বর্ষাকালে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাড়তি সতর্কতা
বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাতে গরমের হাত থেকে রেহাই পেলেও এসময় পরিবেশে প্রচুর আর্দ্রতার কারণে ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশির প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। এসবের হাত থেকে রক্ষা পেতে ডায়াবেটিস রোগীদের যেসব বাড়তি সতর্কতা নেওয়া জরুরী সে বিষয়ে আসুন বিস্তারিত জেনে নিই।
বর্ষাকালের প্রথমদিকে, আবহাওয়া গরম ও আর্দ্র থাকে। এসময় প্রচুর বৃষ্টিপাতে গরমের হাত থেকে রেহাই পেলেও হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন শরীরের জন্য ভালো নয়। এসময়ে পরিবেশে যথেষ্ট আর্দ্রতার থাকায় রোগ সংক্রমণকারী জীবাণুর পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এজন্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা এই সময়ে নিঃশ্বাসের সমস্যায় ভুগতে পারে। এছাড়া শরীর ভিজে গেলে সারা শরীরে চুলকানি ও অস্বস্তিও হতে পারে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের হাড় এমনিতেই দুর্বল হয়ে যায় তারপর যদি পায়ে ফাঙ্গাল সংক্রমণ হয় তাহলে তা থেকে গ্যাংগ্রিন হতে পারে। গ্যাংগ্রিন হলে পা কেটে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই বর্ষাকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশেষ সতর্ক থাকা উচিৎ। ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থ থাকা ও প্রতিরক্ষার জন্য কিছু আবশ্যিক নিয়ম কানুন মেনে চলা দরকার। নিম্নে এমন কয়েকটি পরামর্শ আলোচনা করা হল।
১। খাবার এবং পানীয় বিষয়ে সতর্কতা
- বর্ষাকালে বিভিন্ন শাকসবজি খুব সহজেই ময়লা পানি দ্বারা বা বন্যার পানির সংস্পর্শে এসে জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে। তাই কিনে আনা বা ক্ষেত থেকে তুলে আনার পর সেগুলোকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া দরকার।
- এসময় যতটা সম্ভব টাটকা ও বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়া উচিত। রাস্তার বা দোকানে তৈরি খাবার খাওয়া উচিত না কারণ এগুলো বিভিন্ন ধরনের রোগের জীবাণু যেমন কলেরা বা ডায়ারিয়ার জীবাণু দ্বারা মিশ্রিত থাকতে পারে। এছাড়াও এসব খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসময় ডায়াবেটিস রোগীরা বাড়ির বাইরে গেলে ঘরে তৈরি সামান্য স্ন্যাক্স সঙ্গে রাখতে পারেন।
- ডাবের পানি, লেবু পানি, স্যুপ, রসুন মিশ্রিত চায়ের মতন গরম খাবার ও পানীয় খাওয়া যেতে পারে। এসব খাবার সহজেই তৈরি করা যায় ও দেহে সহজেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
২। পরিধানের জামাকাপড় এবং জুতো বিষয়ে সতর্কতা
- ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন বিষয়ে খুবই খেয়াল করা উচিত। এজন্য তাদের পায়ের জুতো সবসময় মাপের থেকে এক মাপ বেশী হওয়া উচিৎ যা রোগীকে জুতোর থেকে হওয়া ক্ষতের সম্ভবনা কমিয়ে দেয়। কোন কারণে জুতো যদি ভিজে যায় তাহলে অতি দ্রুত তা খুলে শুকোনো জুতা পরিধান করা উচিত।
- বর্ষাকালে ডায়াবেটিস রোগীদের প্রচলিত প্লাস্টিকের শক্ত জুতা না পড়ে ধোয়া যায় এবং চলনসই এমন ঢাকা জুতো পড়ুা উচিত।
- কোন কারণে বাইরে বেড়াতে যেতে হলে বেরোবার আগে অবশ্যই সঙ্গে অতিরিক্ত একজোড়া কাপড় ও জুতো রাখুন। সম্ভব হলে একজোড়া করে কাপড় ও জুতো অফিসে রেখে দেওয়া যেতে পারে। আর কাপড় ও জুতা ভিজে গেলে ঠাণ্ডা লাগা কিংবা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব বদলে ফেলতে হবে।
৩। বর্ষাকালে পায়ের যত্ন ও পরিচর্যা
- বর্ষাকালে, ডায়াবেটিসের রোগীদের পায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। এজন্য পা সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখা উচিৎ। পা শুকনো রাখতে প্রয়োজনে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল কিংবা ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নিয়মিত মোজা বদলাতে হবে। মোজা বা জুতা ভিজে গেলে তক্ষুনি বদলাতে হবে। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভন শুকনো কাপড় দিয়ে পা ও পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে মুছে শুকিয়ে নিতে হবে।
- প্রতিদিন পা পরীক্ষা করে নিতে হবে যাতে আঙুলের মাঝখানে যাতে কোন রকম ক্ষত, আঘাত বা সংক্রমণ না থাকে। আর যদি এরুপ কোন কিছু চোখে পড়ে তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তার দেখাতে হবে।
- শুতে যাবার আগেও পায়ের কিছু পরিচর্যার রুটিন মেনে চলা যেতে পারে। এজন্য এক গামলা গরম পানিতে অল্প পরিমাণ অ্যান্টিফাঙ্গাল কিংবা অ্যান্টিসেপ্টিক মিশিয়ে তাতে কিছুক্ষণ পা ভিজিয়ে রাখার পর নরম কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর পায়ে মেডিকেটেড অথবা ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগানো যেতে পারে।
৪। অন্যান্য কিছু পরামর্শ
- বর্ষাকালে আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করা যেমন সহজসরল স্ট্রেচ, সিট-আপ, হাঁটা ইত্যাদি করা যেতে পারে।
- অবশ্যই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ভুলা থাকা চলবে না। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সংক্রমণ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক জটিলতার সৃষ্টি হবে।
- অবশ্যই নিয়মিত রক্তের সুগার মেপে নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ খেয়ে যেতে হবে।
ডায়াবেটিস বিশ্বজুড়েই এখন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে ৷ ডায়াবেটিস নির্দিষ্ট মাত্রার বেশী হলে তা শরীরের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণে রাখাই সর্বোত্তম পস্থা। ত্বকের সমস্যা হলে নিজে নিজে কোন ওষুধ খাওয়া যাবেনা। এজন্য অবশ্যই আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে ৷ অতিরিক্ত কোনও ওষুধ খাওয়া যাবেনা ৷ আর যারা ভালো আছেন তারাও যদি এভাবে নিয়ম মেনে চলে, তাহলে তাঁরাও আরও নিরাপদ থাকতে পারবে।