়ে যায়, লাল হয়ে ওঠে, চুলকায়। কম্পিউটারের পর্দায় লেখাগুলো পিক্সেলে সজ্জিত, এর কিনারগুলো ঝাপসা। তাই পড়ার সময় চোখে চাপও পড়ে।
অসুবিধাসমূহ দুরীকরণে করণীয়
উপরোক্ত সমস্যাসমূহ দূর করতে সঠিক আকারের উন্নত মানের ডিসপ্লে ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া কম্পিউটার ও চোখের মধ্যে যথাযথ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এক পলকে দীর্ঘক্ষণ না তাকিয়ে থেকে বারবার চোখের পলক ফেলাসহ কাজ করতে করতে মিনিট খানেক বা কয়েক সেকেন্ড অন্যদিকে তাকানো যেতে পারে। তাছাড়া অফিস বা বাসার কম্পিউটারের কক্ষে যথাযথ আলোর ব্যবস্থা রাখাসহ কম্পিউটার স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এজন্য ‘২০-২০-২০’ নিয়মটি মেনে চলুন। এটি হলো, কম্পিউটারে কাজ করার সময় ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের বিশ্রাম নিন ও ২০ ফুট দূরের দৃশ্যে চোখ রাখুন।
৪। দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতার বৃদ্ধি
কম্পিউটারে অনেক কম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ করা গেলেও কাজ করতে করতে সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ কমই ঘটে। তাই এটি শারীরিক সমস্যা যেমন পেশীর টান, মাথাযন্ত্রনা, পিঠে ব্যথা, ইনসোমনিয়া, নাড়ির গতি বৃদ্ধি সহ মানসিক সমস্যারও সৃষ্টি করে যথা বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তা।
অসুবিধাসমূহ দুরীকরণে করণীয়
উপরোক্ত সমস্যাসমূহ দূর করতে সতর্ক ভাবে নিঃশ্বাস নেওয়া সহ ও হাইড্রেটেড থাকার জন্য প্রচুর পানি পান করা উচিত। মানসিক চাপ কমানোর জন্য মাঝে মধ্যে কিছুটা হাঁটা কিংবা সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করা যেতে পারে। একটানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে কাজ না করে সহকর্মীদের সাথে ঘুরে কিছুক্ষনের জন্য কথা বলা যেতে পারে। কম্পিউটারে একটানা কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্য কিছু কার্যকলাপের পরিকল্পনা করাও যেতে পারে। তাছাড়া কাজের আগে ও পরে কিছুটা শরীরচর্চা করা যেতে পারে।
বিশ্বের প্রায় সাত কোটি কর্মী কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমের ঝুঁকিতে রয়েছেন আর সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছেই। দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা কম্পিউটার ব্যবহার করলেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাঁরা আরও বেশি সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করেন, তাঁদের টানা মাথাব্যথা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথাও হয়। তাই একটানা কম্পিউটারের দিকে না তাকিয়ে কাজ করে মাঝে মধ্যে ব্রেক নেওয়া জরুরী। নিয়ম মানুন ও সুস্থ থাকুন।